
ইউএসএইড-এর ২ কোটি ১০ লক্ষ ডলার অনুদান কে পেয়েছে, এই নিয়ে ভারতে তীব্র বিতর্কের মধ্যে ফের নতুন বোমা ফাটালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বুধবার তিনি বলেছিলেন, বাইডেন প্রশাসন সম্ভবত মোদীর পরিবর্তে অন্য কাউকে জেতানোর জন্য ভারতে ভোটদানের হার বাড়াতে এই অনুদান দিয়েছিল। শুক্রবার তাঁর মন্তব্য, ‘ভারতে ভোটাদানের হার বাড়ানোর জন্য আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ২ কোটি ১০ লক্ষ ডলার দেওয়া হয়েছে।’ ট্রাম্পের এই মন্তব্যকে এ বার হাতিযার করল কংগ্রেস। শনিবার বিজেপিকে খোঁচা দিয়ে তারা প্রশ্ন ছুড়ে দিল, ‘গেরুয়া শিবির এখন নীরব কেন?’
কংগ্রেসের মিডিয়া এবং প্রচার বিভাগের চেয়ারম্যান পবন খেরা এ দিন এক সংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে আমরা আমাদের বন্ধু নরেন্দ্র মোদীকে ২১ মিলিয়ন ডলার দিয়েছি। ভোটদানের হার বাড়ানোর জন্য ভারতকে ২১ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছিল। এই ২১ মিলিয়ন ডলার কোথায় গেল? এই অর্থে কি ভোটাদানের হার বেড়েছে?’
মোদীকে ২ কোটি ১০ লক্ষ ডলার দেওয়া হয়েছে, এমন দাবি করার পাশাপাশি শুক্রবার ট্রাম্প আরও দাবি করেছেন, এই অর্থ ভারতকেই দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশকে আলাদা ভাবে অর্থ দেওয়া হয়েছে। ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল ২ কোটি ১০ লক্ষ ডলারের অনুদান নয়াদিল্লিকে নয়, ঢাকাকে দিয়েছিল আমেরিকা।
সেই দাবি খণ্ডন করে ট্রাম্প বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার জন্য ২৯ মিলিয়ন ডলার এমন একটি ফার্মে গিয়েছে, যার নাম কেউ কোনওদিন শোনেনি। ২৯ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে তারা। কল্পনা করতে পারেন?’
ট্রাম্পের এই দাবির পরপরই ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর এক তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতকে ২১ মিলিয়ন ডলার পাঠানোর কোনও সরকারি রেকর্ড তারা খুঁজে পায়নি। এই দুই সংবাদপত্রের তদন্ত রিপোর্টগুলি উদ্ধৃত করে পবন খেরা বলেন, ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, ২১ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে গিয়েছে, ভারতে নয়। ওয়াশিংটন পোস্টও জানিয়েছে, তাদের তদন্তে এই রকম কিছুই পাওয়া যায়নি। ২০০১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে, ইউএসএইড ভারতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১১৩ কোটি টাকা করে পাঠিয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ শতাংশ মোদী সরকারের আমলে এসেছে। প্রায় ৪০ শতাংশ এসেছিল কংগ্রেস সরকারের আমলে। এই অর্থের এক-চতুর্থাংশ এসেছে গত চার বছরে। সরকারের জানানো উচিত ইউএসএইডের টাকা কে পেয়েছে?’
ইউএসএইড নিয়ে বিতর্ক উস্কে উঠতেই কংগ্রেস মোদী সরকারের কাছে এই বিষয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছিল। এ দিন ফের সেই দাবি করেছেন পবন খেরা। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অবিলম্বে তাঁর বন্ধুকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করা উচিত, তিনি কেন এমন কথা বললেন। যদি তিনি তা না করতে পারেন, ধরে নিতে হবে ট্রাম্প যা বলেছেন তা সঠিক। এত নীরবতা কেন? কে মিথ্যা বলছে? সাংস্কৃতিক সংগঠনের ছদ্মবেশে থাকা দল, ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলি কত টাকা পেয়েছে, আমরা এই বিষয়ে একটি শ্বেতপত্র চাই।’
একটি সংবাদ প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে কংগ্রেস নেতা আরও বলেন, ‘২০২১ এবং ২০২৪ অর্থবর্ষে ভারতকে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে ইউএসএইড। কেন এবং কী উদ্দেশ্যে মোদী সরকার ৬৫০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে?’
এটাও মনে রাখতে হবে যে, ‘গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ এবং নাগরিক সমাজ’-এর জন্য ৩.৬৫ লক্ষ ডলারের তহবিলের প্রথম কিস্তি এসেছিল ২০১২ সালের ১ অক্টোবর। ওই সময় আন্না হাজারের আন্দোলন তুঙ্গে ছিল। অরবিন্দ কেজরিওয়াল তার নিজস্ব দল গঠন করছিলেন। নরেন্দ্র মোদী বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাহলে, এই তহবিল থেকে কারা উপকৃত হয়েছিল?’
সাম্প্রতিক দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক আপের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল কংগ্রেস। পবন খেরার এ দিন স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, ভোট মিটে যাওয়ার পরও কেজরিওয়ালের প্রতি নরম মনোভাব দেখাবে না কংগ্রেস।