তানজিদ শাহ জালাল ইমন, ববিঃ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক প্রভাব তাদের পড়াশোনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ৫৪.৬০% শিক্ষার্থী মনে জানিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি হিসেবে ছাত্র পরিষদের প্রয়োজন আছে।
গত ১-৫ অক্টোবর অনলাইনে গুগল ফর্মের মাধ্যমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক দিক নিয়ে জরিপ চালায় ‘বরিশাল ইউনিভার্সিটি রিসার্চ এ্যান্ড হায়ার এডুকেশন সোসাইটি’ (বারহেস)। ওই জরিপে শিক্ষার্থীরা এ অভিমত জানায়।
২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ৯ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আবাসন সুবিধা আছে মাত্র দেড় হাজার শিক্ষার্থীর। তা–ও এক শয্যায় দুজন থেকে। বাকিদের বাইরে থাকতে হচ্ছে। শুরু থেকেই পাঠদান কক্ষসংকট তো আছেই। একটি ক্লাসরুমে দুটি বিভাগকে ভাগাভাগি করে পাঠদান করাতে হচ্ছে। এটা তাদের জন্য খুব বিড়ম্বনার।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষকস্বল্পতা,সেইসাথে শিক্ষকদের পাঠদানের সন্তুষ্টি নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। অধ্যাপক আছেন মাত্র একজন, নেই উপ-উপাচার্য, খালি রয়েছে ট্রেজারারের পদও। গ্রন্থাগারে পর্যাপ্ত বই না থাকা, গবেষণাকর্মে সুযোগ স্বল্পতা,পরিবহন স্বল্পতা এবং ছাত্র সংসদ না থাকা সহ নানা সংকটে জর্জরিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
সেই সংকটের বহিঃপ্রকাশ ঘটে বারহেস’র জরিপে।গত জরিপে অংশ নেওয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ ব্যাচের ৫০০ শিক্ষার্থীর কাছে সর্বমোট ২৩ টি প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয়।
জরিপে অংশ নেওয়া ৮৪% শিক্ষার্থী মনে করেন একাডেমিক কোর্সের বিষয়বস্তু তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক, ৫৩.৬০% শিক্ষার্থী তাদের নিজ বিভাগের পাঠদানের মান নিয়ে সন্তুষ্ট রয়েছেন। ৬৪.৬০% শিক্ষার্থীদের মত অনুযায়ী তাদের ক্লাসের বাইরে শিক্ষকদের সঙ্গে যথেষ্ট যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে।
৯৭.৮০% শিক্ষার্থীদের মতে শ্রেণীকক্ষের সংখ্যা এবং ৯৮.২০% শিক্ষার্থীদের মতে আবাসিক হলের সংখ্যা যথেষ্ট নয়।
৯২% শিক্ষার্থীদের মতে ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই পরিষেবা যথেষ্ট নয় এবং ৯৩.৬০% শিক্ষার্থী মনে করেন ক্যাম্পাসে চিকিৎসা সুবিধা শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণ করছে না।
৯৫% শিক্ষার্থী মনে করেন ক্যাম্পাসে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজন রয়েছে।
৭০.৪০% শিক্ষার্থীদের মতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একাডেমিক সাফল্যের জন্য যথেষ্ট সুযোগ প্রদান করছে না এবং ৬১.৪০% শিক্ষার্থী অনান্য সম্ভাব্য শিক্ষার্থীদের কাছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সুপারিশ করবে না।
এ জরিপের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বারহেস’র প্রেসিডেন্ট বলেন, “বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র নিজস্ব গবেষণাভিত্তিক সংগঠন হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনোভাব জরিপের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের কাঁধে এসেই পরে। সেদিক থেকে চিন্তা করে ‘বারহেস’ এই জরিপটি পরিচালনা করে। এই জরিপটি আমরা মূলত শতাংশ এবং ফ্রিকোয়েন্সী আকারে প্রকাশ করেছি। জরিপ পরিচালনায় সকল তথ্য ও উপাত্ত অনলাইন সার্ভের (গুগল ফর্ম) এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই সাথে কাঙ্ক্ষিত তথ্য সংগ্রহের জন্য ২৩ জন এনুমিরেটর নিয়োগ করা হয়েছিল। জরিপে অংশগ্রহণ করা সকল শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত ব্যক্তিগত তথ্য আমরা বিশেষ গোপনীয়তার সাথে সংগ্রহে রেখেছি। এই জরিপের ফাইন্ডিংস এর উপর ভিত্তি করে আমরা একটা একাডেমিক পেপার তৈরী করেছিলাম, যেখানে শিক্ষার্থীদের মনোভাবের উপর ভিত্তি আমরা কিছু সুপারিশ লিখেছিলাম। গত ৬ অক্টোবর মাননীয় ভিসি ম্যামের সাথে দেখা করে আমরা সেই একাডেমিক পেপার তাকে প্রদান করি। তিনি আমাদের এই কাজের জন্য সাদুবাদ জানিয়েছেন।”