অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, পরীমণিকে লিগ্যাল নোটিশ

3

অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা থেকে বিরত থাকতে চিত্রনায়িকা পরীমণিকে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণির সব ধরনের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির (বিএফডিসি) ঠিকানায় শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণিকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন অ্যাডভোকেট হাসান এন্ড এসোসিয়েটসের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার এবং ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী ইসমাতুল্লাহ লাকী তালুকদার।

ভবিষ্যতে সব ধরনের অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই করা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকার জন্য লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়, শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণি গত ১ সেপ্টেম্বর মাদক মামলায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পরীমণির হাতের তালুতে অশালীন বাক্য লেখা ছিল। এরপর ১৫ সেপ্টেম্বর মামলার শুনানির জন্য আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন পরীমণি। সেদিনও তার হাতের তালুতে অশালীন কথা লেখা ছিল।

নোটিশে আরও বলা হয়, এর ঠিক একদিন পরেই নিজের ফেসবুকে দু’টি ছবি পোস্ট করেন পরীমণি। যেখানে পরীমনির হাতে দেখা যায় জ্বলন্ত সিগারেট এবং হাতের তালুতে লেখা ছিল সেই অশ্লীল বাক্য। পরীমণির পরনে ছিল কালারফুল প্রিন্টের টপস, খোলা চুলে চোখে চশমা, পায়ে লাল-কালো রংয়ের কেডস। প্রায় অর্ধনগ্ন ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে পরীমণি লিখেছেন, ‘সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর!’।

পরীমণি তার হাতের তালুতে যে সাইনটা দেখিয়েছেন, সেটি অত্যন্ত অসম্মানজনক। কারণ একেকটি ফিঙ্গার দেখিয়ে, একেকটি মিনিং বোঝানো হয়। এরমধ্যে ‘মধ্যমা আঙ্গুল’ অশ্লীল ইঙ্গিত দিতে ব্যবহার করা হয়। এটি বিদেশে বহুল ব্যবহৃত। শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণির মতো একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর কাছ থেকে অশ্লীলতা প্রকাশে এসব প্রদর্শন কোনভাবেই কাম্য নয়।

এছাড়া শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণ গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার হোটেল রেডিসন ব্লুতে ৩০তম বার্থডে পার্টির আয়োজন করেন। সেখানে পরীমণির পোশাক এবং অঙ্গভঙ্গির বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে লিগ্যাল নোটিশে।

লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণি একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, তাই অনেকেই তার আচার আচরণ, অঙ্গভঙ্গি, নাচ, পোশাক, চলাফেরা অনুকরণ ও অনুসরণ করে থাকে। ফলে পরীমণির অশ্লীল বাক্য, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য, পোশাক এবং এমন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা এই আচরণ দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। শিশু-কিশোরদের গণ্ডি ছোট থাকে। চোখের সামনে তারা যা দেখে অনায়াসে তা আয়ত্ত করে ফেলে। টেলিভিশন, কম্পিউটার ও মোবাইলে এসব আলোচিত ঘটনার ছবি বারবার ভেসে উঠছে। সেগুলো তারা দেখছে। এর ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে। কারণ হাতে মেহেদি দিয়ে লেখা বাক্যের এর ছবি দিয়ে কী বোঝাচ্ছে তা তাদের মনে প্রশ্ন তৈরি করছে।

পর্নোগ্রাফি আইন-২০১২ সালের ২ এর ‘গ’ উপধারায় ‘যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোনো অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যাহা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যাহার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই’ তাকে পর্নোগ্রাফি বলা হয়েছে।

এই ধরনের অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে একই আইনের ৮ ধারার ৪ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের মাধ্যমে গণউপদ্রব সৃষ্টি করলে তিনি অপরাধ করেছে বলে গণ্য হবেন এবং সেই অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পর্নোগ্রাফি আইনের অপরাধসমূহ আমলযোগ্য এবং অ-জামিনযোগ্য অর্থাৎ জামিনযোগ্য নয়।

লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, পরীমণি পর্নোগ্রাফি আইনে গ্রাফিকস বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই- সংজ্ঞামতে অপরাধ করেছেন। বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতির সুন্দর ঐতিহ্য আছে। পরীমণির কাছ থেকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন শিল্পী হিসেবে সংযত ও দায়িত্বশীল আচরণ সবাই প্রত্যাশা করে।