সংবিধান লঙ্ঘন, সংবিধানের মূলনীতি বাতিল, মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতাবিরোধী লোকজনকে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের অভিযোগ এনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পাওয়া ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিল করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সুপারিশ করেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)।
এর ফলে জিয়াউর রহমানসহ এই পাঁচজন এবং তাদের পরিবার মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।
মঙ্গলবার জামুকার ৭২তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়া আত্মস্বীকৃত চার খুনির খেতাব বাতিলের বিষয়টি জামুকার গতকালের সভায় উত্থাপন করা হয়। সভায় জামুকার সদস্য ও সাংসদ শাজাহান খান প্রশ্ন তোলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের খেতাব বাতিল করা হলে কেন জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করা হবে না। তিনি তার এই বক্তব্যের সপক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। পরে জামুকার সভার সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীসহ অন্য সদস্যরা শাজাহান খানের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মদদ দিয়েছে, তারা স্বাভাবিকভাবেই অপরাধী। এই অপরাধীরা কোনো সম্মানজনক পদ, পুরস্কার বা খেতাব পেতে পারে না। সে জন্যই জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
জিয়াউর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা সনদও কি বাতিল হবে জানতে চাইলে শাজাহান খান প্রথম আলোকে বলেন, শুধু খেতাবটাই আপাতত বাতিল হচ্ছে। বাকি স্বাধীনতা পদক, মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের বিষয়ে আইনগত দিকগুলো দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবমাননাকর বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, কেউ মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান অস্বীকার করবে, এটা আমরা ভাবতেও পারি না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, তিনি সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি বাংলাদেশের জনগণের কাছে অতি জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার এই অবদান কেউ অস্বীকার করবে, এটা আমরা ভাবতেও পারি না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে বিএনপি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে। প্রতিবাদ কর্মসূচিও দেওয়া হবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘যারা জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করেন কি না, আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।’