জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে সর্বদলীয় বৈঠক আজ। রাজধানীর হেয়ার রোডে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’য় অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, গণতন্ত্র মঞ্চসহ রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত থাকবেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকেই স্পষ্ট হবে, কবে ঘোষণাপত্রটি দেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের একটি প্রেক্ষাপট-প্রত্যাশা এই ঘোষণাপত্রে প্রতিফলিত হবে। সব রাজনৈতিক দল এবং পক্ষের মতামত নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই ঘোষণাপত্র ঘোষিত হবে।’
ছাত্রদের ঘোষণাপত্র অবলম্বনে গত ১২-১৩ দিনে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে খসড়া ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছেন জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। বিএনপি, জামায়াত, নারী সংগঠন, শিক্ষক সংগঠন ও ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সবাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার বিষয়ে একমত আছেন। কিন্তু ঘোষণাপত্রটি কবে দেওয়া হবে এবং ভেতরে কী কী আধেয় (কনটেন্ট) থাকবে, সে বিষয়ে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি। মাহফুজ আলম বলেন, বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন, বিএনপি-জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদসহ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তিন-চার দিন আগে ঘোষণাপত্রের খসড়া পৌঁছানো হয়েছে। তারা খসড়া ঘোষণাপত্রের অধিকাংশ ধারা নিয়ে একমত। কয়েকটি ধারা নিয়ে দ্বিমত আছে। এই দ্বিমতগুলো নিয়ে তারা দলীয় ফোরামে এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। নিজেরাও কিছু প্রস্তাব দিতে চাইছে। মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমরা এখনো স্পষ্ট নই, তাদের (রাজনৈতিক দল) দ্বিমতের জায়গা কী হতে পারে। সেটা আলোচনাসাপেক্ষে জানতে পারব।’ সর্বদলীয় বৈঠকের মধ্য দিয়ে ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার কথা জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, ‘ছাত্ররা যদি সম্মতি দেয় এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এটা যদি করা যায়, তাহলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা যাবে। ঘোষণাপত্রটিও ফলপ্রসূ হবে।’
ঘোষণাপত্রে সাত বিষয় অন্তর্ভুক্তির দাবি : ‘জুলাইয়ের প্রেরণা, দিতে হবে ঘোষণা!’ স্লোগানে সাতটি বিষয় জুলাই ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে গত ৬ জানুয়ারি থেকে ১৪ জানুয়ারি সারা দেশে জনসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা। বিতরণ করা লিফলেটে উল্লেখ করা সাতটি দাবি হলো, জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আহতদের বিনা মূল্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুচিকিত্সা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট করা; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা; অভ্যুত্থানে আওয়ামী খুনি ও দোসরদের বিচার নিশ্চিত করার স্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করা; ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা পরিষ্কার করা; ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল ভিত্তি সংবিধান বাতিল করে নির্বাচিত গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা; নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে সব ধরনের বৈষম্য নিরসনের মধ্য দিয়ে নাগরিক পরিচয় প্রধান করে রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি রাখা এবং বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো বিলোপ করতে সব ধরনের সংস্কারের ওয়াদা দেওয়া।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত