ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ও স্বাধীনতা রক্ষা পেয়েছে: তারেক রহমান

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এই অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে দেশ ও স্বাধীনতা রক্ষা পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি প্রায়ই বলে থাকি, ১৯৭১ সাল ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অর্জনের, আর ২০২৪ সাল হচ্ছে দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার। এমন পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে এবারের বিজয় দিবস অবশ্যই বেশি আনন্দের ও গৌরবের এবং অনেক বেশি অর্থবহ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই, আগামীর বাংলাদেশে প্রতিটি স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস হয়ে উঠবে জনগণের প্রতি রাষ্ট্র ও সরকারের দায় কিংবা প্রতিশ্রুতি পূরণের একটি অর্থবহ দিন।’

রোববার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে মহান বিজয় দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে বিএনপি’র উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চূয়ালী যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বক্তব্যের শুরুতেই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সকল শহিদ এবং স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

তারেক রহমান আশা প্রকাশ করে বলেন, শত অস্পষ্টতা কাটিয়ে অচিরেই নির্বাচনী রোডম্যাপে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করবে। ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কী করতে চাইছে?’- এমন প্রশ্ন করে তারেক রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্র মেরামতের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের আর কতো মাস কিংবা সর্বোচ্চ কত সময়ের প্রয়োজন -তা জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। এই সরকার জনগণের সামনে তাদের আগামী দিনের কর্ম পরিকল্পনার একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করলে একদিকে যেমন জনগণের কাছে সরকারের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতাকেই নিশ্চিত করবে। অপর দিকে প্রশাসনিক কার্যক্রমেও গতিশীলতা বাড়বে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আমি জাতীয়তাবাদী দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদেরকে আন্তরিক আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, শত অস্পষ্টতা কাটিয়ে অচিরেই নির্বাচনী রোডম্যাপে যাত্রা শুরু করবে আমাদের প্রিয় এই বাংলাদেশ। সেই যাত্রাকে মসৃণ করতে আপনাদের বিশ্বস্ত সঙ্গি হচ্ছে দেশের গণতন্ত্রকামী-স্বাধীনতা প্রিয় জনগণ।’

তিনি দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে উদ্দেশ্য করে পুনরায় বলেন, ‘আপনারা মন দিয়ে শুনবেন, আপনাদের বিশ্বস্ত সঙ্গী সর্বস্তরের জনতার সঙ্গে থাকুন, তাদেরকে পাশে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।’

রোড ম্যাপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আগামী দিনের কর্ম পরিকল্পনার রোড ম্যাপ ঘোষণার কথা শুনলেই যদি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তির ছাপ ফুটে উঠে, সেটি হবে অবশ্যই গণ-আকাংখা বিরোধী। সরকার তাদের সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের কাছে যত বেশি স্বচ্ছ থাকবে, জনগণও সরকারের প্রতি তাদের ততবেশি সমর্থনের হাত প্রসারিত রাখবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্র ও জনগণকে স্বনির্ভর ও শক্তিশালী করতে হলে রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের লালন, বিকাশ এবং চর্চা অত্যন্ত জরুরী। আমরা মনে করি, রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা অন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্র বিন্দু হচ্ছে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদ। জবাবদিহিতামূলক সরকার ও সংসদ যথাযথভাবে কার্যকর থাকলে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত থাকে। আমাদের মনে রাখা দরকার, জনগণ শক্তিশালী না থাকলে জাতীয় ঐক্যও শক্তিশালী হয় না।’

দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো হাসপাতালে ডেঙ্গুতে মানুষের মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ যোগাতে অনেকের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। এর পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতিতে দিশেহারা সমাজের প্রায় প্রতিটি মানুষ। প্রতিদিনের সংসারের ব্যয় মিটাতে জনগণকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে, সুতরাং জনজীবনের নিত্য দুর্ভোগ কিংবা বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে অন্তর্বর্তী সরকার যদি শুধু সংস্কারের নামে সময় সংক্ষেপ করেন, তাহলে জনগণের কাছে সংস্কার আগে না সংসার আগে এই প্রশ্নটি মূখ্য হয়ে উঠতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘দুর্ভোগ বর্তমানে মেনে নিলেও জনগণ এখনো সরকারের বিরুদ্ধে তেমন উচ্চ-বাচ্য করছেন না। কারণ জনগণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সফল দেখতে চায়। তবে আগেও বলেছি, আজও উল্লেখ করতে চাই, অন্তর্বর্তী সরকার নিজেরা নিজেদেরকে সফল দেখতে চায় কিনা তা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘একটি দেশের জন্য ৫৪ বছর সময় কম নয় এই কথাটি গতকাল শনিবার বিশেষভাবে সক্ষম একজন ভাই, যিনি উল্লেখ করেছেন তার কিছু কথা বলতে গিয়ে। লাখো মানুষের রক্তের উপর দিয়ে দেশের জনগণ আজ অভূতপূর্ব ঐক্যের মোহনায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই ঐক্য কাজে লাগিয়ে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বিএনপি ইতিমধ্যেই ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই কর্মসূচির লক্ষ্যই হচ্ছে. শিশু-নারী-বৃদ্ধ অথবা দলমত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রকে অবশ্যই প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব নিতে হবে।