কে এই মুরাদ?

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের সঙ্গে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির ফাঁস হওয়া অডিও নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড়। অন্যদিকে বিকৃত, যৌন হয়রানিমূলক ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে নেট দুনিয়া এবং গণমাধ্যমে সম্প্রতি সমালোচনা ও তোপের মুখে পড়েন তিনি। এরপরই তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কে এই মুরাদ? কোথা থেকে উঠে এলেন তিনি? তার পড়াশোনা কোথায়? রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কেমন ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-

ব্যক্তিগত তথ্যাদি:

ডা.মো. মুরাদ হাসান ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলাধীন দৌলতপুর গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম অ্যাড. মতিয়র রহমান তালুকদার, মাতা. মনোয়ারা বেগম। তার পিতা ছিলেন একজন বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও প্রখ্যাত আইনজীবী। তিনি রণাঙ্গনে সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক (জামালপুর-শেরপুর) ও মুজিব নগর সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি ১৯৮৬-২০০৩ মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন। তিনি জামালপুর ‘ল’ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, জাতীয় আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি এবং জামালপুর জেলা বারের ৬ (ছয়) বার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন।

শিক্ষা জীবন:

ডা. মো: মুরাদ হাসান শৈশবে জামালপুর শহরস্থ কিশলয় আদর্শ বিদ্যা নিকেতনে তার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু করেন। অত:পর তিনি ১৯৯০ সালে জামালপুর জেলা স্কুল হতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগ (স্টার মার্ক) পেয়ে এস.এস.সি পাশ করেন এবং ১৯৯২ সালে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে (স্টার মার্ক) পেয়ে এইচ.এস.সি পাশ করেন। তিনি ২০০১ সালে ঐতিহ্যবাহী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হতে কৃতিত্বের সাথে MBBS পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০০৪-২০০৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ‘Plastic & Reconstructive Surgery’র ওপর Post Graduation Training (PGT) সম্পন্ন করেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হতে ২০১১ সালে Radiation Oncology’র ওপর এম. ফিল ডিগ্রি অর্জন করেন।

রাজনৈতিক জীবন:

তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার ‘কার্যকরী সদস্য’ ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার ‘সাংগঠনিক সম্পাদক’, ২০০০ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার ‘সভাপতি’, ২০০৩ সালে ৫ম কংগ্রেস এ বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ‘কার্যকরী সদস্য’ নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জামালপুর জেলা শাখার ‘কার্যকরী সদস্য’, ২০১৪ সালে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের ‘কার্যকরী সদস্য’, ২০১৫ সালে জামালপুর জেলার ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক’ নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও, ২০১৭ সালে তিনি ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির ‘কার্যকরী সদস্য’ নির্বাচিত হয়ে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছেন।

সংসদ সদস্য:

তিনি ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে ১৪১, জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) সংসদীয় আসন থেকে বিপুল ভোটে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে মহান জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দেশ সফর করেন। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪১, জামালপুর-৪ সংসদীয় আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে ২য় বারের মতো সংসদ সদস্য হন। তিনি ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তারপর ১৯ মে ২০১৯ খ্রি. তারিখ থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

অন্যান্য সম্পৃক্ততা:

তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর আজীবন সদস্য। এ ছাড়া, তিনি জাতীয় ও সামাজিক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিয়মিত আলোচক হিসাবে টেলিভিশনে টকশো, বিভিন্ন সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তাছাড়া, তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকায় ২০০১ সাল থেকে লক্ষাধিক দু:স্থ ও অসুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছেন।

পারিবারিক জীবন:

ব্যক্তিগত জীবনে ডা: মো: মুরাদ হাসান এক কন্যা ও এক পুত্রসন্তানের জনক। তার স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসানও পেশায় একজন ডাক্তার।