তানজিদ শাহ জালাল ইমন
ইতিবাচক রাজনীতি বাস্তবায়নের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশীদারত্ব প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির৷
আজ মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বরিশালে সাংগঠনিক সফরকালে বরিশালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করে তিনি এ মন্তব্য করেন৷ তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী যারা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চায় না তাদের সঙ্গে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন৷ এসময় ছাত্ররাজনীতি না চাওয়ার বিষয়ে মতামত নিয়ে তিনি ছাত্ররাজনীতির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় উল্লেখ করে বক্তব্য তুলে ধরেন।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করলে পরাজিত ফ্যাসিস্টরা সুযোগ পাবে এবং তারা পুনরায় ক্ষমতায় চলে আসার পায়তারা চালাবে। যারা (হাসিনা সরকার) এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং দেশের মালিকানা বিক্রি করার পায়তারা করেছে তারাই মূলত রাজনীতি বন্ধের কথা বলে সুযোগ নিতে চায়। এরা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ভূলুণ্ঠিত করেছে।সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারের কোন ন্যায্যতা তারা (ফ্যাসিস্ট সরকার) দেয়নি।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ একটি অগণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী বলে মনে করছি।উপযোগী ও ইতিবাচক ছাত্র রাজনীতি বিনির্মানের জন্য আমরা বিভিন্ন মহলের সাথে কথা বলছি।আমরা ওপেন ডায়ালগের মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসমাজের সাথে কথা বলতে চাই।যেকেউ এটি আয়োজন করতে পারে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত অপ্রাসঙ্গিক।এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি।
নির্দেশনামূলক যৌথ কর্মীসভায় গতকাল বরিশালের শিল্পকলা একাডেমিতে সাংগঠনিক কাজে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ১লা অক্টোবর দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্র রাজনীতি বিষয়ক মতামত জানতে এসে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা জানান।এরআগে তিনি বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ,হাতেম আলী কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যান।ছাত্র রাজনীতি চাওয়া, না চাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত ও তাদের সাথে কথা বলেন এই সম্পাদক।
সম্পাদক নাছির বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিয়ে আমরা তৃণমূল সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলছি।তাদের সাথে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা করতে এসেছি।ছাত্ররা কেন ছাত্র রাজনীতি চায়না বা রাজনীতি সংস্কার যদি চায় তাহলে তাদের কি মতামত থাকবে। এসব বিষয় জানতেই আমরা সাংগঠনিক সফরে এসেছি।৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের স্মরণ করে ইতিবাচক রাজনীতির শুভ সুচনা করতে চাই।ক্রিয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠন ও ছাত্রসমাজের যে সংস্কারমূলক ও উপযোগী রাজনীতির দাবি উঠেছে তা আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।ইতিবাচক রাজনীতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্তে যেন অংশিদারিত্ব থাকে,সে বিষয়ে আমরা আলাপ আলোচনা করছি।বিগত ১৬/১৭ বছর ধরে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রলীগের যে লেজুড়বৃত্তিক ও দখল দারিত্বের রাজনীতি করেছে,তার বিপরীতে আমরা একটি শিক্ষার্থীবান্ধব ইতিবাচক রাজনীতি করতে চাই।মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা,জোর করে মিছিলে নিয়ে যাওয়া,ধর্ষণ,ছিনতাই, রাহাজানি থেকে শুরু করে যেসব অপকর্মের কাজগুলো হয়েছে তা ছাত্রসমাজ প্রত্যাখান করেছে।ছাত্রদল কিভাবে ইতিবাচক রাজনীতি করতে পারে সেজন্য শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ আলোচনা করছি।শিক্ষার্থীরাই আমাদের ইতিবাচক রাজনীতি করার একটি রুপরেখা দিবে।সে ধরণের রাজনীতিই ছাত্রদল করবে।সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী হয়েছে।কারণ, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা,স্বৈরাচার এরশাদ পতন ও সর্বশেষ ২৪ এর ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ছাত্র সমাজ নেতৃত্ব দিয়েছিলো।যদি ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতেই হয় তাহলে দেশের সব রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে।তারআগে কোনভাবেই রাজনীতি বন্ধ করা সম্ভব না। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশিদারিত্ব থাকুক আমরা চাই।বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা এটি সামগ্রিক সিদ্ধান্ত হতে পারেনা।বরং এটি অপ্রাসঙ্গিক সিদ্ধান্ত।এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি।যেকোন শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল পাশে থাকবে।
ছাত্ররাজনীতি নিয়ে মতামত দেন শিক্ষার্থীরা।তারা জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে যাওয়ার কারন আওয়ামীলীগ সরকারের ১৫-১৬ বছরের রাজত্বের কথা টেনে আনেন। কোটা আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভয়ঙ্কর রুপ দেখেছি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ছাত্রলীগ দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, নির্যাতন করেছে। এতেই মুলত সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজনীতির প্রতি বিমুখ হয়ে গেছে।এজন্যই ছাত্ররাজনীতি এক আতঙ্কের নামে পরিণত হয়েছে।এসময় অনেকে ছাত্ররাজনীতি সংস্কারের উপর মতামত দেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন ববির সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। গত ১১ আগস্ট ২০২৪ তারিখে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৮৫ তম বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।