নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে জামায়াতের বিবৃতি

১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দলটি।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানান।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। একটি রাজনৈতিক দল বা জোট অন্য একটি রাজনৈতিক দলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বাংলাদেশের আইন ও সংবিংধান কাউকে এ এখতিয়ার দেয়নি। কোনো দল বা জোট অন্য কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার ধারা চালু হলে এক দল অন্য দলকে নিষিদ্ধ করতে থাকবে। তখন রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না। জামায়াতে ইসলামী একটি প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠন, যা বাংলাদেশের সকল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে।

আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে বসে অতীতে অনেক আন্দোলন করেছে। দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থার ফর্মুলা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে এবং তার ভিত্তিতে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ রকম একটি গণতান্ত্রিক সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবি বেআইনি, এখতিয়ারবহির্ভূত ও সংবিধান পরিপন্থি। জনগণ ১৪ দলের এই দাবি গ্রহণ করবে না।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ব্যাপক রূপ লাভ করলে সরকারপ্রধান, সেতুমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আক্রমণাত্মক ও উসকানিমূলক বক্তব্য রাখার পর ছাত্রলীগ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজের ওপর হামলা চালায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে অতীতে কোনো আন্দোলন দমনের জন্য এভাবে নির্বিচারে গণহত্যা চালানো হয়নি। গোটা জাতি এবং বিশ্ব বিবেক এই গণহত্যার জন্য সরকারকে ধিক্কার দিচ্ছে। গোটা জাতি এ গণহত্যার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের অপকর্মের দায় এড়ানোর জন্য সরকার শুরু থেকেই মিথ্যাচার চালাচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জামায়াত ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর দোষারোপ করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের শিক্ষকসমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক ও সচেতন নাগরিকগণ সরকারের এ ভূমিকার প্রতিবাদ ও সমালোচনা করছেন। বিভিন্ন মহল থেকে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। এহেন অরাজক পরিস্থিতিতে সরকার দেশ ও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ভিন্নদিকে প্রবাহিত করার জন্য এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত নিষিদ্ধের এ হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক, বেআইনি এবং সংবিধানবিরোধী। দেশের জনগণ ১৪ দলের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সকল কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও যাবে ইনশাআল্লাহ। এ দেশের উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সামাজিক কাজে অবদান রেখে চলেছে। দেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জামায়াত নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গে কোটি কোটি মানুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

তিনি বলেন, দেশবাসী ও বিশ্ববাসী অবগত আছেন যে, গত ১৬ বছর ধরে জামায়াতে ইসলামীর ওপর ইতিহাসের নৃশংসতম জুলুম চালানো হয়েছে। শীর্ষনেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। হাজার-হাজার নেতাকর্মীকে চিরদিনের জন্য পঙ্গু করা হয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। এত জুলুম-নির্যাতন সত্ত্বেও জামায়াতকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি। অতীতে যত অঘটন ঘটেছে কোনো রকম তদন্ত ছাড়াই তার জন্য জামায়াতকে দোষারোপ করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে যে, জামায়াত কোনো ঘটনার সঙ্গেই জড়িত নয়। বরং দেখা গেছে যে, ওই সমস্ত ঘটনার সঙ্গে শাসকগোষ্ঠীই জড়িত। এবারও সরকারের সকল অপপ্রচার মিথ্যা প্রমাণিত হবে।

তিনি আরও বলেন, কোনো ষড়যন্ত্রই সত্যকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। ইনশাআল্লাহ শেষ পর্যন্ত সত্যেরই জয় হবে। জুলুমের অবসান ঘটবে, দেশবাসী মুক্তি পাবে। আমরা দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশপ্রেমিক জনগণকে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এ গণহত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।