গেমস ডেভলপমেন্টের নামে অনলাইন জুয়া পরিচালনার দায়ে আন্তর্জাতিক জুয়াড়ি চক্র উল্কা গেমস ও মুনফ্রগ ল্যাবের জব্দ হওয়া ৮০ কোটি টাকা কেন বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেওয়া হবে না- জানতে চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। জনস্বার্থে দৈনিক দেশের ডাক পত্রিকার সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন বাদী হয়ে আইনজীবী ড. মো. ইউনুস আলী আকন্দের মাধ্যমে হাইকোর্টে এ আবেদন করেন।
রিটে অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জব্দ টাকা জমা থাকা ৪টি ব্যাংক এবং জুয়াড়ি কোম্পানি উল্কা গেমস, মুনফ্রগ ও স্টিলফ্রন্টকে বিবাদী করা হয়েছে। রিটে দৈনিক প্রথম আলো, যুগান্তর, ঢাকাওয়াচ২৪.কম, দৈনিক দেশের ডাক, শেয়ারবিজ, দৈনিক বিজনেস বাংলাদেশসহ একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নজরে আনা হয়েছে।
রিটের পক্ষের আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দ বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে জুয়া অবৈধ ও নিষিদ্ধ। জুয়াড়িরা এতগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ফাঁকি দিয়ে কীভাবে কোম্পানী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন পেল এবং বছরের পর বছর জুয়া কার্যক্রম ও শত শত কোটি টাকা পাচার করল, এটা বিস্ময়কর। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই জুয়াড়িরা সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে জব্দ হওয়া ৮০ কোটি টাকা ফেরত নিতে নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি বলেন, জুয়াড়িদের জব্দ হওয়া টাকা তারা কোনভাবেই ফিরে পেতে পারে না। জব্দ টাকা ফেরত দেওয়া হলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে জুয়া কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দেশের অর্থপাচার ঠেকাতে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষায় জব্দ ৮০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এতে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ হবে এবং ভবিষ্যতে জুয়া কার্যক্রম নিরুৎসাহিত হবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর জুয়াড়ি চক্র উল্কা গেমসের সিইও এবং মুনফ্রগ ও স্টিলফ্রন্টের ম্যানেজিং এজেন্ট জামিলুর রশীদ ৬ জন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হন। এরপর তার গেমস ডেভলপমেন্টের নামে অবৈধ জুয়া পরিচালনা করে হাজার কোটি টাকা পাচারের তথ্য উঠে আসে। সেসময় উল্কার ৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৮০ কোটি টাকার বেশি জব্দ হয়। সেই মামলায় জামিনে বের হয়ে জব্দ টাকা ছাড়াতে নিজেদের মধ্যে বিবাদের নাটক সাজিয়ে তৎপর হয়ে ওঠে ধুরন্দর জুয়াড়ি চক্র। ব্র্যাক ব্যাংকের কাছে টাকা হস্তান্তরের একটি আদেশ গেলে তারা এনবিআরের পাওনার বিষয়টি আদালতকে জানায়। পরে বিষয়টি এনবিআরের নজরে আসলে তারা করের টাকা আদায়ের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকে যান। সেখানে নজিরবিহীন ১৩ ঘণ্টা দেনদরবার চলে। তবে আদালতের নির্দেশ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক এনবিআরকেও টাকা দেয়নি। পরে এ বিষয়ে শুনানি শেষে ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিত এবং এনবিআরকে যেকোন প্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা মেনে অফিস সময়ের মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেন। তবে এই রিটে জুয়ার অবৈধ পুরো টাকা বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।