‘ডিআইইউর রেজাল্ট বাণিজ্য ও যৌন নিপীড়নের নিউজ মিথ্যা হলে কোটি টাকা দেবো’

54

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ)’র রেজাল্ট বাণিজ্য এবং চেয়ারম্যানসহ অন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে হওয়া যৌন নিপীড়নের নিউজ মিথ্যা প্রমাণ করতে পারলে কোটি টাকা দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেছেন সাংবাদিকতা করায় বহিষ্কৃত ১০ শিক্ষার্থীর একজন এবং বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি মুছা মল্লিক।

তিনি বলেন, ফজলুল পলাশের কাছে আমরা জানতে চাই- যে শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছে সে কি ভুয়া স্টেটমেন্ট দিয়েছে? আপনার যদি সাহস থাকে আপনি আসেন, মিডিয়া ফেস করেন, পাবলিকলি আপনি জবাব দেন। আপনার নামে যে অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিজিপিএ বিক্রির যে অভিযোগ রয়েছে, সেই অভিযোগ কি ভুয়া? বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে আমরা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় যদি প্রমাণ করতে পারে তাদের সিজিপিএ বিক্রির অভিযোগ নিউজ ভুয়া, যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ভুয়া; এসব অভিযোগ নিয়ে যে নিউজ করা হয়েছে সেগুলো যদি তারা ভুয়া প্রমাণ করতে পারে আমরা তাদেরকে এক কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছি।

ডিআইইউ’কে শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ

বুধবার ২০ মার্চ দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতি’র ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

এসময় মুছা মল্লিক আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন আমাদের সিনিয়রদের সাথে বসতে ভয় পায়, কেন সাংবাদিকদের ভয় পায়, এটি জাতির আর জানতে বাদ নাই। আপনারা জানলে অবাক হবেন, গতকাল একটি কলরেকর্ড ফাঁস হয়েছিল। আমাদের নামে তারা চাঁদাবাজির অভিযোগ দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলতে চাই স্পষ্টভাবে, আপনারা আমাদের সিনিয়র সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে বসেন। আমাদের যদি কোনো অন্যায় থাকে, আমাদের নামে যদি কোনো ব্লেইম থাকে, সেগুলো শুধু আমাদের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের কাছে কেন, প্রয়োজনে সেগুলো কোর্ট অবধি নিয়ে যান। আমাদের এমন কোনো ব্লেইম নেই। এটার সুরাহা হতে হবে, বিচার হতে হবে। কেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১০ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো?

তিনি বলেন, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সাজ্জাদ হোসেন আমাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে গেলেন। বললেন, মুছা মল্লিক তুমি এই সাংবাদিক সমিতি বন্ধ করে দাও। বিনিময়ে তোমাকে সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ করে দেওয়া হবে।

এসময় সাময়িক বহিষ্কার হওয়া অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে নিজেদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।

শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগ শুনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক মানববন্ধনে বলেন, সাংবাদিকতা করার দায়ে সাময়িক বহিষ্কার করে যে অবিচার করা হয়েছে সে সম্পর্কে আমি একটু আগে ভিসিকে কল করেছিলাম। তিনি কল রিসিভ করেন নাই। এই ধরনের অপরাধ কিছুতেই সহ্য করা যায় না। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদদাতা রয়েছে। সাংবাদিকতা করায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের ঘটনা আমি কখনোই শুনি নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ধরণের অন্যায় কিছুতেই সহ্য করা হবে না।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নিকৃষ্ট কাজ করেছে। শামীম হায়দার পাটোয়ারী আপনি টকশো’তে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন, আপনাকে সতর্ক করে দিতে চাই। আপনাকে অবিলম্বে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। ভিসি মহোদয়, আপনি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিন। নতুবা আপনাদের দু’জনের অফিস নয়, বাড়িও ঘোরাও করা হবে। আপনাদের নগ্ন চেহারা তুলে ধরা হবে।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)’র সামনে আমাদের প্রতিবাদ হবে। ইউজিসি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করব, তারপরে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে আমাদের খেলা হবে। এই খেলার সূত্র ধরে যত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে প্রত্যেকের সাথেই আমাদের খেলা হবে। নিয়মের মধ্যে যারা চলছেন, তারা তো চলছেনই; যারা নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাচ্ছেন, নিয়মের বাইরে চলছেন, তাদের প্রত্যেকের সাথে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের খেলা হবে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অবশ্যই অনিয়ম হচ্ছে। এজন্য সাংবাদিকদের সাংবাদিকতা করতে দিচ্ছে না। ছাত্রদের অবশ্যই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে, একইসাথে তাদের সাংবাদিকতা করতে দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিত করা না গেলে এর পরিনাম ভালো হবে না।

ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি’র সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কারও নিজের নিয়ম অনুযায়ী চলবে না। বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী চলতে হবে। মঞ্জুরি কমিশনের আইন অনুযায়ী চলবে। ভিসি সাহেবের আইন অনুযায়ী চলবে না। অন্যায়ভাবে কাউকে বহিষ্কার করা যাবে না, তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতেই হবে। এটা মগের মুল্লুক নয়। আমি শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে কল দিয়েছিলাম। তিনি আমার সাথে মিথ্যাচার করেছেন। অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাদের মর্যাদা দিয়ে সাংবাদিকতা করার পূর্ণাঙ্গ সুযোগ দিতে হবে। না হলে আমরা আমাদের মতো করে ব্যবস্থা নিব। আন্দোলন কিভাবে করতে হয় আর দাবি কিভাবে আদায় করতে হয় সেটা সাংবাদিক সমাজ জানে।

ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি’র সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার কাছে অবাক লাগে যে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ আমার উপস্থিতি শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে কল দেন। কিন্তু এরপরেও তার কানে পানি যায়নি। কাজটি তিনি ঠিক করেননি। আপনি যদি স্বল্প সময়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করেন তাহলে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা হয় নাকি ব্যবসা হয় সেটি সবার সামনে তুলে ধরা হবে। তখন কিন্তু আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হবে। মুখ দেখাতে পারবেন না।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব বলেন, আন্দোলনের ট্রেনে আমরা উঠেছি, আপনারা ভয় পাবেন না। আন্দোলন শুরু হয়েছে, আমরা আপনাদের সাথে আছি, আপনারাও সাথে থাকবেন। এটার শেষ দেখে ছাড়বো। জয় আমাদের হবেই।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ সোহেলী চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য সাজেদা হক, সাবেক সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ, ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জামাল, সাবেক তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক আবদুল হাই তুহিন, এডুকেশন রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইরাব) সভাপতি অভিজিৎ ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জামানসহ অনেকে।