করোনায় মাস্ক, গ্লাভস কিনছেন? থামুন, একবার ভাবুন

16

করোনাভাইরাস মহামারী বিশ্বব্যাপী যখন তার প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছিল, তখন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ভাইরাস ঠেকাতে কঠোর হয়নি। ফলশ্রুতিতে দুই মাসেরও বেশি অঘোষিত লকডাউন ছিল দেশে। তবে এখনও কার্যকর লকডাউন বলতে যা বুঝায় তা কখনও ছিল না। যাহোক আজকের মূল আলোচনার বিষয় সেটা না।

গত ৮ মার্চ যখন দেশে ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হলো, তখন থেকেই মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ নিরাপত্তা সামগ্রীর ব্যাপক সংকট দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে দাম বাড়ে হু হু করে। অসাধু ব্যবসায়ীরা নিলো এই সুযোগ। এসময় ফুটপাতেও বিক্রি হতে থাকে মাস্ক সহ এসব সামগ্রী। এর মান নিয়ে তখন থেকেই প্রশ্ন ছিল। এর বাইরে মানসম্মত সামগ্রী যে ছিল না, তা নয়। ছিল।

আরও অবাক করার হলো- এসব সামগ্রী দেশে তৈরি এবং দেশের বাইরে থেকেও আনা হলো। এখনও আনা হচ্ছে। এমন অনেকের কথা সংবাদ মাধ্যমে আসলো, যারা মাস্ক গ্লাভস চায়না থেকে এনেছেন, তবে এর মান দেখার জন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে হয়নি। তেমন একজনের কথায়, ‘মাস্ক বিক্রি ও এর মান নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাকে কোথাও থেকে কোন অনুমোদন নিতে হয়নি। আমার কোন বাড়তি অনুমোদন নেই। আমি কোন অনুমতি নেইনি। আমরা যার কাছ থেকে এগুলো নেই উনিই এইগুলো মেইনটেইন করেন।’

এমনকি মাস্কের চাহিদা বাড়ায় লাঠিতে ঝুলিয়ে অথবা পলিথিনের ব্যাগে করে রাস্তায় ঘুরে ঘুরেও বিক্রি করা হচ্ছে মাস্ক ও গ্লাভস। দেশেই তৈরি হচ্ছে পিপিই। এসব সামগ্রীর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যারা এসব বিক্রি করছেন তারা নিজেরাও সচেতন নন। তাদের হাত থেকে এবং চারপাশ থেকে জীবাণু এসে মিশতে পারে এসব সামগ্রীতে। আরও ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে, আমরা যেসব মাস্ক, গ্লাভস ও পিপিই পরা শেষে ফেলে দেই সেসব সামগ্রী সংগ্রহ করে কিছুটা রিসাইকেল করে বিক্রি হয় অনেক সময়। এগুলোর ব্যবহারও ভয়ঙ্কর। কিন্তু দেখে এসব বুঝার উপায় নেই। পত্রিকায় একটা ছবিতে দেখা গেল, কিছু লোক একটা হাসপাতালের বাইরে আবর্জনা থেকে পিপিই সংগ্রহ করছে। এখন ব্যবহৃত জিনিস আবার রিসাইকেল করে বিক্রি করা হচ্ছে কিনা তা নজরদারি করছে না কেউ!

এর আগে একবার কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য নকল এন-৯৫ মাস্ক আমদানির অভিযোগ উঠেছিল। এখন আমদানিকৃত সুরক্ষা সামগ্রীর কিছুটা পরীক্ষা হচ্ছে। সেটাও সরকারি পর্যায়ে। কিন্তু সব পর্যায়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ পয়সা দিয়ে জিনিসটা কিনে মনে করছে ভালোটাই কিনেছে। কিন্তু এটা নকল কিনা সেটা তারা কিভাবে বুঝবে? যে পরবে সে মনে করবে যে সে নিরাপদ। এসব সামগ্রী মানুষের মধ্যে এক ধরনের নিরাপদ বোধ করার অনুভূতি তৈরি করে, কিন্তু আসলে সে কতটা নিরাপদ?

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসব কে দেখবে? অবশ্যই সরকারের দায়িত্বশীল বিভিন্ন সংস্থাকেই এসব দেখতে হবে। কঠোরভাবে এসব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবে আমাদের কি কোনো দায় নেই? আছে। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমরা যেহেতু বাড়তি টাকা খরচ করে এসব কিনবো, তাই নিজের বিবেককে এখানে কাজে লাগাতে হবে। কোন সামগ্রী কোথায় কিভাবে বিক্রি হচ্ছে, সেটা কতটুকু নিরাপদ; তা বিবেচনায় রাখতে হবে। এজন্য ভালো মানের ফার্মেসি থেকে কেনা যেতে পারে এসব সামগ্রী। তবে না কিনে পারলে আরও ভালো।

এ কথা কেন বললাম? না কেনার কথা বলায় আপনার প্রশ্ন থাকতেই পারে। এর জবাব হলো- আমরা সবাই একসঙ্গে সামগ্রীগুলো কেনায় বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। এটাকেই সুযোগ হিসেবে নিয়েছে সুযোগ সন্ধানীরা। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্রিফিংয়ে এখন প্রতিনিয়ত বলা হচ্ছে, সার্জিক্যাল মাস্কের বদলে ঘরে তৈরি কাপড়ের মাস্ক পরা যাবে। এভাবে ইচ্ছে করলে গ্লাভসও তৈরি করা যায় ঘরে। এমনটা করলে তখন আর বেশি চাহিদা থাকবে না। আর চাহিদা না থাকলে খোলা জায়গায় অনিরাপদভাবে বেচাকেনাসহ নিরাপত্তা সামগ্রী ও মানুষের জীবন নিয়ে সব ধরনের দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হবে। এখন সিদ্ধান্ত আপনার। আপনিই ভাবুন, কী করবেন?