বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক: আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিপাকে পড়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। ইতিমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগ তাকে শোকজও করেছে। ওই আওয়ামী লীগ নেতার এমন মন্তব্য নিয়ে দেশে তোলপাড় শুর হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। ঘটনার পর থেকে তার বহিষ্কারের দাবি তুলেন নিজ দলের নেতাকর্মীরা। এমন ঘটনার পাঁচ দিন পর বুধবার বিকেলে মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক আইডি থেকে ওই পোস্ট ডিলেট করে দিলে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, হাইকমান্ডের চাপের মুখে পড়ে ওই পোস্ট ডিলেট করেছেন তিনি। এ ঘটনায় তাকে বহিষ্কার করা হতে পারে বলেও গুঞ্জন উঠেছে।
গত শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক আইডিতে লিখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেয়া হোক’ ব্রাকেটে তিনি মন্তব্য না করার জন্য অনুরোধও করেন।
মুহূর্তের মধ্যে ওই পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায়। বিএনপি নেতারা তাকে সাধুবাদ জানালেও নিজ দলের নেতাকর্মীদের সমালোচনার মুখে পড়েন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবিও উঠে। এঘটনায় সোমবার (২ অক্টোবর) তিনদিন কার্যদিবসের মধ্যে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা আওয়ামী লীগ।
দলীয় সূত্র জানায়, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোতালেব হাওলাদার স্থানীয় এমপির বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গত উপজেলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়াও তার দলীয় সমর্থনে স্ত্রী রেহেনা মোতালেব উপজেলা মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান ও ছেলে মাহমুদ বগা ইউপি চেয়ারম্যান হন। এসবই এমপির হাতে পেয়েছিলেন। গত দুই বছর আগে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সর্ম্পকে ফাটল ধরে। স্থানীয় এমপি ও সাবেক চীফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজকে কটুক্তি করে ফেসবুকে বিভিন্ন মন্তব্য করতে থাকেন। এছাড়াও বিগত ইউপি নির্বাচন গুলোতে নৌকার প্রার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। এতে দলের অভ্যন্তরে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। উপজেলা সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি করে সাংবাদিক সম্মেলনও করেছিলেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
একটি সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আবদুল মোতালেব হাওলাদারের ষ্ট্যাটাসে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কারন দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে তাকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হতে পারে।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ খান বলেন, এরআগেও একাধিকবার উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আসম ফিরোজকে নিয়ে কুটুক্তিমূলক পোষ্ট দেন মোতালেব হাওলাদার। এছাড়াও বেশ কিছুদিন থেকে দলীয় শৃংখলা বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ড করে আসছিলেন তিনি। এরপর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীরা তার উপর ক্ষুব্ধ। মোতালেব হাওলাদার এখন দলের জন্য বিষফোঁড়া। তাকে বহিস্কার করে আবর্জনা পরিস্কার করতে হবে। অন্যথায় আগামী দিনে মাশুল গুনতে হবে। মোতালেব হাওলাদার এখন বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তাকে দলে রাখা বিপদজনক।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও পটুয়াখালী জেলা পরিষদের সদস্য শাহজাহান সিরাজ বলেন, মোতালেব হাওলাদারকে কোলে পিঠে করে নেতা বানিয়েছেন আমাদের অভিভাবক জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আসম ফিরোজ এমপি। অথচ সেই অভিভাবকের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে দলে সংকট তৈরির চেষ্টা করেছেন তিনি। এখন আবার বিএনপির সঙ্গে আঁতাত করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর অনুরোধ করছেন। এটা কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা যে কোনো ভাবে দল থেকে তাকে বহিস্কার চাই।
অবশ্য খালেদা জিয়াকে নিয়ে নিজের বক্তব্যে অনড় আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল মোতালেব হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, আমি সংগঠন বিরোধী কোনো বক্তব্য দেইনি। মানবিক দিক থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কথা বলেছি। এখন দল যে সিদ্ধান্ত নেবে আমি তার সাথেই একমত। তবে বুধবার তার ফেসবুক পোস্ট তুলে নেয়ার পর তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর বলেন, তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে এ ধরনের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতে পারেন না। তাই তাকে সংগঠনের নিয়মানুযায়ী প্রাথমিক ভাবে শোকজ করা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত