করোনা: হোম কোয়ারেন্টাইনে মিজানুর রহমান আজহারী

13

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে ইসলামী চিন্তাবিদ ও বিশিষ্ট বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী হোম কোয়ারেন্টাইনে অর্থাৎ নিজ থেকে বাসায় অবস্থান করছেন। গত ৮ দিনে তিনি একবারের জন্যও বাসার বাইরে বের হননি বলে জানিয়েছেন। এসময় সব নামাজ তিনি বাসায় আদায় করেছেন বলেও জানান।

ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ তথ্য জানান।

‘এখনই সচেতন না হলে সামনে ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে’ শিরোনামে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসে তিনি বলেন: ‘‘পুরো দেশ খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে লকডাউনে চলে যাওয়া উচিত। গভার্নমেন্টকে এখন হার্ড লাইনে যেতে হবে। জনগণ কথা শুনবে না। এটাই স্বাভাবিক। তাই ল ইনফোর্সমেন্টের মাধ্যমেই পরিস্স্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

পুরো দেশ লকডাউনে চলে গেলে দিন আনে দিন খায় এরকম খেটে খাওয়া মানুষদের জীবিকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে সমাজের বিত্তশালী লোকজন, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সরকারকে এক যোগে কাজ করতে হবে।

এদেশের একটা অঘোষিত নিয়ম হলো: প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিশেষ আদেশ না আসলে দেশের হর্তাকর্তারা নড়েচড়ে উঠেন না। এটা একটা বড় সমস্যা। করোনা মহামারিকে ডেঙ্গুর মত মনে করলে অথবা আমরা করোনার চেয়ে অনেক শক্তিশালী এরকম দায়িত্বজ্ঞাণহীন মন্তব্যের ফুলঝুড়ি চলতে থাকলে পুরো জাতির কপালে মহাদুর্গতি আছে।

আমরা প্রায় তিন মাসের মত একটা লম্বা সময় পেয়েছি। এ দীর্ঘ সময়ে অন্যান্য আক্রান্ত দেশগুলো থেকে যদি আমরা শিক্ষা না নেই এবং সংকট উত্তরণে তাদের অভিজ্ঞতা যদি কাজে না লাগাই তাহলে আল্লাহ নিজে এসে কিছু করে দিয়ে যাবেন না। এটাই আল্লাহর নিয়ম বা সুন্নাহ। বাঁচতে হলে আমাদেরকেই সাবধানে থাকতে হবে। কুরআন বলছে: আল্লাহ তায়ালা ততক্ষণ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন ঘটান না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা তাদের অবস্থার পরিবর্তনের চেষ্টা করে। (সূরা আল রা’দ, আয়াত: ১১)

আমি ব্যাক্তিগতভাবে গত আটদিন যাবত স্বেচ্ছায় পুরোপুরি ভাবে বাসায় অবস্থান করছি। এর মধ্যে একবারের জন্যেও বাইরে বের হইনি। সব সালাত ঘরে জামাতে আদায় করেছি। বর্তমান সময়ে এর চেয়ে ভালো কাজ আর হতে পারে না। তাই সবাইকে বলছি, প্লিজ প্লিজ সবাই ঘরে থাকুন। এটাই এখন সবচেয়ে বড় মহৌষধ।

আতংকিত না হয়ে সাবধানতা অবলম্বন করুন। সরকারের একার পক্ষে এই মহামারি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। সবার ঐকান্তিক সদিচ্ছা ও সহযোগিতা দরকার। জরুরী বাজার সদাই কিনে এনে যথাসম্ভব পরিবারের সদস্যসহ নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করুন। সামাজিক মেলামেশা, জনসমাগম পরিহার করুন। ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও হাঁচি ও কাশি দেয়ার শুদ্ধাচার মেনে চলুন। জরুরী প্রয়োজনে ঘরের বাইরে গেলে, ফিরে এসেই ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। এ নিয়ম গুলো মেনে চলাই হচ্ছে এখন ফরজে আইন। এ ভাইরাসে বৃদ্ধ জনগোষ্ঠির আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশী তাই তাদেরকে এক্সট্রা কেয়ার দিন।

সবচেয়ে বেশী যেটা দরকার তা হল সেল্ফ আইসোলেশন। বিশেষ করে বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের বুঝিয়ে অথবা সামাজিক ভাবে চাপ প্রয়োগ করে হলেও ওনাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা। কোয়ারেন্টিন মানে হচ্ছে সবার থেকে আলাদা হয়ে থাকা এবং কারো সংস্পর্শে না আসা। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে যে, দেশে এসে উনারা দিব্যি মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কেউ কেউ শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছেন এবং অনেকে বিয়ের দাওয়াতেও অংশগ্রহণ করছেন।

দেশে অবস্থানরত প্রিয় প্রবাসী ভাইয়েরা, আপনারা দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আপনাদের পরিশ্রমের টাকায় সচল থাকে আমার দেশের অর্থনীতির চাকা। এত কিছু করার পরেও সঠিক সময়ে সঠিক রেসপন্সটুকু করতে ব্যর্থ হচ্ছেন আপনারা। আল্লাহর ওয়াস্তে সদ্য বিদেশ ফেরত ভাইবোনেরা বাসায় থাকুন। মানুষের সাথে মেশা থেকে বিরত থাকুন। নিজে বাঁচুন, প্রিয়জনদেরকে বাঁচান। পূর্ব থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করা, এটা আল্লাহর আদেশ। এআদেশ স্বেচ্ছায় অমান্য করে আল্লাহর কাছে দোয়া করে কোন লাভ নেই। কুরআন বলছে:
“হে ইমানদারগণ তোমরা আগে থেকেই সাবধানতা ও সতর্কতা অবলম্বন করো”।
[সূরা নিসা, আয়াত: ৭১]

ঘরে আবদ্ধ থাকা দিনগুলো কিভাবে কাটাবেন? কিছু পরামর্শ এখানে শেয়ার করলাম।

১- সময়কে ভালো কাজে বিনিয়োগ করুন।

২- পারিবারিক একাত্মতা বাড়ান।

৩- স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদেরকে একান্ত সময় দিন।

৪- ঘরের কাজে স্ত্রীকে সহায়তা করুন।

৫- ঘরের সবাই মিলে একসাথে জামাতে সালাত আদায় করুন।

৬- সবাই মিলে কুরআনের কিছু সূরা মুখস্ত করুন।

৭- কমপক্ষে একটি ভালো নতুন বই পড়ুন।

৮- কিছু সময় ঘরে বসে যোগ ব্যায়াম করুন।

৯- ফোনে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকলের খোঁজ খবর নিন।

১০- বেশী বেশী তাওবা ইস্তিগফার পড়ুন।

চায়না, ইটালী ও স্পেনের মত উন্নত বিশ্বের দেশগুলো যখন করোনা সামলাতে কুপোকাৎ, ঠিক তখন বাংলাদেশের কথা চিন্তা করলে ভয়ে বুকটা কেপেঁ উঠে। স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট নেই। হাসপাতাল গুলোতে করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেকে মারা যাচ্ছে। পর্যাপ্ত টেস্টিং কিট না থাকায় টেস্ট করার সুযোগ মিলছে না। আইইডিসিআর এর ম্যানপাওয়ার সংকট।

গতকাল করোনায় মারা যাওয়া রুগিকে যে চিকিৎসক চেক আপ করেছিলেন গণস্বাস্থ্য ৮ম ব্যাচের ডেল্টা হসপিটালে কর্তব্যরত ডা: পলাশ এখন করোনায় আক্রান্ত। এই হল বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার মান। তারপরও দেশকে সিংগাপুর বা কানাডার সাথে তুলনা করতে লজ্জা পাচ্ছেন না আমাদের নেতারা। কে নেবে এর দায়ভার? এর শেষ কোথায়?

চিকিৎসক যদি আক্রান্ত হন তাহলে বিষয়টা কতটা এলার্মিং ভাবতে পারেন? উনি এরমধ্যে যত রোগি দেখেছেন, যত প্রেসক্রিপশন লিখেছেন, সেই প্রেসক্রিপশন নিয়ে যত ফার্মেসিতে রোগীরা গিয়েছেন সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে এপ্রাণঘাতী ভাইরাস।

তাই সময় থাকতে সাবধান হোন। তা না হলে জ্যামিতিক হারে বাড়তে বাড়তে এমহামারি এমন অবস্থায় পৌছুবো তখন লাশের মিছিল যে কত লম্বা হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।

আবারো বলছি, প্লীজ ঘরে থাকুন। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হবেন না।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে এই কঠিন বিপদ থেকে হেফাজত করুক। আমিন।

Be safe for you, your next generation & your Nation.’’