দেশের রাজনীতিতে নতুন দল নিয়ে আসছে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের প্ল্যাটফরম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। আসন্ন ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধেই এ দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে বলে জানা গেছে। জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহিদ আবু সাইদের বাড়ি থেকে লংমার্চ শুরু করে চট্টগ্রামের শহিদ ওয়াসিমের বাড়ি পর্যন্ত লংমার্চ করে এ দলের ঘোষণা দেওয়া হবে। সম্প্রতি নাগরিক কমিটির বাংলামোটরস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দল গঠনের সার্বিক কার্যক্রম, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন এবং দেশের রাজনৈতিক অবস্থাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
নতুন দল গঠনের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ একটা নতুন রাজনৈতিক শক্তির জন্য অপেক্ষা করছে। জনমানুষের আকাঙ্ক্ষা আমরা লক্ষ্য করেছি এবং তার কিছু প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সারা দেশে আমাদের কলেবর বৃদ্ধি করেছি। দেশে চলমান দীর্ঘদিনের অপরাজনীতির বিপরীতে আমরা একটা নতুন রাজনৈতিক ভাষা নির্মাণের চেষ্টা করেছি। আমরা বিশ্বাস করি দেশের মানুষই আমাদের মন থেকে গ্রহণ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। আশা করি ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এ দলের আত্মপ্রকাশ হবে।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সারা দেশে নাগরিক কমিটির জেলা ও উপজেলা কমিটি শেষ করেই এ দলের ঘোষণা দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে এ দল ঘোষণাকে সামনে রেখে দলের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ করছে ১৭ সদস্যের বিশেষ টিম। এ টিমের মধ্যে নাগরিক কমিটির সদস্য, ছাত্রনেতা, সাবেক আমলা এবং সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকা জাতীয় নাগরিক কমিটির অন্যতম এক শীর্ষনেতা ইত্তেফাককে জানিয়েছেন, চলতি মাসের ২৮ তারিখে রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেওয়ার বিষয়ে অধিকাংশ সদস্য মত দেন। পরবর্তী সময়ে রংপুরে শহিদ আবু সাঈদের বাড়ি থেকে চট্টগ্রামের শহিদ ওয়াসিমের বাড়ি পর্যন্ত লংমার্চ করে দল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে রংপুরে লংমার্চ শুরু করার আগে অথবা চট্টগ্রামে লংমার্চ শেষ করে দল ঘোষণা হতে পারে। ঐ নেতা আরো জানান, যেহেতু অন্তত পনের দিনব্যাপী সারা দেশে এই লংমার্চ অনুষ্ঠিত হবে, তাই লংমার্চের শুরুতেই দল ঘোষণা করে লংমার্চের সময়ে তৃণমূলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে দলের প্রচারণা করতে সুবিধা হবে এমন আলোচনায় লংমার্চের শুরুতেই দল ঘোষণা করার বিষয়ে মত দিয়েছেন বৈঠকে থাকা অধিকাংশ সদস্য।
নাগরিক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মোট ২১০টি উপজেলায় কমিটি করা হয়েছে এবং ওয়ার্ড পর্যায়েও কমিটি করার কাজ চলছে। দল গঠনের সঙ্গে জড়িত নেতারা বলছেন তরুণদের পাশাপাশি নতুন এ রাজনৈতিক দলে যুক্ত হবেন সাবেক আমলা, রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। সেক্ষেত্রে ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতা ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করা হবে। নেতাদের দাবি, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন তারা। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই নতুন দল ঘোষণা করা হবে। তবে নতুন রাজনৈতিক দলের নাম কী হবে? এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ছাত্রনেতারা বলছেন, ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে বেশি ভূমিকা রেখেছেন দেশের তরুণরা। তাই নতুন দল গঠনে তরুণদের কাজে লাগাতে চান জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। ফলে কমিটি গঠনে তরুণদের আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এদিকে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন দল গঠনের ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত দলের কাঠামো কিংবা নেতৃত্বে কারা আসছেন সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৭ সদস্যের বিশেষ টিম বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তাদের পরামর্শ আমলে নিয়ে দলের গঠনতন্ত্র এবং ঘোষণাপত্র তৈরি করবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সহ-মুখপাত্র সালেহ উদ্দিন সিফাত ইত্তেফাককে বলেন, আমাদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কাজ চলমান, তবে নতুন দল ঘোষণার দিন তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় সব জেলায় নানা শ্রেণি পেশার নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছি। জুলাই অভ্যুত্থানে প্রকাশিত জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়িত করতে তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে সবাই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।