দীর্ঘ ৩৫ বছর পর জাবিতে শিবিরের নিজস্ব ব্যানারে আয়োজন

শহিদুল্লাহ মনসুর, জাবি প্রতিনিধিঃ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দীর্ঘ তিন পঁয়ত্রিশ বছর পর প্রকাশ্যে নিজস্ব ব্যানারে উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব ও কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করে ইসলামি ছাত্রশিবির। বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটরিয়ামের সেমিনার কক্ষে এ আয়োজন করে তারা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১ ব্যাচের শিক্ষার্থী অ্যাডভোকেট শাকিল আহমেদ। অতীতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইটা লাইন একসাথে দেখা এইমুহূর্তে আমাদের জন্য যেমন আনন্দের তেমনি বিশ্বাস না হওয়ার মত। লাইন দুটি হলো বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা’।
অতীতের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামি ছাত্রশিবিরকে বিমানবিকীকরণের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে বলেন, এই যার নাম সাব্বির ছিল তাকে সাব্বির ডাকা যেত না। দূর থেকে যদি শিবির শুনা যায়। এই ক্যাম্পাসে শীতকালে সাইবেরিয়া থেকে পাখি আসে। একটা পাখি মারলে ৫০০ টাকা জরিমানা, শিবির মারলে আনন্দ। একটা পাখির সমান মূল্যও ছিলনা শিবির কর্মীদের।
বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন,  আমরা ১৯৪৭ সালে দীর্ঘ ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পাকিস্তান গঠিত হয়। পাকিস্তান সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে না পারায় ৫২  ও ৭১’র  ঘটনা ঘটেছে। ১৯৭৩’র ভোটচুরি, বাকশাল ৭৪’র দূর্ভীক্ষের ঘটনা আমরা দেখেছি। শেখ হাসিনাও সেই ধারাবাহিকতা বহাল রেখেছিলেন। ফেরাউন মারা যাওয়ার পর পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোন ফেরাউন আসেনি। কিন্তু ফেরাউনের কাজগুলো অসংখ্য ব্যক্তি লেবাস পরিবর্তন করে করে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের মূল মাস্টামাইন্ডার হাসিনা হয়ত পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এ জমিন থেকে ফ্যাসিবাদের মূলগুলো উপড়ে যায়নি। বাংলাদেশকে যারা রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছে, তারা কোনোভাবে চাইনা এদেশে নতুন কোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম হোক।
কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম বলেন, অনেকে আমাদের আন্দোলনের নায়ক বলেন, মাস্টামাইন্ড বলেন। আন্দোলনের প্রকৃত নায়ক শহিদরা। গণঅভ্যুত্থানে বিজয় এসেছে শহীদ ভাইদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে। শহিদরাই এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড। তিনি আরও বলেন, অনেক সময় আমরা অন্যান্য লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসলামি ছাত্রশিবিরকে গুলিয়ে ফেলি। ছাত্রশিবিরের একজন কর্মী হওয়ার জন্য তাকে একটা ব্যালেন্স লাইফ লিড করতে হয়, রিপোর্ট রাখতে হয়, বই পড়তে হয়। ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ব্যক্তিগত স্বার্থেকে জলাঞ্জলি দিয়ে জাতি গঠনে কাজ করে গেছে।
শাখা শিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে জনগণ একসাগর রক্ত দিয়েছিল, সে লক্ষ্য মাত্রায় আমরা আজও পৌঁছাতে পারিনি। সেজন্যই, ২৪ এসেও আমাদেরকে আবার রক্ত দিতে হয়েছে। আমরা ৫ আগস্টের আগে যেভাবে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করেছি, যারই ফলশ্রুতিতেই আমরা স্বৈরাচারী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করতে সক্ষম হয়েছি। আগামীদিনে এই ঐক্যকে ধরে রাখলে আমরা স্বাধীনতার পূর্ণ লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির জাবি শাখার আজকেই প্রথম অনুষ্ঠান। জাবিতে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তারা বিভিন্নরকমের ইতিবাচক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই, জাবিতে শিবির নিয়ে যে ধরনের কথাবার্তা ও সমালোচনা উত্থাপিত হয়েছে সে বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবে। তাদের সকল ইতিবাচক কাজের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি৷ অতীতের মতো আবারও যেন এ ক্যাম্পাসে গণরুম গেস্টরুমের কালচার ফিরে না আসে,  সেজন্য একত্রে কাজ করার আশা ব্যক্ত করছি।
গনঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু, অভ্যুত্থানের পরবর্তী সমমে মাত্র ছয়মাসে যে সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে সেটি ইসলামি ছাত্রশিবির। ইসলামী ছাত্রশিবির দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে পেশি শক্তির রাজনীতি না করে, ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করতে হয়। ইসলামি ছাত্রশিবির দেখিয়ে দিয়েছে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে গণরুম থেকে জোর করে শিক্ষার্থী নিয়ে আসতে হয় না, পথে ঘাটে শোডাউন দেয়া লাগে না। ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো জন্য বিষয়গুলো অনুকরণ করা উচিত।
জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক ইয়াহিয়া জিসান বলেন, আমরা যারা দীর্ঘদিন জাবিতে রাজনীতি করেছি, যারাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করেছি, তাদেরই শিবির নামে ট্যাগিং করা হতো। এখনো নতুন দল একই পদাঙ্ক অনুসরণ করছে। আমরা নতুন বাংলাদেশে ছাত্রলীগ মডেলের রাজনীতি আর চাইনা। হল দখলের রাজনীতির পরিবর্তে  শিবিরের মন দখলের রাজনীতিই পারে আমাদের ২৪’র স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে।