পাঁচ ধাপে পুলিশের বলপ্রয়োগের সুপারিশ

আধুনিক বিশ্বে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে যেসব প্রযুক্তিগত কৌশল ব্যবহার করা হয় তা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক পাঁচ ধাপে বলপ্রয়োগের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে পুলিশ সংস্কার কমিশন রিপোর্ট জমা দিলে এ তথ্য জানা যায়।

সংস্কার কমিশন, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি আইন, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন, ১৯৪৩ সালের বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশন্স (পিআরবি)’র যথাযথ অনুসরণ করে এবং সেইসঙ্গে সময়ের ব্যাপক ব্যবধানে আধুনিক বিশ্বে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে যেসব প্রযুক্তিগত কৌশল ব্যবহার করা হয় তা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক পাঁচ ধাপে বলপ্রয়োগের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। প্রণীত ধাপগুলোকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী কর্তৃক বলপ্রয়োগের জন্য নির্ধারিত নীতিমালা অনুসরণ করে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে।

এই পদ্ধতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসরণের লক্ষ্যে আইনগত বৈধতা দেওয়ার জন্য কমিশন সুপারিশ করছে। এতে ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির ঝুঁকি এড়িয়ে চলা সম্ভবপর হবে। যেসব সংস্কারের প্রস্তাব পেশ করেছে সংস্কার কমিশন-

১. গ্রেপ্তার, তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা [8 SCOB (2016) AD] অবিলম্বে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হলো। অধিকন্তু, রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক দায়েরকৃত আপিল বিভাগের উক্ত রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনটি প্রত্যাহার কিংবা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে উহার আলোকে, প্রয়োজনে, ফৌজদারি কার্যবিধিসহ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-প্রবিধান সংশোধন করা যেতে পারে।

২. আটক ব্যক্তি বা রিমান্ডে নেওয়া আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিটি থানায় স্বচ্ছ কাঁচের ঘোরাটোপ দেওয়া একটি আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ (Interrogation room) অবশ্যই থাকবে।

৩. পুলিশের তত্ত্বাবধানে থানাহাজত ও কোর্ট হাজতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং বন্দিদের কোর্ট থেকে আনা-নেওয়ার সময় ব্যবহারকারী যানবাহনগুলোতে মানবিক সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচ্ছন্নতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হলো।

৪. নারী আসামিকে যথেষ্ট শালীনতার সঙ্গে নারী পুলিশের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।

৫. তল্লাশির সময় পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিতে অস্বীকার করলে অথবা সার্চ ওয়ারেন্ট না থাকলে জরুরি যোগাযোগের জন্য নাগরিক নিরাপত্তা বিধানে একটি জরুরি কল সার্ভিস চালু করা যায়।

৬. জব্দকৃত মালামালের যথাযথ তালিকা না হলে এবং তল্লাশি কার্যক্রমটি সন্দেহজনক মনে হলে তা তাৎক্ষণিক জানানোর জন্য মেট্রো এলাকায় ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বা জেলা পুলিশ সুপারের বরাবর জরুরি কল সার্ভিস চালু করা যায়।

৭. অভিযান পরিচালনা করার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের কাছে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ (Body-worn-camera) ভেস্ট বা পোশাক পরিধান করতে হবে।

৮. রাতের বেলায় (সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যবর্তী সময়) গৃহ তল্লাশি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি বা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

৯. থানায় মামলা রুজু তথা এফআইআর গ্রহণ ও তদন্ত কঠোরভাবে সার্কেল অফিসার বা পুলিশ সুপার কর্তৃক নিয়মিত তদারকি জারি রাখতে হবে।

১০. কেইস ডায়েরি আদালতে দাখিল করে আদালতের আদেশ ব্যতীত কোনোক্রমেই এফআইআর বহির্ভূত আসামি গ্রেপ্তার করা যাবে না।

১১. ভুয়া বা গায়েবি মামলায় অনিবাসী-দূত-নিরাপরাধ নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য করতে হবে।

১২. অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে মামলা দেওয়ার অপচর্চা পরিহার করতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাউকে এধরনের মামলায় হয়রানি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

১৩. বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে কাউকে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না।