একসময় ঠিকাদারী নিয়ে খুনখারাবি নিত্যদিনের বিষয় ছিল। তবে এখন সেসব ঘটনা অনেকটাই কমে এসেছে। তাই বলে ঠিকাদারী নিয়ে দ্বন্দ্ব একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। এ বিষয়টি মনে করিয়ে দিল কুষ্টিয়ার দুর্বৃত্তরা। কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্যে এক ঠিকাদারকে হাতুড়িপেটা করা হয়েছে।
এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার ঘটে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে, শহরের এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) কার্যালয়ের সামনে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে।
হাতুড়িপেটার শিকার ঠিকাদারের নাম শহিদুর রহমান ওরফে মিন্টু। তার বাড়ি জেলার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের শানপুকুরিয়া গ্রামে। এক আওয়ামী লীগ নেতার ইন্ধনে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে সংবাদ মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন শহিদুর। হামলাকারীদের ভয়ে হাসপাতালে ভর্তি কিংবা থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে পারছেন না বলে তিনি দাবি করেছেন।
শহিদুর রহমান বলেন, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি শহরে এলজিইডি কার্যালয়ে কাজে যান। কাজ শেষে বের হলে কার্যালয়ের সামনে হঠাৎ করে ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তি হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘিরে ধরে। তাদের বেশির ভাগের হাতে হাতুড়ি ছিল। তারা দুই পায়ের হাঁটুতে হাতুড়ি দিয়ে বেদম পেটাতে শুরু করে। এরপর জীবন বাঁচতে তিনি দৌড় দেন। তারপরও তারা তাড়া করে পেটাতে থাকে শরীরের নানা স্থানে। সড়কসহ আশপাশে লোকজন থাকলেও তারা ভয়ে কেউ এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি।
তিনি বলেন, আমার হাঁটু থেঁতলে গেছে। পিঠে ও বুকেও লেগেছে। হাতেও হাতুড়িপেটা। শহরের বাসায় নিরাপদবোধ না করায় লুকিয়ে আছি। থানা ও হাসপাতালে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না।
স্থানীয় লোকজনের ধারণ করা ৩৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, শহিদুরকে ঘিরে ধরে হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে কয়েকজন। তিনি দুই হাত দিয়ে আঘাত ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তারপরও তার ওপর হামলা করা হচ্ছে। একপর্যায়ে তিনি দৌড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় দুজন তার পিছু নেন। তাদের একজনের পরনে লুঙ্গি ছিল। তার বাড়ি মজমপুর সাদ্দামবাজার এলাকায় বলে জানা গেছে। আরেকজন প্যান্ট ও শার্ট পরা ছিলেন। তার মুখে মাস্ক ছিল।
শহিদুর রহমানের ভাষ্য, তিনি প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। দুই মাস আগে মিরপুর উপজেলায় একটি সড়কের সাত কোটি টাকার দরপত্রে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ওই দরপত্রে অংশ নেওয়ার আগে থেকে এ কাজে শিলিউল ক্রয় না করতে কয়েকজন নেতা হুমকি দেন। পরে তিনি কাজটি না পেলেও দরপত্রে অংশ নেওয়ার কারণে তাঁকে ফোনে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে আসছিলেন ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন নেতা।
শহিদুর অভিযোগ করেন, যারা হামলায় অংশ নেন তারা মজমপুর এলাকার। স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার ক্যাডার। বেশির ভাগের মুখে মাস্ক পরা ছিল। যুবলীগ নেতাসহ ক্যাডাররা মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিনের লোক। কামারুলই তাকে হুমকি দিয়ে আসছিল।
শহিদুর বলেন, ‘তারা আমার লাইফ (জীবন) শেষ করে দিয়েছে। দুই হাঁটুতে বেদম মেরেছে। মামলা করব কাদের নামে। এরা দেশ চালায়। মামলা করে টিকে থাকতে পারব না। আর পুলিশ তাদের কেনা। আমি মামলা করলেও কোনো লাভ হবে না।’
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন বলেন, ‘দরপত্রে বাধা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ওই দরপত্রে ৬ থেকে ৭ জন অংশ নেয়। অভিযোগকারী ঠিকাদার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে সোয়া ৩ শতাংশ কমে দরপত্র জমা দেয়। এর চেয়ে আরও কমে আরেক ঠিকাদার কার্যাদেশ পায়। এ ছাড়া আমার বাড়ি মিরপুর উপেজলার সদরপুর গ্রামে। ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর এলাকায়। সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম বলছে। যত দূর জানি, ওই ঠিকাদারের সঙ্গে অনেক ঠিকাদারের টাকা নিয়ে বিরোধ আছে।’
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম বলেন, ‘এমন হামলার কথা আমার কানে আসেনি। হামলা বা মারপিটের বিষয়ে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত