বাউফল(পটুয়াখালী) প্রতিবেদক: কাল একুশে ফেব্রুয়ারি। মহান ভাষা দিবস। বাউফলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে ভাষাশীহদের শ্রদ্ধা জানতে প্রস্তুতি চলছে। তবে সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই কোনো স্থায়ী শহীদ মিনার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের ভসরা কলাগাছ, কাঠ ও রঙিন কাগজের বানানো শহীদ মিনার। অস্থায়ী এ শহীদ মিনারে ভাষাশীহদের শ্রদ্ধা নিবেন করনে তারা। শহীদ মিনার না থাকায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একুশের মর্যাদা, মূল্যবোধ ও তাৎপর্য জানা-বোঝা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পার হলেও ফারুক তালুকদার মহিলা কলেজে স্থাপন করা হয়নি শহীদ মিনার। ৫বছর ধরে শহীদ মিনার নেই বাউফল সরকারি কলেজে ও কেশবপুর ডিগ্রি কলেজে। কালাইয়া কামিল মাদ্রসা, ধানদী কামিল মাদ্রাসা, বাউফল ফাজিল মাদ্রাসা, কেশবপুর এন.এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চন্দ্রদ্বীপ আ স ম ফিরোজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলী আকবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ শৌলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভরিপাশা মুন্সি হাসান আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরআলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বড় ডালিমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
উপজেলা শিক্ষা বিভাগের তথ্য মতে, উপজেলায় ১১টি কলেজ, ৫৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬৭টি মাদ্রাসা ও ২৩৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যার মধ্যে ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৭টি কলেজে শহীদ মিনার আছে। ৬৭টি মাদ্রাসাসহ ৩০৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। এছাড়াও উপজেলা শতাধিক বেসরকারি স্কুল – মাদ্রাসা রয়েছে। যার কোনোটিতে নেই শহীদ মিনার।
শহীদ মিনার নেই এমন একটি বিদ্যালয় কালাইয়া কোটপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় প্রতিবছর কলাগাছে রঙিন কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা নিবদেন করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুহিদ বিল্লাহ আবিদ বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। প্রতিবছর আমরা কলাগছ দিয়ে শহীদ মিনার বানাই। এতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। আমাদের একটি পাকা শহীদ মিনার প্রয়োজন।
আলী আকরব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও নেই শহীদ মিনার। ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্য একাধিক বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছি। এখনো বরাদ্দ পাইনি। যার কারণে কাঠের তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরে চাহিদা পাঠিয়েছি। স্থানীয় ভাবে কিছু বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবছরও ৫টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া চলবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নাজমুল হক বলেন, বেশিরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে। বাকিগুলোর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
উপজেলায় ৬৭টি মাদ্রাসা থাকলেও একটিতেও শহীদ মিনার নেই। এসব মাদ্রাসায় ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। উপজলোর দাশপাড়া নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাও. আবদুর রব বলেন, মাদ্রাসায় শহীদ মিনার না থাকায় ফুল দেওয়া হয় না। তবে দোয়া মিলাদ ও আলোচনা সভা করা হয়।
বাউফল উপজেলা মাদ্রাসা জেনারেল টিচার এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. তোফাজ্জেল হোসেন বলেন,‘ স্বাধীনতার পর কোনো সরকার মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি। স্কুল কলেজের মত মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন। যাতে ভাষা দিবস সম্পর্কে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা সাম্যজ্ঞান লাভ করতে পারে।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. মোশফিকুর রহমান বলেন, সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমেই বাউফল উপজেলার যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।