আহমেদ শরীফ রনি, নেত্রকোনা প্রতিনিধি: নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে গলায় ফাঁস দিয়ে ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী দেবজানী কর (১৪) আত্মহত্যা করেছে। তবে পুলিশকে না জানিয়েই তার লাশ গ্রামের বাড়ি নিয়ে সৎকারের চেষ্টা করেছিল পরিবারের লোকজন।
পরে পুলিশ গিয়ে গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থেকে লাশ উদ্ধার করে এনে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন সকালে দেবজানীর লাশ নেত্রকোনা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
দেবজানী কর সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মহদিপুর গ্রামের মৃনালকান্তি করের মেয়ে। সে মোহনগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। দেবজানীর ছোট ভাই শহরের একটি বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
পড়াশোনার জন্য মোহনগঞ্জ পৌরশহরের দক্ষিণ দৌলতপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় মা-বাবার সঙ্গে বসবাস করত দেবজানী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুরে ছেলেকে নিয়ে প্রাইভেটে যায় দেবজানীর মা। তার বাবা ব্যবসায়িক কাজে বাইরে থাকায় এসময় দেবজানী ঘরে একা ছিল। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মা ঘর ফিরে দেখেন ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ।
প্রতিবেশীদের নিয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখেন সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলছে দেবজানী। পরে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করে।
পরে পুলিশকে না জানিয়ে গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় নিয়ে দেবজানীর লাশ। পরে রাত দু’টার দিকে গ্রামের বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসে মোহনগঞ্জ থানা পুলিশ।
পুলিশ বলছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক বিষয়টি থানা পুলিশকে জানাতে দেরি করেছে। তাদের উচিত ছিল ঘটনা দ্রুত পুলিশকে জানানো।
মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পার্থ সরকার বলেন, ওই সময় যে মেডিকেল অফিসার দায়িত্বে ছিলেন তিনি নতুন। তাই তার কাছে থানার কারো নাম্বার ছিল না। পরে খুঁজে বের করে আমাকে জানানোর পর পুলিশকে জানাই। এতে ঘণ্টা খানেক সময় লেগে যায়। তবে ওই ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করার পরপরই পরিবারের রোকজন দ্রুত হাসপাতাল থেকে লাশ বাড়িতে নিয়ে যায়।
ওই ছাত্রীর বাবা মৃনালকান্তি কর বলেন, কেন আমার মেয়ে এমনটা করল বুঝলাম না। আমরা লাশ নিয়ে বাড়ি চলে গেছি। এটা অবশ্য ভুল হয়েছে। বিষয়টা খেয়াল করিনি। মেয়ের মৃত্যু নিয়ে কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগও নেই।
মোহনগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজি রফিকুর রহমান বলেন, দেবজানী খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিল। সে ক্লাশ ক্যাপ্টেন ছিল। তার আচরণও ভালো ছিল। আত্মহত্যা করার মত তেমন কোনো কারণ আমার চোখে পড়েনি। অন্য শিক্ষকদের কাছ থেকেও জেনেছি কিন্ত কেউ তার বিষয়ে অন্য কিছু লক্ষ্য করেনি।
মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতেদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
তিনি বলেন, এমন ঘটনার ক্ষেত্রে হাসপাতাল থেকে মূলত আমাদের জানানো হয়। তবে এই ঘটনায় তারা দেরি করে জানিয়েছে। এদিকে লাশ নিয়ে পাশের ধর্মপাশায় চলে যায় পরিবারের লোকজন। সেখানে সৎকারের চেষ্টা করেছিল। পরে রাতে লাশ উদ্ধার করে সকালে মর্গে পাঠানো হয়।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত