ডা. মুরাদের বিরুদ্ধে মামলায় বিএনপির লাভ নাকি ক্ষতি?

17

খালেদা জিয়ার নাতনি ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা ব্যারিস্টার জায়মা রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করায় সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বিএনপি। প্রতিমন্ত্রীর পদ হারিয়ে দেশান্তর হতে চাওয়া ডা. মুরাদের বিরুদ্ধে মামলা তার দলীয় শাস্তি অনেকটাই কমিয়ে দেবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এমনকি খোদ বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের লোকজনও মামলার সিদ্ধান্তকে ‘রাজনৈতিক গাধামি’ বলে মন্তব্য করেছেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা ডা. মুরাদের বিরুদ্ধে গেলেও দলীয়ভাবে মামলার সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি বলে মনে করেন ব্যারিস্টার জাহিদ রহমান। তিনি বলেন, এই মামলা সার্বিক বিবেচনায় সম্পূর্ণভাবে ডা. মুরাদের বিপক্ষে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে দলীয়ভাবে এই মামলাটি করা উন্নত চিত্তের সিদ্ধান্ত হয়নি।

তিনি বলেন, বিএনপি কেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করল, সরকার এখন একথা বলার একটা সুযোগ পাবে। ফলশ্রুতিতে এই মামলার সিদ্ধান্ত বিএনপির রাজনৈতিক পরিকল্পনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এতে কোন সন্দেহ নেই। এছাড়া প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতির পর আরও শাস্তির সম্ভাবনা ছিল। কেননা ডা. মুরাদ যে অপরাধ করেছেন এতে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। মুরাদের এ ধরনের অসংলগ্ন আচরণ দল কখনোই গ্রহণ করবে না বলেই তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও অচিরেই নেয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছিল। গণমাধ্যমেও এ ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বিএনপির এই মামলার সিদ্ধান্তের ফলে আওয়ামী লীগ এখন সুবিধাজনক অবস্থায়।

ডা. মুরাদের বিরুদ্ধে মামলায় যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির সিদ্ধান্তের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল। তিনি বলেন, মুরাদ ইস্যুতে বিএনপি নিন্দা-প্রতিবাদ-শাস্তিদাবি করে সঠিক রাজনৈতিক পথেই ছিল। কিন্তু হুট করেই তারা আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়। এটাকে আমার কাছে চরম রাজনৈতিক গাধামি বলেই মনে হয়েছে। রাজনৈতিক পরিচিতি ও সংশ্লেষ আছে এমন কোনও মামলায় বাংলাদেশে এখন কি সুবিচার পাবার কোনও পথ খোলা আছে? নাই যে সেটা বিএনপির চেয়ে বেশি ভালো আর কে জানে? এই নির্মম অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও বিএনপি কেন মুরাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেল? এখন আর মুরাদের ব্যাপারে সরকারের কোনও দায় থাকল না। তারা বলবে, এ নিয়ে মামলা হয়েছে, বিষয়টা আদালতের আওতায় চলে গেছে, বিচারাধীন বিষয়ে সরকারের কিছু করার নাই। সরকারের দায় এমন সুন্দর করে নিজের ঘাড়ে টেনে নেয়া বিএনপি ছাড়া আর কারও পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর সব থিতিয়ে গেলে মুরাদ হয়তো আদালত থেকে সাফ-সুতরো হয়ে বেরিয়ে আসবেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে চরম বিতর্ক থাকলেও একে যুগোপযোগী আইন বলে মনে করছেন ব্যারিস্টার জাহিদ রহমান। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে তথ্যপ্রযুক্তি আইন যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পাস হয়। এ আইনটি প্রস্তাবের পর গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমের কর্মীসহ বিভিন্ন মহল তীব্র সমালোচনা করে। ধারা ২১, ধারা ২৫, ধারা ২৮, ধারা ৩৫ নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ এই ধারার অপব্যবহারের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা হরণের আশঙ্কা অনুভব করেছিলেন এবং তিনিও এ বিষয়ে আশঙ্কা বোধ করেন।

ব্যারিস্টার জাহিদ বলেন, আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮৫ শতাংশ মামলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা করেছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত ২১ মাসে হওয়া মামলার ৮৫ ভাগ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময়ে করা ৬৬৮ মামলা পর্যবেক্ষণ করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এ তথ্য জানিয়েছিল, বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রকাশও হয়েছিল। সুতরাং সেই প্রেক্ষাপটে থেকে এই আইনের অপব্যবহারের আশঙ্কা জনিত কিছু প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। ফলশ্রুতিতে যদি এই আইন ঘোলাটে বিবেচিত হয়, অবশ্যই আইনের ধারার সংশোধন শ্রেয় সিদ্ধান্ত হবে।