পরীমনি ২০১৬ সাল থেকেই মদে আসক্ত: র‍্যাব

13

চিত্রনায়িকা পরীমনি ২০১৬ সাল থেকে অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়েন। তার ফ্ল্যাট থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়েছে।

বুধবার (৪ আগস্ট) নতুন মাদক এলএসডি, আইস ও বিদেশি মদসহ পরীমণিকে আটকের পর বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে র‍্যাব। র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

তিনি বলেন, তার নাম শামসুন নাহার স্মৃতি ওরফে স্মৃতিমনি ওরফে পরীমণি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, তিনি ২০১৪ সালে সিনেমা জগতে আসেন। এ পর্যন্ত ৩০টি সিনেমা ও ৫/৭টি টিভিসিতে অভিনয় করেছেন। তাকে পিরোজপুর থেকে ঢাকার সিনেমা জগতে আনেন আটক হওয়া প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ।

জিজ্ঞাসাবাদে পরীমণি জানান, ২০১৬ সাল থেকে তিনি নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন করেন। মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে তিনি বাসায় একটি মিনি বার স্থাপন করেছেন। মিনি বার থাকায় তার বাসায় পার্টির আয়োজন করা হতো। সেই পার্টিতে বিভিন্ন প্রকার মাদক সরবরাহ করতেন রাজ।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার হওয়া নজরুল ইসলাম রাজসহ আরও অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকের সরবরাহ করতেন এবং পার্টিতে অংশ নিতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন পরীমণি ও তার সহযোগী।

এ র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, আটক হওয়া নজরুল ইসলাম ওরফে রাজকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে খুলনার একটি মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেন। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন বলে দাবি তার। অতপর তিনি বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য ও ঠিকাদারি কাজ শুরু করেন, পাশাপাশি শোবিজ জগতে তার অনুপ্রবেশ ঘটে। বিভিন্ন সিনেমা/নাটকে তিনি নানা চরিত্রে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে বেনামে প্রযোজনায় যুক্ত হন। রাজ মাল্টিমিডিয়া নামে তার একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসায়িক জগৎ ও চিত্রজগতের দুই ক্ষেত্রে তার সংযোগ থাকায় তিনি অতিরিক্ত অর্থ লাভের আশায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিজ অবস্থানের অপব্যবহার করেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, আটক হওয়া নজরুল ইসলাম ওরফে রাজ ইতোপূর্বে গ্রেফতার শরিফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানের সহযোগিতায় ১০/১২ জনের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। ওই সিন্ডিকেটটি রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা ও বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করে। ওই পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে সিন্ডিকেট সদস্যরা বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত অভিজাত পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পার্টিতে ১৫ থেকে ২০ জন অংশগ্রহণ করত। এছাড়া সিন্ডিকেটটি বিদেশেও প্লেজার পার্টির আয়োজন করত। একইভাবে উচ্চবিত্ত প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপও আমেরিকায় এ ধরনের পার্টির আয়োজন করা হতো। পার্টি আয়োজনের ক্ষেত্রে আগত ব্যক্তিদের চাহিদা/পছন্দের গুরুত্ব দিয়ে এসব আয়োজন করত।

রাজের সিন্ডিকেট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করতো। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় তারা অগ্রসর হতেন ও অন্যের স্বার্থ চরিতার্থ করতেন। রাজ মাল্টিমিডিয়া কার্যালয়টি অনৈতিক কাজে ব্যবহার হতো।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজ জানায়, এ জাতীয় অবৈধ আয় থেকে অর্থ বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় আমদানি, ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট, ঠিকাদারি ও শোবিজ জগতে বিনিয়োগ করতেন। বর্ণিত ব্যবসায় কয়েকজন অবৈধ অর্থের যোগানদাতাদের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। ব্যবসায়িক কাঠামোতে অস্বচ্ছতা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে পরীমণির বাসায় অভিযানে যায় র‌্যাব। এ সময় তাৎক্ষণিক ফেসবুক লাইভে এসে পরীমণি বিষয়টি সবাইকে জানান।

পরীমণির বাসায় অভিযানের পর বুধবার রাতেই প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র‍্যাব। এক সহযোগীসহ আটক করা হয় রাজকে। এসময় তার বাসা থেকে মাদক ও পর্নোগ্রাফির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

গত ৯ জুন সাভারের বিরুলিয়ায় অবস্থিত ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেন পরীমণি। পরে ১৪ জুন এই অভিযোগে সাভার মডেল থানায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।