রকিবুজ্জামান, মাদারীপুর:
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সন্দীপন মজুমদার উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনের পক্ষে ফেসবুকে বিতর্কিত স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরে অবশ্য তিনি দুঃখপ্রকাশ করে আরেকটি পোস্ট দিয়েছেন। তবে উগ্রবাদী সংগঠনের পক্ষে লেখালেখি করায় তাকে চাকরিচ্যুত করাসহ দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন জেলার সাধারণ মানুষ।
গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাতে ফেসবুকে মৎস্য কর্মকর্তা সন্দীপন মজুমদার ইসকন এর পক্ষে পোস্ট দেন। ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গি সংগঠন হলেও ইসকন নিম্নোক্ত কাজগুলো করে (আর্ত মানবতার মহান সেবায় ব্রতী হয়ে) কেন? ১) রোজায় রোজাদারদের ইফতারি দেয় ২) ঈদে গরীবদের নতুন কাপড় চোপড় দেয় ৩) বন্যায় বন্যা দুর্গতদের সহায়তাও দেয়।এরপরেও যদি নিষিদ্ধ করা লাগে, করেন। আপনাদের যা ভালো লাগে করে যান। জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন নিষিদ্ধ করেই, আগের মতো কারো পতন না হয়ে যায়, আবার।
চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও তিনি ইসকন এর পক্ষ নিয়েছেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি ওই আইনজীবীকে ছাত্রলীগের নেতা বলে সম্বোধন করেন। বলেন, ‘ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আইনজীবী সাইফুলকে হত্যা করে এক ঢিলে দুই পাখি মারার ম্যাটিকুলাস ডিজাইন হিসাবে হিন্দুদের উপর চালিয়ে দেবার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে সিসিটিভি ফুটেজ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার কারণে। সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী ৪ জন শিবির ও ১ জন সমন্বয়ক গ্রেফতার হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই, সিআইএ সহ আমেরিকার সব গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড ইসকন সদস্য, তাদের ভাই সমতুল্য চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে অ্যারেস্ট করে খুব সুবিধা করতে পারবে না।’
ওই স্ট্যাটাসে তিনি বেশকিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে ট্যাগও করেন। একজন সরকারি কর্মকর্তার জায়গায় থেকে করা এমন স্ট্যাটাসকে সরকারি চাকরির আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়ে তাকে সর্তক করাসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন বলে জানান।
এমন প্রেক্ষাপটে সমালোচিত মৎস্য কর্মকর্তা সন্দীপন মজুমদার পরদিন ফেসবুকে দেওয়া বিতর্কিত ওই স্ট্যাটাসটি কেটে দেন। নতুন করে ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘গত পরশুদিন রাতে ইসকনের কাজকর্ম, এটাকে নিষিদ্ধ করা ও এটাকে কে কী করবে এসব নিয়ে যে পোষ্টটি করেছিলাম তা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে প্রকাশিত হয়ে গেছে। এতে যদি কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে তা আমার ইচ্ছাকৃত নয়। এটা আমার ভুলে ও অনিচ্ছায় হয়েছে। আমি এজন্য ক্ষমাপ্রার্থী ও সকলের কাছে মাফ চাচ্ছি। আর উক্ত পোস্টটি ডিলিট করেও দিয়েছি।’
তবে জেলার সংক্ষুব্ধ মানুষ বলছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের বিধি অনুযায়ী আচরণ করতে হয়। এর ব্যত্যয় ঘটানোর কারণে শুধু ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে তিনি আচরণবিধি লংঘনের দায় এড়াতে পারেন না।
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, বিষয়টি আমার নজরে আসলে আমি তাকে ডেকে আনি। এসময় তিনি আমার সামনে স্ট্যাটাসটি কেটে নতুন করে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। যেহেতু তিনি মৎস্য অধিদপ্তরের অধীনে, তাই আমি তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।