আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রত্যেক ভালো কাজের প্রতিদান দেন। কাউকে দুনিয়ায় দেওয়া হয়। কেউ আখেরাতে পাবে। কেউ আখেরাতে ও দুনিয়ায় একসঙ্গে পায়। আবার কারো ভালো কাজের পুরস্কার শুধুমাত্র পরকালের জন্য সীমাবদ্ধ। আল্লাহ তাআলা যাকে যতটা খুশি ভালো কাজের পুরস্কার দেবেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ভালো কাজ করে আমি তাদের কাজের প্রতিদান নষ্ট করি না।’ (সুরা কাহাফ: ৩০)
এক্ষেত্রে মুসলিম ও অমুসলিমের হিসাব আলাদা। মুসলিমদের মধ্যে যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলবে, তাদের প্রতিটি ভালো কাজের বিনিময় আল্লাহ তাআলা পৃথকভাবে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারা হবে ওই সব জান্নাতের অধিবাসী, যার নিচ দিয়ে নহর প্রবাহিত হবে, তারা সেখানে চিরদিন বসবাস করবে। এটাই হলো বড় পুরস্কার।’ (সুরা বুরুজ: ১১) অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা সৎকাজের অগ্রভাগে থাকে ও যারা আগে পৌঁছে, তারাই জান্নাতে বিশেষ নৈকট্য লাভকারী হবে।’ (সুরা ওয়াকেয়া: ১১০-১১২)
অমুসলিমের ভালো কাজের প্রতিদান অধিকাংশ আলেমের মতে দুনিয়ায় দেওয়া হবে। ভালো কাজের পরিমাণ অনুযায়ী বেশি পুরস্কৃত করা হবে তাদের। যেমন সুনাম, সুখ্যাতি, প্রাচুর্য, ক্ষমতা ইত্যাদি দিয়ে তাদের ইহকালীন জীবন সমৃদ্ধ করা হবে। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যখন কোনো অবিশ্বাসী কোনো ভালো কাজ করে, তখন পার্থিব জীবনে তাদের প্রতিদান দিয়ে দেওয়া হয়। আর কোনো মুমিন ব্যক্তি যখন ভালো কাজ করে, তখন আল্লাহ পরকালে তার জন্য সওয়াব লিপিবদ্ধ করে রাখেন এবং পার্থিব জীবনে তার আনুগত্যের প্রতিদান হিসেবে উত্তম জীবিকা দান করেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২৮০৮)
তবে, ঈমান না আনার কারণে পরকালে তাদের জন্য কোনো পুরস্কার থাকবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।’ (সুরা ফোরকান: ২৩) এ বিষয়ে আরেকটি দলিল হলো- ‘কেউ ইসলাম ছাড়া অন্যকোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল হবে না এবং সে হবে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা আলে ইমরান: ৮৫)
একইভাবে যারা শিরক করে, লোক দেখানো আমল করে, গোপন গুনাহে লিপ্ত থাকে এবং কাউকে কিছু দিয়ে খোটা দেয় এবং কথা-কাজে আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেয়, তাদের ভালো কাজগুলোও নষ্ট হয়ে যাবে। (সুরা জুমার: ৬৫; সুরা হুদ: ১৫, ১৬; সুরা বাকারা: ২৬৪; সুরা মুহাম্মদ: ৩৩)
ঈমানের দাওয়াত না পাওয়া অমুসলিমদের মধ্যে যারা আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন তারা ভালো কাজের পুরস্কার পরকালেও পাবেন। এ প্রসঙ্গে একদল আলেমের অভিমত হলো- তাদেরকে আল্লাহ সরাসরি জাহান্নামে দেবেন না; আগে অনুগত্যের পরীক্ষা নেবেন। এরপর জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারণ হবে। এর স্বপক্ষে একটি দলিল হলো—‘আমি রাসুল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দিই না।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ১৫)
আরেকটি দলিল হলো- রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে চার ব্যক্তি অনুযোগ করবে। তারা হলো বধির—যে কিছুই শোনে না, নির্বোধ, বৃদ্ধ ও এমন ব্যক্তি যে ফিতরাতের ওপর মারা গেছে। বধির ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ, ইসলাম এসেছিল এবং আমি কিছুই শুনিনি। নির্বোধ বলবে, হে আমার প্রতিপালক, ইসলাম এসেছিল এবং (আমি নির্বোধ বলে) শিশুরা আমার গায়ে ময়লা নিক্ষেপ করছিল। বৃদ্ধ বলবে, হে আমার প্রতিপালক, ইসলাম এমন সময় এসেছিল যখন আমি কিছুই বুঝতাম না। আর যে ব্যক্তি ফিতরতের ওপর মারা গেছে সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক, আমার কাছে আপনার কোনো রাসুল আসেনি। তখন আল্লাহ তাদের থেকে আনুগত্যের অঙ্গীকার নেবেন এবং তাদের নির্দেশ দেবেন জাহান্নামে প্রবেশ করতে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, তারা যদি তাতে প্রবেশ করে তবে তা তাদের জন্য শীতল ও প্রশান্তিময় হবে। (সহিহ আল-জামে: ৮৮১)
অতএব, যারা ঈমানের দাওয়াত না পেয়ে অমুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন, তারা পরকালে আল্লাহর আনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ভালোকাজের প্রতিদান আখেরাতেও পাবেন ইনশাআল্লাহ। আর মুসলিমদের মধ্যে কেউ দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানে পুরস্কৃত হবেন। কেউ শুধুমাত্র পরকালে পুরস্কৃত হবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের বেশি বেশি ভালো কাজ করার তাওফিক দান করুন এবং এর প্রতিদান আল্লাহ আমাদের দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানে দান করুন। আমিন।