করোনা ভাইরাস নিয়ে চীন কতোটা বিপাকে রয়েছে তা নতুন করে বলার কিছু নেই। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৭শ’ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, চীনে বিয়ে, জন্মদিনের অনুষ্ঠানসহ সবধরনের ভোজ-উৎসব নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন।
চীনা গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দেশটির হুবেই প্রদেশে লোকজনের বাইরে বের হওয়া নিরুৎসাহিত করতে বহুতল ভবনগুলোর লিফট বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এই প্রদেশেই করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহান অবস্থিত।
করোনা ভাইরাস শুধু চীনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের বাইরে হংকংয়ে একজন ও ফিলিপিন্সে একজন মারা গেছেন করোনায়। চীনে করোনা ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিকের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে দেশটিতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস। চীনের উহান শহরের জিনয়িনতিয়ান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু হয় বলে স্থানীয় সময় শনিবার ভোরে জানানো হয়েছে।
ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশও করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে। চীনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানাবিধ যোগাযোগের কারণে এমন ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া উহান থেকে ৩১২ জনকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন হজ ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। তাদের কারও শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে যদিও জানানো হয়েছে, তবুও ঝুঁকির বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না।
এরই মধ্যে শনিবার রংপুর থেকে এক শঙ্কার খবর এসেছে। চীন ফেরত এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জ্বর নিয়ে রংপুর মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছেন। তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আইসোলেশন হচ্ছে কোনো ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে কোনো বিশেষ জায়গায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রাখার পদ্ধতি। আর ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সন্দেহভাজনদের বিশেষ জায়গায় রাখার নাম হচ্ছে কোয়ারেন্টাইন।
করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ভয়ঙ্কর পদ্ধতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যেমন: চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ, চীনে যাওয়া পাইলটদের ভিসা না দেওয়া, সম্প্রতি চীন থেকে ঘুরে আসা ব্যক্তিদের কোনো দেশে ঢুকতে না দেওয়া ইত্যাদি। এমনকি খোদ চীনেও গণপরিবহন বন্ধসহ লক ডাউন চলছে। অর্থাৎ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার করার জন্যও বাইরে যাওয়া বন্ধ রয়েছে খোদ চীনে।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার অন্যতম। বিশেষ করে চীন থেকে আসা যাত্রীদের এই স্ক্যানারের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে নানা অবহেলার কথাও আসছে সোশ্যাল মিডিয়া এবং গণমাধ্যমে।
করোনা ভাইরাস যেভাবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে তাতে বাংলাদেশেরও শঙ্কা রয়েছে। এটা একবার শনাক্ত হলে গণহারে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগবে না। রাজধানীতে গণপরিবহনের পাশাপাশি উবার-পাঠাওসহ রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে এটা গণহারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। একে তো হেলমেট নামক আবর্জনা রয়েছেই, সেক্ষেত্রে মানসম্মত হেলমেটের মাধ্যমেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো মানুষ হেলমেট ব্যবহার করার পর যে বা যারা ওই হেলমেট ব্যবহার করবে তাদের সবারই ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জনস্বাস্থ্যের হুমকি বিবেচনায় বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে।
এক্ষেত্রে গণহারে যে হেলমেট ব্যবহার না করে যাত্রীরা নিজেদের ব্যক্তিগত হেলমেট ব্যবহার করলে ঝুঁকির আশঙ্কা কম থাকে। অথবা গণ হেলমেট ব্যবহার করলেও মাথা-নাক-মুখ-কান ইত্যাদি ভালোভাবে ঢেকে এরপর ব্যবহার করা যায়। তবে যাত্রীর নিজস্ব হেলমেট ব্যবহারই সবচেয়ে নিরাপদ। বাইক না থাকলেও হেলমেট নিয়ে ঘুরলে প্রথম দিকে তীর্যক মন্তব্য শুনলেও পরবর্তীতে তা ঠিক হয়ে যাবে বলেই বিশ্বাস। এছাড়া জীবনই যদি হুমকির মধ্যে থাকে তাহলে সামনে-পেছনের মন্তব্যে কী আসে যায়?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। প্রিয়দেশ নিউজের সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত