এআই ঘোষণাপত্রে সই করতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অস্বীকৃতি

বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যখন বিতর্ক তুঙ্গে, ঠিক তখনই ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত হলো উচ্চপর্যায়ের ‘এআই অ্যাকশন সামিট’। এই সম্মেলনে বিশ্বনেতারা এআই-এর ভবিষ্যৎ, নীতিনির্ধারণ এবং এর সুষ্ঠু ব্যবহারের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ স্পষ্টতই জানিয়েছেন, তার দেশ ও ইউরোপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চায়।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ‘ড্রিল, বেবি ড্রিল’ পদ্ধতির মতো আচরণ করব না। বরং আমরা পরিবেশবান্ধব শক্তি ব্যবহার করব, যা ইউরোপের এআই খাতের জন্য ‘প্লাগ, বেবি প্লাগ’ নীতিতে রূপ নেবে।’

সামিটে আলোচিত ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই এআই ঘোষণাপত্রে’ সই করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তবে ফ্রান্স, চীন, ভারতসহ ৬০টি দেশ এতে স্বাক্ষর করেছে।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এআই-এর ওপর অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপের বিরোধিতা করে বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণ বেশি হলে প্রযুক্তির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।’

অন্যদিকে, ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, তারা এআই-এর ওপর বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণের কিছু অংশের সঙ্গে একমত নয় এবং জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

মঙ্গলবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন নতুন এআই কৌশল ঘোষণা করেন। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক বাজারকে আরও গভীর করা, কম্পিউটিং সক্ষমতায় বিনিয়োগ এবং এআই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সহজ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে যৌথভাবে এআই উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ইউরোপে তৈরি এআই আরও শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতামূলক হোক।’

এআই নীতির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ বাণিজ্য সম্পর্কও উত্তেজনার কেন্দ্রে চলে আসে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর নতুন শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন, যা ইউরোপীয় অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাজ্য এখন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার কৌশল নিচ্ছে।

প্যারিসে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন প্রমাণ করেছে, এআই প্রযুক্তির বিকাশ ও নিয়ন্ত্রণ এখন শুধু প্রযুক্তিগত নয়, বরং একটি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে। ইউরোপ একটি সুসংগঠিত এআই নীতির দিকে এগোচ্ছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য আরও শিথিল নীতি গ্রহণ করছে।