ছাত্রীনিবাসে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ বিএনপি নেত্রী

বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের এক ছাত্রীর পক্ষ নিয়ে সালিশ করতে ছাত্রীনিবাসে যাওয়া মহানগর বিএনপির এক নেত্রীকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন ছাত্রীরা। পরে কলেজ অধ্যক্ষ ও প্রশাসনের সহায়তায় উদ্ধার হন তিনি। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাতে কলেজটির বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসে এ ঘটনা ঘটে।

ছাত্রীদের অভিযোগ, দলীয় প্রভাব দেখিয়ে হোস্টেলে ঢুকে মেয়েদের হুমকি দিতে গিয়ে অবরুদ্ধ হন ওই নেত্রী। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর বরিশাল ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থীরা। তবে অভিযুক্তের দাবি, ছাত্রীনিবাসের সহকারী সুপারের ইন্ধনে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন ছাত্রীরা।

অবরুদ্ধ হওয়া ওই নেত্রীর নাম আফরোজা খানম নাসরিন। তিনি বরিশাল মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক।

ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, অনার্স চতুর্থ বর্ষের সুমনা পারভীন অন্তু নামে এক মেয়েকে দিয়ে বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন আফরোজা। তবে ছাত্রীনিবাসে কোনোভাবেই রাজনীতি ঢুকতে দিতে চান না শিক্ষার্থীরা। এজন্য ছাত্রীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন আফরোজা।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী অন্তু দীর্ঘ সাত বছর ধরে বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসে আছেন। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন করেছেন। আরেক ছাত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন ভবনের রুম দখল করে রেখেছেন। এর আগে বহুবার তাকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে যখনই তাকে হল ছাড়া করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনই তার অভিভাবক পরিচয়ে কাউনিয়ার জামান সেলিম নামে একজন হল সুপারকে হুমকি দেন।

গত ২৪ নভেম্বর ছাত্রীনিবাস কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীকে আসন ছেড়ে দিতে নোটিশ দেয়। তিনি ছাত্রীনিবাস ত্যাগ না করায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। তখন বিএনপি নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিন ওই ছাত্রীনিবাসে ঢুকে ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। পরে শিক্ষার্থীরা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে তিনি ছাড়া পান।

বিএনপি নেত্রী আফরোজা খানম বলেন, গত ২৪ নভেম্বর রাতে অন্তু নামে ওই ছাত্রীকে ছাত্রীনিবাস ছাড়া করতে টানা তিন ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে গালাগাল করেন সহকারী হোস্টেল সুপার জহিরুল ইসলাম। এমনকি তিনি ওই ছাত্রীকে মারধরের চেষ্টাও করেন। ঘটনাটি সামাধানের জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নতুন ওই হোস্টেলে গিয়েছিলাম। তখন সহকারী হোস্টেল সুপারের মদদে কিছু ছাত্রী এসে অন্তুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। এমনকি তারা নির্যাতনের শিকার ছাত্রীকে হোস্টেল থেকে আমাকে নিয়ে যেতে বলেন। পরে শিক্ষকদের উপস্থিতিতে রাতেই বিষয়টি সমাধান করেছি।

বিএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ভেতরে ছাত্রীদের মধ্যে একটু ঝামেলা হয়েছিল, আমরা সবাই মিলে সেটা সমাধান করেছি। আফরোজা খানম নাসরিন বনমালী গাঙ্গুলীর সাবেক ছাত্রী। তিনি হোস্টেলে আসতেই পারেন। তবে অনুমতি ছাড়া তার এভাবে ভেতরে প্রবেশ করাটা ছাত্রীরা ভালোভাবে নিতে পারেননি।