ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারকোজি ফ্রান্সে মহিলাদের ‘বোরখা’ পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন- এই নিষেধাজ্ঞা সম্ভবত সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণের কারণে হলেও ক্রমশ বেশি সংখ্যক মুসলমান সম্প্রদায়ের মহিলা যারা বাইরে কাজের জগতে আসছেন তাদের সুবিধের কথাও ভাবা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে মৌলবাদী ও প্রগতিবাদী-দু‘পক্ষ থেকেই অনেক প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। মৌলবাদীদের প্রতিবাদের কারণ নতুন করে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন নয়। অনেক প্রগতিবাদীর মতে- পোষাক মানুষের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার। একজন মহিলার যেমন জিন্স্ টপ বা মিনিস্কার্ট পরে রাস্তায় বেরোনোর অধিকার আছে, ঠিক সেইরকম নিজের স্বাধীন মত অনুযায়ী কেউ ‘বোরখা’ বা ‘হিজাব’ পরেও বেরোতে পারেন। প্রথমেই পোষাক বিতর্কে জড়িয়ে পড়লে আলোচনার অভিমুখ দিকভ্রান্ত হবার সম্ভাবনা আছে।
একটু শুরু থেকে ভাবলে কথায় কথায় অনেক কথাই এসে যায়। সভ্যতার আদিম পর্যায়ে পোষাকের আবির্ভাব শুধুমাত্র দৈহিক প্রয়োজনে। আদম-ইভের গল্প যাই বলুন না কেন, ৩ মিলিয়ন বছর আগের সেই প্রাচীনতম Austratopethicus Afarensis- এর জীবাশ্ম- প্রথম হোমিনিড ‘লূসি’র গায়ে পোষাকের কোন চিহ্ন ছিল না কিন্তু লোমশ পুরু চামড়াই তার পোষাকের কাজ করত। এর পর পৃথিবীর অস্বাভাবিক চরম আবহাওয়ার যুগে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষার হাত থেকে বাঁচতে স্বাভাবিক প্রবণতার আদিম মানব Neanderthal পশুচর্ম পরিধানের উপায় ২ লাখ বছর আগে নিজেই শিখে নিয়েছিল। এরপর মগজাস্ত্র আরো ধারালো হল - 40,000 বছর আগে Cro-magnon মানুষ সেই চারকোণা পশুচর্মের মাঝখানে মাথাটা ঢোকানোর জন্য একটি ফুটো করে বানিয়ে ফেলল বিশ্বের প্রথম টিউনিক! যা দিয়ে উর্ধ্বাঙ্গ আবরণও সম্ভব হল। পশুহাড়ের সূঁচ বানিয়ে টুকরো চামড়া জোড়া দিয়ে যে বিশেষ পোষাক বানাল সে তো‘ড্রেস ডিজাইনিং’-এর ইতিহাসে একেবারে মাইলফলক। এরপর বৃক্ষবল্কল-তুলাচাষ-বস্ত্র বুনন প্রক্রিয়ায় পারদর্শিতা অর্জন ইত্যাদি অনেক বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে পোষাকের প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রক যদি হয় শুধু জলবায়ু ও শারীরিক প্রয়োজন- রেখাটির অপরপ্রান্তে ঠিক বর্তমান বিন্দুতে দাঁড়িয়ে সেই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় দেখছি বিভিন্ন পোষাক নির্মাণ সংস্থা (প্রধানত বহুজাতিজক) এবং বিজ্ঞাপন মাধ্যমকে। শারীরিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কেই বা রাখে।‘ওরা!, ওদের’ মুনাফা বাড়ানোর জন্য নিজেদের অজান্তে গভীর খেসারত দিয়ে যায়। আমাদের মধ্যবিত্ত ঘরের তরূণী কন্যা থেকে শুরু করে স্বল্পবিত্তেরপরিচারিকা পর্যন্ত। ওদের মোহময় হাতছানি এড়াতে না পেরে যারা পুষ্টিকর খাবারের পয়সা বাঁচিয়ে বিউটি পার্লারে যায়, নামী কোম্পানীর ফ্যাশনদুরস্ত পোষাক কেনে।আলোচনার প্রাথমিক পর্যায়ে ফেরা যাক, আসলে ‘পাষাক ও চর্মজনিত সমস্যা’ ব্যাপারটি এতই ওতপ্রোতভাবে যুক্ত যে বিষয়ের ‘অভিমুখ’- কে বারবার এদিক ওদিক যাতায়য়াতকরতে হবে। কোরাআনেওমহিলাদের ‘বোরখা’-র মতো নির্দিষ্ট সর্বাঙ্গ ঢাকা কোনো পোষাকের ‘বিধান’ দেওয়া নেই- শুধুমাত্র শালীনতা বজায় থাকে এমন পোষাকেরই নির্দেশ আছে। হজরত মুহাম্মাদ(স.) ধর্ম প্রবর্তনের অনেক পরে সম্ভবত আরবদেশে প্রথম বোরখা-র প্রচলন হয়। এটা হতেই পারে - ওখানকার চরমবাবাপন্ন জলবায়ুর কারণে সূর্যের খররশ্মি আর প্রবল ঠান্ডার হাত থেকে শরীররকে একটু আরাম দেওয়ার তাগিদে। ধর্মের দোহাই দিয়ে সমাজে পুরুষের ক্ষমতায়নের খেলা শুরু হয়ে যায়। শুধু সূর্য নয় পরপুরুষের দৃষ্টি থেকেও মহিলাদের বাঁচানোর তাগিদে অনেক শরিয়তি আইন তৈরি হয়। সেই আইনে চরমভাবাপন্ন আর নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর কোনও ফারাক থাকে না।
পোষাক নিয়ে স্বাধীনতা, সামাজিক ও ধর্মীয় বিতর্ক যাই থাকুক না কেন কিছু ত্বকজনিত সমস্যার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা কতখানি তা বোঝাতেই এতক্ষণের ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া। প্রথমেই মনে রাখতে হবে মানুষের ত্বক শুধু ‘কালো না ফরসা’ সুন্দর কিংবা অসুন্দর বিচারের মাপক নয়, ত্বক মানুষের শরীরের হৃদপিন্ড, যকৃৎ, বৃক্ক, মস্তিষ্ক, ফুসফুস ইত্যাদি যন্ত্রের মতো একটি যন্ত্র এবং শরীরের বৃহত্তম যন্ত্র (Largeest organ of the body)| এই ত্বকের কাজও শুধু দেহের আবরণ নয়। ত্বকের বহুমুখী কাজের মধ্যে একটি প্রধান কাজ হলÑ শরীরের আভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন।স্বাভাবিক আবহাওয়ায় স্বাভাবিক শারীরিক অবস্থায় অর্থাৎ শরীরের আভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা মোটামুটি ৩৭ সে. থাকেন এই তাপমাত্রাতেই হৃদপিন্ড, ফুসফুস, যকৃৎ ইত্যাদি যন্ত্র, সবরকম উৎসেচক, সবরকম শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সঠিকভাবে চলতে পারে। শরীরের বাইরের আবরণ বা ত্বকের সঙ্গে এর তফাৎ হতে পারে। বাইরের আবহাওয়া অথবা শারীরিক অসুস্থাতার কারণে। শরীরের স্বনিয়ন্ত্রিত নিয়মে (Autonomous body thermostat) আভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণে শলাকার (Pivot role) কাজ করে দেহের ত্বক বা চামড়া। (মস্তিস্কের হাইপোথ্যালামাস চামড়ার রক্তজালিকার স্নায়ুগ্রস্থিই পশ্চাৎ সংবেদী স্নায়ু (post ganglionic sympathetic fibre) থেকে acetylcholine নামক পদার্থ নিঃ সরণ চামড়ার ধমনিকা (artiriole) -র প্রসার স্বেদগ্রস্থি থেকে স্বেদ বা ঘাম নিঃসরণ) ।দেহে আভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি হলে উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় স্বেদ নিঃসরণ হয় অর্থাৎ মানুষ ঘামে। এই ঘেমে ওঠা ব্যাপারটা শরীরবৃত্তীয় কাজকর্ম ঠিকঠাক চলার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। ঘাম হওয়ার ফলে শরীরের অভ্যন্তর থেকে বাষ্পীভবনের লীন তাপ গৃহীত হয় ফলে তাপমাত্রা কমে যায়। অন্য কিছু উপায়ে (যেমন ফুসফুস থেকে বাষ্পীভবন) তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও বাইরের তাপমাত্রা যখন ৩৬ সে- এর বেশি থাকে তখন ঘাম ছাড়া আর কোনও উপায়ে শরীরের তাপ বাইরে বিকিরণের কোনও পদ্ধতিই কাজে লাগে না। এবার বুঝুন ব্যাপারটা প্রসাধন ধরে রাখার জন্য নানারকম ঘামনিরোধক (astringent, antiperspirant) যখন ব্যবহৃত হচ্ছে শরীরের ভেতরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কি গোলই না বাঁধছে। Neanduthol বা cromagnon থেকে আধুনিক মানুষ Homosapiens Safieus -এ উত্তরণে দেহের অন্য অনেক যে বিবর্তনের সঙ্গে মানুষের দেহের ত্বকের যে বির্বতন হয়েছে তা হল -ক্রমশ দেহের লোম হ্রাস পাওয়া, ত্বক মসৃণ ও পাতলা হয়ে ওঠা আর ত্বকের নীচের চর্বিজাতীয় পদার্থ (subcutane- ous fat) কমে যাওয়া। আর সামাজিক বীক্ষণে দেখতে গেলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হল ত্বকের উপরের স্তরে মেলানোসাইট নামক কোষে মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতি যা মানুষের রঙ বা বর্ণ নির্ধারণ করে। আধুনিক মানূষের ত্বকেও অঞ্চলভেদে তফাৎ দেখা যায়, যেমন মেরু অঞ্চলের ত্বক ক্রান্তীয় অঞ্চলের ত্বকের চাইতে পুরু। Neanderthal বা cro- magnon রা তো পশুচর্ম পরেই দিব্যি আনন্দে দিন কাটাচ্ছিল। কর্কশ পশুচর্ম শরীরে অথবা মনে কোথাও কোনো কষ্ট বা হীনমন্যতার কারণ ঘটায়নি। কারণ মস্তিষ্কের neocortix-এ নান্দনিক বোধ তখনও তেমন জোরালো ভাবে জন্ম নেয়নি আর লোমশ চামড়ায় সূক্ষè অনুভূতিও প্রখর হয়ে ওঠেনি। সারাদিন পাথর ঘষে অস্ত্র বানিয়ে হরিণ বা বাইসনের পেছনে ছুটে যাদের উদরপূর্তি করতে হত তাদের অত ভাবার সময়ই বা কোথায়? আশ্চর্য হতে হয় যখন দেখি ৪০,০০০ বছর আগের গুহামানবের সঙ্গেঅষ্টাদশ শতাব্দীর চন্ডীমঙ্গলের সঙ্গে ‘ফুল্লরা’-র কোনও তফাত থাকে না। এখানে বারোমাসের অভাবী ফুল্লরার পেটের খিদেও জীবনযুদ্ধ ত্বকের সূক্ষè অনুভূতির ধার ভোঁতা করে দেয়।আদিম মানবের লোমশ চামড়া সূর্যরশ্মি থেকে শরীরকে রক্ষা করত বলে তাদের মেলানিনের প্রয়োজন হত না। আমাদের মেলানিন সূর্যালোক শোষণ করে ত্বকে একটি স্বাভাবিক সুরক্ষা আবরণ হিসেবে কাজ করে। ত্বকের নীচের স্তরে সূর্যরশ্মির প্রবেশ রোধ করে মেলানিন সূর্যালোক শোষণ করে ত্বকে একটা স্বাভাবিক সুরক্ষা আবরণ হিসেবে কাজ করে। ত্বকের ক্যানসার ও অন্যান্য ক্ষতির পরিমাণ কমায়। মেলানিন প্রস্তুতকারক কোষ মেলানোসাইটের গুণগত মাত্রা অনুযায়ী ত্বকের সমস্যা বোঝার সুবিধা জন্য মানুষের ত্বককে সাতভাগে ভাগ করা হয়েছে।
একদিকে অতি শ্বেত ত্বকে এই রঞ্জক তৈরি হয় খুব কম আর অতি কৃষ্ণ ত্বকে ঠিক তার উল্টো। উচ্চতা ও পৃথিবীর আঞ্চলিক আবহাওয়ার বৈশিষ্ট অনুযায়ী ত্বকের এই বিবর্তন হয়েছে। বক্র সূর্যরশ্মি প্রাপ্ত শীতগোলার্ধে স্বাবাবিকভাবেই মেরানোসাইট বিশ্রাম নিতে নিতে কিছুটা কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলেছে আর গ্রীষ্ম গোলার্ধে চড়া রোদে তার কাজ বেড়ে গেছে, ফলে কৃষ্ণবর্ণের ত্বকে মেলানোসাইট কোষের সংখ্যা এক থাকলেও তার মোলানিন উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। মানবসভ্যতার শুরু থেকেই এই মেলানিন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়ে এসেছে বর্ণ-নির্ধারক হিসাবে। এই মেলানিন মাত্রা বেশি কমের জন্য অনেক ক্ষমতার লড়াই, অনেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। মেলানিনের নিক্তিতে কালো মেয়ের বিয়েতে পণ্যের পাল্লা বারি হয়। হীনমন্যতায় ভোগা শ্যামাঙ্গী তরণী লুকিয়ে ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখে। কে তাকে বোঝাবে কালো চামড়ার মানুষের কিছু কম নেই -- বরং প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ তার কিছু বেশিই আছে। মানুষের মনে বিজ্ঞানভিত্তিক সচেতনতা গড়ে তোলার ভার কে নেবে! বন্যা ভূমিকম্প দুর্ঘটনার মর্মান্তিক খবরের বিজ্ঞাপন বিরতিতে যারা দেখায় কোন জাঙ্গিয়া পরলে মেয়েরা বেশি চুমু খাবে, সেই মিডিয়া? কদাপি নয়! বাণিজ্যসর্বস্ব বৈচিত্রহীন এক সমসংস্কৃতি সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার যে চক্রান্ত চলছে তার সম্মোহনে আকৃষ্ট হয়ে গরীব চীনা তরুণী । তার চাকরি করে জমা সর্বস্ব ব্যয় করে প্লাস্টিক সার্জারি করে নাক চোখা করতে আর আদিবাসী যুবতী (মসৃণ কালো ত্বকের জন্য যার গর্ব হওয়া উচিত) ডাক্তারের কাছে এসে বলে- ডাক্তারবাবু, ফর্সা হওয়ার ওষুধ লিখে দিন। তবু আমরা ভাবিকি জেট গতিতেই না সভ্যতার অগ্রগতি হচ্ছে!তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনুযায়ী সূর্যরশ্মিকে যেভাবে বিশ্লেষণ করা হয় তা হল: - পৃথিবীতে যে সূর্যরশ্মি পৌঁছায় তার শতকরা পাঁচভাগ অতিবেগুনী রশ্মি- তার মধ্যে ৯৫-৯৮ ভাগ অতিবেগুনী A রশ্মি তার ২-৫ ভাগ অতিবেগুনী B রশ্মি।
‘মেলানিন’ কাজ করে আলোক শোষণকারী chromophobe কণা হিসাবে। অতিবেগুনী রশ্মি শোষণ chromophobe করে কণা উত্তেজিত হয়ে ওঠে কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ত্বকের কোষের ডি এন এ-র কিছু পরিবর্তন হয় যার ফলে সূর্যরশ্মি দ্বারা ত্বকে কিছু স্থায়ী ও কিছু অস্থায়ী পরিবর্তন হয়। সূর্যরশ্মি দ্বারা ত্বকের একশোটিরও বেশি সমস্যা হতে পারে। দৃশ্যমান আলো ও অতিবেগুনী রশ্মি অতি সংক্ষেপে সেগুলো হল- পুড়ে যাওয়া (sunburn), কালো হয়ে যাওয়া, ক্রমাগত রোদে পুড়ে স্থায়ী তামাটে হয়ে যাওয়া (suntanning), শরীরের অনাবৃত অংশে ত্বকে চুলকানিযুক্ত পুরু ও খসখসে পরিবর্তন (solar karatosis), ক্রমাগত কোষের ডি এন এ-র ক্ষতি হতে হতে elastin, collagen জাতীয় কলা নষ্ট হয়ে চামড়ার স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে স্থায়ীভাবে কুঁচকে যাওয়া (photoaging) সূর্যরশ্মি স্পর্শকাতরতাজনিত বিভিন্ন আকৃতির স্ফোটক (poly-morphous light eruption), ফুলে যাওয়া ও চুলকানো (so-lar urticaria)| এছাড়া আছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ও বিভিন্ন ত্বকের ক্যানসার (basal cell CA. Squamour cell CA. malignant melanoma) -এর প্রকোপ বৃদ্ধি। Prophyria - এর মতো বিপাকজনিত রোগের লক্ষণ চামড়ার অনাবৃত অংশে সূর্যরশ্মি দ্বারা বৃদ্ধি পায়। আরো কিচু রোগ -SLE. Erythema.multiforme. Haper simplex সূর্যলোকে বেড়ে যায়।ক্রান্তীয় আবহাওয়া যাই বলুক না কেন বর্তমানে ম্যাগাজিন, টেলিভিশন ইত্যাদি মিডিয়াতে বিভিন্ন ড্রেস ডিজাইনার তারকাগণ পোষাক প্রস্তুতকারক কোম্পানির মুখ্য প্রচারকের ভূমিকায় বলেছেন- ফর্মাল হোক বা ক্যাজুয়াল , অফিসে অথবা পার্টিতে একটু সাহসী হয়ে উঠুন। আপনার ডিপ কাট ক্লিভেজ সোরিটপ আর র্শট পেন্সিল স্কার্ট বা প্যান্ট, দেখবেন সর্বত্র আপনাকে কেমন মধ্যমণি হতে সাহায্য করছে, অমুক দোকান থেকে অমুক ড্রেস কিনে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন সবার রোল মডেল। দেখুন স্লিভলেস গেঞ্জি আর টাইট প্যান্টে আপনার ব্যক্তিত্ব কেমন খুলে যাবে। Australopethicam Afarencis ‘লূসি’-র প্রয়োজন ছিল না বলে পোষাক পরে নি, Neanduthal. Cromagnor- রা দৈহিক প্রয়োজনে ও সহজলভ্যতা অনুযায়ী পোষাক তৈরি করেছিল আর আজকের আধুনিক ‘লুসি’ রা ড্রেস ডিজাইনারদের পরামর্শে আর সেলিব্রিটদের বিজ্ঞাপন দেখে পোষাক নির্বচন করছে দৈহিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব না করেই ।পশুচর্মের পরে এল বৃক্ষবল্কল, তারপর তাঁত ও পশমজাত বস্ত্র। সবচেয়ে পুরোনো তাঁতবস্ত্রের নমুনা পাওয়া গেছে মেক্সিকোতে যা প্রায় ৭০০০ বছর আগে তৈরি। ভারত, পাকিস্তান ও ইজিপ্টের মানুষ ৩০০০ বছর আগে থেকেই বস্ত্রবয়নশিল্পে পারদর্শিতা অর্জন করেছিল। প্রয়োজন থেকেই এই সব গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশে তুলো চাষ ও তাঁত বোনার শুরু হয়েছিল কারণ সুতিবস্ত্র উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়ায় আরামপ্রদ।ঋগে¦দেও তাঁেদর বস্ত্রের উল্লেখ আছে। স্ত্রীপুরুষ উভয়েই সেলাই না করা অবস্থায় বস্ত্রখন্ডকেই বিভিন্নভাবে পোষাক হিসাবে ব্যবহার করতেন। প্রাচীন শিল্প সাহিত্য থেকে জানা যায় ভারতে পুরুষেরা নিন্মাঙ্গে উর্দ্ধাঙ্গে উত্তরীয় ব্যবহার করতেন। নারীরা বঙ্খন্ডকেই কোথাও মালকোঁচা মেরে, কোথাও লুঙ্গির মতো ঝুলিয়ে কুচি দিয়ে পরতেন। অপেক্ষাকৃত ছোট বস্ত্রখন্ড দিয়ে স্তনদ্বয় আবৃত করে পেছনে গিঁট বেঁধে তৈরি হত‘স্তনপট্ট’ সঙ্গে উত্তরীয়ও থাকত।
প্রাচীনকাল থেকেই ‘সিল্করুট’ দিয়ে রেশমবস্ত্র ভারতে আমদানি হত ঠিকই কিন্তু তা ছিল ধনী ও রাজপরিবারের উৎসবেরপোষাক। নিত্য ব্যবহারের জন্য সুতিবস্ত্রই প্রচলিত ছিল।১১৯২- তে মুহম্মাদ ঘোরীর ভারত আক্রমণের পরেই ভারতে প্রথম মুসলমান রাজত্বের সূচনা হয়- সম্ভবত সেই সঙ্গেই ক্রমশ দেহ আবৃত করা পোষাকের প্রচলন হতে থাকে। প্রাচীন ভারতে দেহের অধিকাংশ অনাবৃত পোষাকের প্রচলন হতে থাকে । প্রাচীন ভারতে দেহের অধিকাংশ অনাবৃত পোষাকের পক্ষে ত্বকজনিত সমস্যার দৃিিষ্টকোণ থেকে যে যে যুক্তি অনুমান করা যা তা হল- প্রথমত মহিলারা পর্দানশীল ছিলেন না ঠিকই আবার খুব বেশি রোদে রোদে ঘুরে বেড়াতেন তার প্রমাণও নেই।গৃহস্থবাড়ি হোক অথবা কাব্যে উলে¬খিত তপ্নো Ñ বৃক্ষ পরিবেষ্টিত ছায়াসুলভ অঞ্চলেই ছিল তাদের স্বচ্ছন্দ ঘোরাফেরা আর গৃহকর্মেই তারা বেশি ব্যাপৃত থাকতেন বলে সূর্যরশ্মি থেকে বাঁচতে খুব বেশি ঢাকা পোষাকের প্রয়োজন হত না।দ্বিতীয়ত ভারতের বেশির ভাগ জায়গাই মধ্যপ্রাচ্যের মতো চরম আবহাওয়াভুক্ত অঞ্চল নয় বলে আবহাওয়াও বাধা হয়ে ওঠেনি। মিশরের পুরুষ মমিদের হাতের অনাবৃত অংশের (ঊীঃবৎরড়ৎ ংঁৎভধপব ড়ভ ভড়ৎবধৎস) বাইরের দিকে (যা সরাসরি সূর্যরশ্মি পায়) ত্বকের পরিবর্তন‘ত্বক- পোষাক সূর্যরশ্মি-আবহাওয়া’ এই চক্রের অঙ্গাঙ্গীভূত সম্পর্ক যে চিরকালের তা প্রমাণ করে।তৃতীয়ত,ক্লোরোফ্লুরোকার্বন জনিত দূষণ সমস্যা তখনো বিজ্ঞান অভিধান যুক্ত হয়নি বলে পৃথিবীর বাইরে গোলাকার ছাতার মতো ওজোন স্তর তখনো অটুট ছিল ফলে ক্ষতিকারক অতিবগুনী রশ্মির অনেকটাই পৃথিবীতে ঢুকতেবাধা পেত। ১৯৭৯ সালে আমেরিকার আকাশে প্রথম ওজোন স্তরের ফুটো বিজ্ঞানীদের নজরে আসে।খোলামেলা সুতির পোষাকে খুব স্বাভাবিকভাবেই অনেক চর্মরোগ এড়ানো যেত। প্রাচীন ভারতে কুষ্ঠরোগ, কর্কটরোগের বহু উলে¬খ আছে কিন্তু ছত্রাকজনিত রোগ যেমন দাদ (উবৎসধঃড়ঢ়ুঃব গোষ্ঠীভুক্ত বিভিন্ন ছাত্রাক দ্বারা হয়), হাজা খুব বেশি দেখা যেত বলে জানা নেই। বিশেষ করে কুচকির দাদ ব্যাপারটা থাকলে তরঙ্গিনী কতটা সক্ষম হতেন ঋষ্যশৃমুনির মন জয় করতে আর অর্জুনই বা লক্ষ্যভেদে বাণ নিক্ষেপ কতটা মনঃসংযোগ করতে পারতেন সন্দেহ আছে। অনুমান করা যেতে পারে যখন থেকে শরীরের ভাঁজে ভাঁেজ লেপ্টে থাকা সেলাই করা পোষাকের প্রচলন হল তখন থেকে পোষাকজনিত চর্মরোগ ও ছত্রাক সংক্রমণের প্রকোপের অধ্যায় শুরু হল। ‘পলিয়েস্টার বিপ্লবে’র পর সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেল। উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়ায় ছত্রাক বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশপায়। পুরনো দিনের সুতির পোষাক (ধুতি,লুঙ্গি, শাড়ি) আর্দ্রতা শুষে নিত ও হাওয়া চলাচলের ফলে ঘাম তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যেত। সম্প্রতিকালের ‘টাইট ফিটিং পোষাক ’, ড্রেসডিজাইনিং-এর পরিভাষায় ‘বডি হাগিং কোদস্’ - বিশেষ করে সেগুলোযদি সুতি ভিন্ন অন্য উপাদানে তৈরি হয়, তাতে ঘাম শোষিত হওয়া দুরে থাক, ঘামে ভেজা পোষাক শরীরের সঙ্গে বিশেষ করে ভাঁজে ভাঁজে (বগল, কুঁচকি, স্তননিম্নও স্তন্ন মধ্যবর্তী অঞ্চল) অনেকক্ষণ লেপ্টে থাকার ফলে ফলে যেমন শ্যাওলা জমে ঠিক সেই রকম ত্বকেও ছত্রাক সংক্রমণ হয়।ব্রিটিশ উপনিবেশোত্তর ভারতে পোষাক বিল্প¬বের ফলে ছত্রাক সংক্রমণের হার কতটা বেড়েছে সে ব্যাপারে কোন সমীক্ষার ফল হাতে নেই, কিন্তু নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে সব চর্মরোগ চিকিৎসকই একমত হবেন যে ধুতি , লূঙ্গি পরিহিত পুরুষ এবং শুধু শাড়ি, চুড়দার (প্যান্টি ছাড়া) পরিহিত মহিলা অপেক্ষা জাঙ্গিয়া বা প্যান্টি নিয়মিত আবশ্যিক পোষাক হিসাবে পরিহিত পুরুষ ও মহিলাদের কুচকিতে দাদের পরিসংখ্যান অনেক বেশি। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে মেয়েরা ক্রমশ বেশি বাইরের জগতের কাজে বেরোতে শুরু করলেও শাড়ি-চুড়িদারের রক্ষণশীলতা থেকে বেরোতে পুরো বিংশ শতাব্দীটাই লেগে গেল। শুধু ঋত্বিকের নীতা রয় ষাট সত্তরের দশকে প্রায় সব মেয়েরাই বাইরে কাজে বেরোলে গায়ের আঁচল বিশেষ ভঙ্গীতে জড়িয়ে সামনে এনে পথ চলতেন এটা বহু শতাব্দীর জড়তা কাটিয়ে না ওঠার কারণে হলেও নিখরচায় পিঠ, গলা, হাতের বাইরের দিক ঢাকা থাকত (যেগুলো অতিবেগুনী রশ্মি ও দৃশ্যমান আলোজনিত চর্মরোগের জায়গা) কোনও সানস্ক্রীন ছাড়া এই সমস্যা থেকে বাঁচা যেত। নিজের পছন্দমতো পোষাক পরার স্বাধিনতার দৃষ্টিকোণ থেকে বিকিনি অথবা বোরখা সমার্থক এবং সমর্থনযোগ্য এই মতামতে সম্পূর্ণ সমর্থন রেখেই বলছি বর্তমানে আলোকজনিত চর্মরোগের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শরীরের অনাবৃত অংশে যেখানে সূর্যরশ্মি সবচেয়ে বেশি সরাসরি আসে (পিঠ,হাতের বাইরের দিক, বুকের উপরিভাগের ‘ভি’ আকৃতির উম্মুক্ত অংশ, মুখ) সেখানে ফুসকুুরি, সাদা ছোপ, দীর্ঘদিন থাকলে একজিমার মতো চামড়া মোটা হয়ে যাওয়া , চুলকানো ইত্যাদি উপসর্গ ও লক্ষণ দেখা যায়। এই সব সমস্যাকে মিলিতভাবে বলা হয় আলোকজনিত বিভিন্ন আকৃতির স্ফোটক (পিম্পল্)। এই সমস্যা পুরুষ অপেক্ষা মহিলাদের বেশি দেখা যাচ্ছে এবংতাদের নিরাময় বেশ দুষ্কর হয়ে উঠছে কারণ পোষাকের চলতি হাওয়া অনুযায়ী পুরুষদের জন্য ফুলহাতা শার্টই বেশি বরাদ্দ আর মোয়েদের হাত হলো উম্মুক্ত টপ।
সমাজে ‘ট্রেন্ডি’ থাকার জন্য চলতি ফ্যাশনকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা কজনই বা রাখে। গায়ে একটু চুলকানি ফুসকুড়ি তবু সহ্য করা যায় কিন্তু ফ্যাশনে পিছিয়ে পড়ার মতো লজ্জাকর ব্যাপার আর কিছু নেই।আগের দশকের চাইতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অরো বেড়েছে। মানুষদের গাড়ি পৌছানোর রাস্তা নেই সুতরাং যে ধরনের আর্থিক আনুকুল্য যারা পাচ্ছে না সেই মানুষগুলোও কিন্তু মাথা পিছু গড় আয়ের ক্ষেত্রে একটি সংখ্যা হয়ে যাচ্ছে। ফ্যাশেনের ক্ষেত্রেও এই লগুকরণ ব্যাপারটা একটা সম-ভাবাপন্ন ক্ষেত্র তৈরি করছে যা সুস্বাস্থ্যকর নয়। আই টি সেক্টর বা এম এন সি-তে কর্মরতা অনাবৃত অংশে আলোকজনিত সমস্যা এড়ারে দামি সানস্ক্রিন মাখতে পারছেন (খরচ মাসিক ৫০০-২৫০০ টাকা ) কিন্তু একই পোষাক বিল্পবে সামিল হলেও দরিদ্র কিশোরী বা গৃহবধূটির কিন্তু সিই সাস্ক্রীন আয়ত্তের বাইরে। এখনো আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে বাইরে উঠোনেই রান্না করা, বাসন মাজা ইত্যাদি যাবতীয় গৃহকর্ম সারা হয়। আগে ঘোমটা দিয়ে মাথা পিঠ ঢেকে এইসব কাজ করার ফলে মহিলাদের সূর্যরশ্মিজনিত ত্বক সমস্যা প্রায় দেখাই যেত না। কিন্তু এখন সানস্ক্রিনের পয়সা বাঁচানো এবং চর্মরোগ ঠেকানোর তাগিদের এ পরামর্শ দিলে নারীবাদীরা অন্য অর্থ করতে পারেন সে ভয় আছে। সূর্য রশ্মিজনিত ত্বক সমস্যা শুধু যে ফ্যাশন দুরন্ত তরুণ-তরুণীদের তা নয়। গ্রীষ্মকালে সব স্কুলেরই নির্দিষ্ট পোষাক হাফ হাতা শার্ট- স্কুলে যাতায়াতের পথে, টিফিনের সময়ে, খেলার পিরিয়ডে এবং প্রার্থনার সময় ছাত্রছাত্রীদের শরীরের অনাবৃত অংশে প্রচুর পরিমাণে অতিবেগুনীরশ্মি সম্পাতিত হয় এবং তারাও এই আলোকজনিত সমস্যার শিকার হচ্ছে।(‘Xcroduma pigmentosa) নামে একটি প্রায় বিরলচর্মরোগ আছে, যে রোগে বোরখা জাতীয় পোষাকই রোগীর জন্য বিজ্ঞানসম্মত বিধান কারণ এই জিনঘটিত চর্মরোগে সূর্যরশ্মি কোষের ডিএনএ-র যে ক্ষতি করে তা আর মেরামত হয় না এবং ক্রমাগত চামড়ার ক্ষত হতে হতে চামড়ার বিকৃতি, ত্বকে ক্যানসার ও অন্ধত্ব দেখা যায়। এই রোগীদের জন্য ফরাসি সরকার কি ভেবেছেন জানা নেই।ভারতবর্ষের প্রখর রৌদ্রপ্রবণ সমস্ত অঞ্চলে দ্বিচত্রযান আরোহী প্রায় সব মহিলাকেই দেখা যাচ্ছে কনুই পর্যন্ত ঢাকা সাদা দস্তানা আর মুখোশের কায়দায় চোখ ছাড়া মুখের বাকি অংশ ওড়না জাতীয় বস্ত্র দিয়ে ঢাকা অথবা সাদা অ্যাপ্রণ জাতীয় পোষাক- ‘ফিউশন’-এর যুগে এ এক অদ্ভুত ‘র্যাম্প ওয়াক + জলদস্যু + মধ্যযুগীয় নাইট পত্মী’ জাতীয় ফিউশন সন্দেহ নেই। কিন্তু ওই যে মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা। সেই অনুযায়ীই এই পোষাকের আগমন মানই গত দু-এক বছর হল হয়তো দু’এক দশকে ঘরের বাইরে বেরোনোর আবশ্যিক তালিকাভুক্ত হয়ে যাবে এই আনুষঙ্গিক পোষাকগুলো। এবার পোষাক শিল্পের যখন কুটিরশিল্প থেকে বৃহৎশিল্পে উত্তরণ ঘটল সেই পর্যায় এবং তার পরিণামটা একটু দেখে নেওয়া যাক। তাঁত ও পশমজাত বস্ত্র যতদিন পর্যন্ত কুটিরশিল্প পর্যায়ে ছিল- সুতো ও রঙের ব্যবহৃত উপাদানগুলো মোটামুটি জানা ছিল কারণ চেনা তাঁতির বাড়িতে তার অঞ্চলের খদ্দেরদের ছিল অবাধ যাতায়াত। ১৭৩০ সালে ইংল্যান্ডে শিল্প বিল্পবের যুগে ল্যাঙ্কশায়ারে ল্যুইসপল কর্তৃক পৃথিবীর প্রথম কটনা মিল চালু হয়। আমেরিকার সেই ঢেউ পৌঁছায় কয়েক দশক পরে ১৭৯৮-তে স্যামুয়েল ফ্লটার কটন মিল। পৃথিবী জোড়া জনস্ফীতির কারণে চাহিদা অনুযায়ী যোগানের প্রয়োজনেই ‘বস্ত্রশিল্প’ একটা বিরাট জায়গা করে নেয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত বস্ত্রশিল্প সমস্ত বৈচিত্রময়, নান্দনিকতাসহ রেশম-পশম-সুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। গুহামানবের পশুচর্ম নির্মিত টিউনিককে যদি পোষাক বিবর্তনের প্রথম মাইলফলক বলা হয় তাহলে তারপরেই দ্বিতীয় মাইলফলক হল ১৯৪১ সালে ম্যাঞ্চেস্টারের ক্যালিকে প্রিন্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মী জন রেক্স হুইনফিল্ড ও জেমস টেনান্টট ডিকসন কর্তৃক Polyeyhelene Terephthalate (PET) আবিষ্কার।এই PET নামক রাসায়নিকটি হল পলিয়েস্টার, টেরিলিন, ডেক্রন ইত্যাদি সমস্ত রকম যন্ত্রাসংশে¬ষজাত (Synthetic) উপাদানের প্রাথমিক বস্তু। এরপরে ডুপন্টনামে এক ভদ্রলোক পলিয়েস্টার তন্তুকে আরো উন্নত করে তার পেটেন্টকিনে নিলেন এবং ১৯৫০ সালে ইংল্যান্ডের শেফিল্ডের কারখানায় প্রথম বিক্রয়যোগ্য পলিয়েষ্টার বস্ত্র প্রস্তুত শুরু হল। এ এক বিশ্বজোড়া বস্ত্র বাণিজ্যের সুচনা পর্ব। এই বস্ত্র সস্তা, সুতির চাইতে অনেক বেশি টেঁকসই, কাচার পর কুঁচকে যায় না, তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়, ইস্ত্রি করার মেহনতলাগেনা। এতগুলো গুণসমন্বিত বস্ত্র স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মন জয় করে নিল। কমপক্ষে বেশি টেঁকসই বলে গরীবদেশে এর জনপ্রিয়তা হল আরো বেশি। এই পলিয়ে›স্টার বিল্প¬বের পর একটি চর্মরোগ উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে- পোষাকের কারণে স্পর্শজনিত ত্বকের প্রদাহ (contact dermotitis), এর লক্ষণ, শরীরের যে অংশে পোষাকের সঙ্গে ঘর্ষণ বেশি হয় যেমন বাহুমূল, জঙ্ঘা- সেখানে চুলকানি, ফুসকুড়ি লাল হয়ে ওঠা ইত্যাদি দেখা যায়। এইসব পোষাকে ব্যবহৃত রাসায়নিক এবং পলিয়েস্টারের edectrostatic effect ত্বকের কোষের সঙ্গে কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায় যা এ সমস্যার জন্য দায়ী। বস্ত্রশিল্পে রঙ টেঁকসই ও কোঁচকানো প্রতিরোধ করার জন্য Formaldecycle Resin ব্যবহার করা হয়। এই রাসায়নিক থেকে চামড়ায় এ্যালার্জি হতে পারে। সবচেয়ে ঝামেলার ব্যাপার হল কোন পোষাকে (নামী অনামী যে ব্রান্ডই বলুন) ঠিক কী ধরনের তন্তু কত পরিমাণে আছে এবং প্রস্তুত প্রক্রিয়ায় কি সি রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়েছে তা জানার কোনও উপায় নেই। সততার সঙ্গে এগুলো যদি পোষাকের সঙ্গে লিখিতভাবে পাওয়ার কোন উপায় থাকত তাহলে পোষাকজনিত চর্মরোগ এড়ানো এবং তার সমীক্ষার কাজের সুবিধা হত।বিশ্বায়নের দুনিয়ায় সবচেয়ে চিন্তার ব্যাপারটা কি তা নিয়ে যদি একটু ভাবা হয়- উত্তরটা হল ‘মানুসিক উপনিবেশ’! ‘বিনিয়োগ-মুনাফা-বিজ্ঞাপন’- এর চক্র মানুষের মস্তিস্কের কোষে কোষে যে মানসিক উপনিবেশ গড়ে তুলেছে এবং তা ভূমি আগ্রাসনকারী রাজনৈতিক উপনিবেশের চাইতে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। সত্যিই তো! সমাজের কটা মানুষই বা পারে চিন্তায় বা আচার ব্যবহারে নিজস্ব সত্ত্বা বজায় রাখতে? সব রীতিনীতিই অধীত অথবা নিঃশব্দে আরোপিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর সামাজিক রেনেশাঁসের আগে হিন্দু মহিলাদের দরজা-জানলাবন্ধ পালকিতে বসিয়ে পালকিসুদ্ধ গঙ্গাস্নান করানো হত- সেটাও যেমন কুসংস্কার, ‘চালু ফ্যাশনদুরন্ত ডিজাইন ও ব্যান্ড ছাড়া পোষাক পরব না’- এই পণ-ও তেমনই এক কুসংস্কার কারণ কুসংস্কার বলতে আমরা বুঝি কোনো সামাজিক রীতি বা নিয়মের প্রতি যুক্তিহীন অন্ধ আনুগত্যে যা ব্যক্তি বা সমাজের জন্য কোনও সদর্থক দিক নির্দেশিকার কাজ করে না।
কেউ হয়তো বলবেন ফ্যাশনদুরন্ত পোষাক সরাসরি সৌন্দর্যের সঙ্গে যুক্ত আর ‘সুন্দর’ কথাটি সবসময়ই সদর্থক। কিন্তু আসল ব্যাপারটা হল সৌন্দর্যের কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। সৌন্দর্যের ধারণাও সদা বিবর্তনশীল। আগের দিনের বঙ্গললনার পানপাতামুখ, ভরা গাল, নিটোল বিচুক আর এক ঢাল কালো চুল এখন বাতিল। হেলেন, ক্লিওপেট্টা-রাও এখন বিউটি কনটেস্ট বা ফ্যাশন শোর র্যামেরপ হাঁটলে ডাহা ফেল করতেন। প্রাচীন গ্রীকদর্শনে উঁকিঝুঁকি মারলে দেখি জেনো ফেন তাঁর বিখ্যাত ‘Memoralihilia’ -তে সৌন্দর্য সম্পর্কে সক্রেটিসের ধারণার কথা লিপিবদ্ধ করেছিলেন- তাতে সৌন্দর্যকে মোটামুটি তিনটি শাখায় ভাগ করা হয়েছে- আদর্শ বা স্বাভাবিক সৌর্ন্দ্য যা প্রকৃতিগত ভাবে উদ্ভুত, আধ্যাত্মিক বা অন্তরের সেন্দোর্য যা দেখতে হলে চোখের সঙ্গে মনও প্রয়োজন এবং যা শুধু শারীরিক আধারে সীমাবদ্ধ নয়, প্রয়োজনীয় বা ব্যবহারিক সৌন্দর্য। এরপরেপে¬টো এবং নব্য পে¬টোনিক মতবাদের সৌন্দর্যের ধারণার সঙ্গে সবসময় বস্তুদ্বারা তৈরি আধার অর্থাৎ শরীরের (Physical media) সঙ্গে শরীর বহির্ভূত অন্তরের সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই সবসময় সবরকমের সৌন্দর্যের ধারণার সঙ্গে একটা জিনিস সবসময় অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থেকেছে তা হল ‘ভালত্ব’। নিবন্ধের উপসংহারে আজকের ঠিক এই সময়ে দাঁড়িয়ে মনে প্রশ্ন জাগে মুনাফাহীন যে কোনরকম ‘ভালত্ব’ যুক্ত সৌন্দর্যের প্রকৃত দিশা কে দেখাবে?
তথ্যসূত্র:
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত