জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘এখনও দেখতে পাচ্ছি সচিবালয়, ডিসি, এসপি, ওসি, ইউএনও, এসআইসহ রাষ্ট্রের সবযন্ত্রে ১৭/১৮ বছরের আওয়ামী দোসররা দায়িত্ব পালন করছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের বেশিরভাগ জায়গায় সেই ফ্যসিবাদের দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে। প্রশাসন থেকে সেই ফ্যাসিবাদ দোসরদের পরিচ্ছন্ন করে ঝেটিয়ে বিদায় করুন।’
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে দীর্ঘ ১৮ বছর পর ভোলায় জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মী সম্মেলনে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয় সভাস্থল। সমাবেশে গোলাম পরওয়ার সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়ে ঐক্যবদ্ধ ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গঠনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সংস্কার ও নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন করুন। যৌক্তিক সময় যেটুকু লাগবে জামায়াতে ইসলামী সেটুকু সময় দেবে। তবে এ নির্বাচনের আগে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ জনগণ দেখতে চায়।’
জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে বিরোধ বিশৃঙ্খলার ভূমিকায় না গিয়ে, ফ্যাসিবাদী কোন ভূমিকায় না গিয়ে আগস্টের মূল চেতনাকে ধারণ করে আমরা একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গঠনে এগিয়ে যাই।’
সংস্কার প্রসঙ্গে গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের কাছে আবেদন জানাই নির্বাচন আপনি দেবেন। আমরাও সংস্কার চাই। কিন্তু রাষ্ট্রের সমস্ত অর্গান, সকল বিভাগ করাপ্ট হয়েছে। এতো বড় সব বিভাগের কাজ অল্প সময়ে সম্ভব না। এটা জনগণের নির্বাচিত সরকার করবে। তবে একটা ফ্রি-ফেয়ার ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ৬/৭ টা বিভাগের সংস্কার না করে কোন নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। বাংলাদেশের মানুষ চায় একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচনের জন্য নূন্যতম সংস্কার প্রয়োজন সেই সংস্কার শেষ করুন। আমরা মনে করি আগামী ৬ মাসের মধ্যে সংস্কার কমিশনের রিপোর্টগুলো বিবেচনা করে, সকলের সঙ্গে মতবিনিময় করে ৬ মাস পর সংস্কার শেষ করে আপনি জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।’
বিগত দিনের নির্বাচনের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ১৫ বছর অপেক্ষা করতে পারি তাহলে আরেকটা ভালো নির্বাচন ২/৪ মাস আগে হলো কি পরে হলো সেটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনটা নিরপেক্ষ হবে কিনা। ততটুকু সময় নিতে জামায়াত রাজি আছে।’
এদিকে জেলা জামায়াতের সম্মেলন উপলক্ষে ভোলা শহর ছিল মিছিল শ্লোগানে মুখরিত। দীর্ঘ ১৮ বছর পর নিজ দলের শ্লোগান নিয়ে প্রকাশ্যে জামায়াতে ইসলামী। ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শনিবার সকালে কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী। সকাল থেকে মিছিল নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা ভোলা সরকারি স্কুল মাঠের সম্মেলনে যোগ দেন। সকাল ৯ টার মধ্যে মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আশপাশের রাস্তাঘাট ভরে যায়। সমাবেশে অংশ নেয়া হাজার হাজার নেতাকর্মীরা ছিলেন উচ্ছ্বসিত ও স্বতঃফূর্ত। এ সম্মেলনের মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ন্যায় ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে কাজ করার কথা বলছেন অংশগ্রহণকারীরা।
জেলা আমির মাস্টার মুহাম্মদ জাকির হোসাইনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিশেষ অতিথি সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, এ.কে.এম ফখরুদ্দির খান রাযী, নায়েবে আমির অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মো, মহিবুল্যাহ, জেলা জামায়তের সাবেক আমীর মাওলানা ফজলুল করীম, অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জামায়াতের ইসলামীর জেলা সেক্রেটারি মো. হারুন অর রশিদ।