প্রশ্নফাঁস চক্রে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, অবশেষে গ্রেপ্তার

14

নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান করে বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষাকক্ষে পাঠাতো একটি চক্র। সেই চক্রের অন্যতম হোতা একজন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। শেষ পর্যন্ত প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরীন রুপাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি জানায়, মাহবুবা নাসরীন রুপা ও হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের (সিজিএ) বরখাস্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আজাদের যোগসাজশে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে আসছিল। সবশেষ শুক্রবার ২১ জানুয়ারি বিকেলে অনুষ্ঠিত প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে চক্রটি।

এ ঘটনায় জড়িত চক্রের সাত সদস্য ও তিন পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি গুলশান বিভাগ। গ্রেপ্তাররা হলেন- নোমান সিদ্দিকী, মাহমুদুল হাসান আজাদ, আল আমিন রনি, নাহিদ হাসান, শহীদ উল্লাহ, তানজির আহমেদ, মাহবুবা নাসরীন রুপা, রাজু আহমেদ, হাসিবুল হাসান ও রাকিবুল হাসান।

এসময় তাদের কাছ থেকে ইয়ার ডিভাইস ছয়টি, মাস্টার কার্ড মোবাইল সিম হোল্ডার ছয়টি, ব্যাংকের চেক পাঁচটি, নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প সাতটি, স্মার্ট ফোন ১০টি, বাটন মোবাইল ছয়টি, প্রবেশপত্র ১৮টি ও ফাঁস হওয়া তিনসেট প্রশ্নপত্র জব্দ করা হয়।

শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা মহা হিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীনে ৫৫০টি অডিটর পদে নিয়োগের জন্য শুক্রবার ২১ জানুয়ারি দুপুর ৩টা থেকে বিকেল সোয়া ৪ টা পর্যন্ত ৭০ নাম্বারের এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এনএসআই ও ডিবি গুলশান বিভাগ গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে জানতে পারে একটি চক্র এই নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত। পরে রাজধানীর মিরপুর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও কাকরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, চক্রটির একটি গ্রুপ পরীক্ষার আগে থেকে পরীক্ষার্থী সংগ্রহ ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়। টার্গেট করা পরীক্ষার্থী প্রতি ১৪ থেকে ১৬ লাখ টাকার লিখিত চুক্তি হয় তাদের। এমসিকিউ পরীক্ষার আগে কিছু টাকা আদায় করা হয় এবং বাকি টাকা নিয়োগের পরে দেওয়ার চুক্তি হয়।

আরেকটি গ্রুপ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, ইয়ার ডিভাইস, মাস্টার কার্ড মোবাইল সিম হোল্ডার ও বাটন মোবাইল টার্গেট করা পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করে। পরীক্ষা শুরুর ২/৩ মিনিটের মধ্যেই প্রশ্নফাঁস করে বাইরে পাঠানো হয় ডিভাইসের মাধ্যমে। বাইরে থেকে প্রশ্নপত্রের সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমে ফের পাঠানো হয় পরীক্ষার্থীদের কাছে।

গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান আজাদ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ২০১৯ সালে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। নাহিদ হাসান, আল আমিন সিদ্দিকী আগেও প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ২০১৩, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

ডিবি জানায়, এর আগে বিভিন্ন ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জ্বালানি অধিদফতর, সমবায় অধিদপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তর, সাধারণ বীমা করপোরেশন সহ অন্যান্য সংস্থার প্রশ্নপ ফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

শুক্রবারের নিয়োগ পরীক্ষায় ১৮ শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়েছিল। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত তদন্তে নয় শিক্ষার্থীদের ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের উত্তর সরবরাহের তথ্য মিলেছে। এই চক্রের সঙ্গে আরও যারা জড়িত রয়েছে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।