ঠাকুরগাঁওয়ে মসজিদের কমিটি ও মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ

9

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শীবগঞ্জে ৫৪ শতক সরকারি খাসজমি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মসজিদ কমিটির লোক ও লীজ পেয়েছেন দাবিকারি ২ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

গত রোববার রাতে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে ২ গ্রুপের কমপক্ষে ৭ জন আহত হন। এ ঘটনায় শীবগঞ্জ চৌরাস্তা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

আহতরা হলেন আল মামুন (৩১), আবু জাহেদ (২৪), মিলন (২৮), ফরহাদ (২২), এস এম মোস্তাক (৪৭), এস এম ইমরান আলী, ওয়ালিউর রহমান।

প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শীবগঞ্জ চৌরাস্তার ৫৪ শতক খাস জমির দখলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজিউল ইসলাম ও শীবগঞ্জ কেন্দ্রীয় মসজিদ কমিটির সদস্যদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ চলে আসছিল। রাজিউল ইসলাম ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি হাবিবুল ইসলাম বাবলুর ছোট ভাই। এরই ধারাবাহিকতায় মসজিদের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন ও রাস্তা সংলগ্ন নয়নজলির ৯শতক জমিতে স্থাপিত দোকানপাট নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়।

ঐ দিন মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক ও লীজ পেয়েছেন মর্মে দাবিকারী রাজিউল ইসলামের বড় ভাই হাবিবুল ইসলাম বাবলুর কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বাবলুর চাচাতো ভাই ও জামালপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মিলন ও নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল লোক এমদাদুল হকের উপরে চড়াও হয়ে মারপিটের চেষ্টা করে। এ সময় সাবেক জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এস এম মোস্তাক মারপিট থামাতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৬ জন আহত হন। ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি হাবিবুল ইসলাম বাবলু বলেন, ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দরপত্রের মাধ্যমে ৩১ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে আমার ছোট ভাই রাজিউল ইসলামের নিকট বিক্রি করে দিলেও উক্ত সম্পত্তি অর্পিত মর্মে রেজিষ্ট্রি করে দেয়নি। পরে ওই সম্পত্তি অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মামলা দিলেও ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর মামলা খারিজ হয়ে জমি অবমুক্ত হয় এবং ১৭ সালের ১৭ আগস্টের স্বাক্ষরিত ডিক্রী বহাল রাখা হয়। এতে করে ঐ সম্পত্তির দাবিদার হন আমার ভাই রাজিউল ইসলাম।

মারপিটের বিষয়ে তিনি বলেন, মসজিদ কমিটির সদস্যরা দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে মসজিদ পরিচালনা করলেও বিভিন্ন অনিয়মের কারণে চলতি বছরের ২১ মে পুরাতন কমিটি ভেঙ্গে মঞ্জুর আলমকে আহবায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় ৬ বছর ধরে মসজিদের সামনের দোকানপাঠ থেকে কোন ভাড়া গ্রহন করা হয়নি।

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, উল্লেখিত ৫৪ শতক জমিতে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে আসছিল। ওই জমির সামনের অংশে ১৩-১৪টি দোকান ঘর থেকে দীর্ঘদিন ধরে শীবগঞ্জ কেন্দ্রীয় মসজিদ কমিটি দেখাশুনা করে আসছে। কিন্তু হঠাৎ হাবিবুল ইসলাম বাবলু ওই জমি নিজেদের দাবি করে জমি দখলের পায়তারা শুরু করে। ঘটনার দিন আমি মাগরিবের নামাজ শেষে সেখানে গল্প করছিলাম। এ সময় হাবিবুল ইসলাম বাবলু সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাকে সেখানে কেন দাড়িয়ে আছি সে বিষয়ে বলতে থাকলে বাক বিতন্ডা শুরু করে। উল্লেখিত ৫৪ শতক জমির মালিকানার কাগজপত্র বারবার বাবলুর কাছে চাইলেও তিনি দেখাননি। তিনি কাগজপত্র দেখালে জমি ছেড়ে দিব। মসজিদের জন্য জমি দান করলে ভাল না করলেও মসজিদ অন্যত্র সরিয়ে নিব। এ সময় বাবলুর লোকজন আমাকে গালাগালি করে অহেতুক ধাক্কাধাক্কির চেষ্টা করে। সামনের দোকানের অংশটুকু জেলা পরিষদের। ৫৪ শতকের ভেতরে ঐ ৯ শতক না। এই দোকানগুলি নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য হাবিবুল ইসলাম বাবলু পায়তারা করছেন।

জামালপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এস এম মোস্তাক বলেন, ঐ ৫৪ শতক জমিতে দীর্ঘদিন থেকে ইউনিয়ন পরিষদ ও মসজিদ স্থাপিত হয়ে ব্যবহার হয়ে আসছে। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ অন্যত্র সরিয়ে নিলেও মসজিদ সেখানেই রয়েছে। এর আগে ওই জমির সামনের অংশে নয়নজলির ৯ শতক জমির দোকানপাট থেকে ভাড়া মসজিদ কমিটি গ্রহন করছিল। কিন্তু কিছুদিন থেকে ওই জমি নিজেদের দাবি করে হাবিবুল ইসলাম বাবলু পক্ষ দখলের পায়তারা করছে। এটি অর্পিত সম্পত্তি ও সামনের দোকানের অংশ জেলা পরিষদের উল্লেখ করে বারবার তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তারা না মেনেই দখলের উদ্দেশ্যে গতকাল রোববারের মারপিটের ঘটনা ঘটায়। এতে আমিও আহত হই।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন পক্ষ লিখিত অভিযোগ জমা দেয়নি। ঘটনার পরপরই তাৎক্ষনিক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পরবর্তিতে ঘটনার প্রকৃত বিষয় জেনে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।