সিরিয়ার নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশটির পতিত স্বৈরাচার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনামলে অপরাধে জড়িতদের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। আলজাজিরার সাংবাদিক ওসামা বিন জাভেদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সরকারের মুখপাত্র ওবাইদ আরনাউত এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেছেন, নতুন সরকারের মূল লক্ষ্য হলো-জনগণের আইনের প্রতি আস্থা পুনঃস্থাপন এবং দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস ফেরানো।
তিনি আরো বলেন, ‘যারা সিরিয়ার বিভিন্ন কারাগারে শত-সহস্র মানুষকে আটক ও নির্যাতন করেছে, তাদের বিচারের আওতায় না আনলে এই আস্থা পুনঃস্থাপন সম্ভব নয়। দুর্নীতি, প্রতিপক্ষকে নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করানোর মাধ্যমে আমরা আমাদের সমাজে সৃষ্ট গভীর ক্ষত নিরাময় করতে এবং একটি আরো ন্যায়সংগত ও সমতাপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়তে চাই।’
তিনি বলেন, তাদের সরকার বর্তমান সময়কে ‘নতুন যুগ’ হিসাবে দেখতে চায়। সুশাসন নিশ্চিতের জন্য ব্যাপক সংস্কার করতে চায়। শুধু বিচারব্যবস্থার সংস্কার নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করবে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করার অঙ্গীকার করেছে নতুন সরকার। আরনাউত বলেন, যারা সিরিয়ার জনগণকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে এবং জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। তবে যারা নিজেদের কাজের প্রতি নিবেদিত এবং পেশাদার, তাদের জন্য কাজের সুযোগ অবারিত থাকবে। দেশ পুনর্গঠনের জন্য আমাদের সবার প্রচেষ্টা একীভূত করতে হবে। জাতিগত ও ধর্মীয় সব গোষ্ঠীর মানুষের দক্ষতাকে কাজে লাগানো হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য কী সে সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, অবকাঠামো পুনর্গঠন এবং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেবে সরকার। ভালো কাজ করা সরকারি কর্মচারীদের পুরস্কৃত করা হবে। আমাদের প্রধান কাজ হবে সম্পত্তি রক্ষা এবং দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আক্রমণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আরনাউত বলেন, এই বিষয়ে শিগগিরই আমাদের অবস্থান নির্ধারণ করা হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো সিরিয়াকে যে কোনো বহিরাগত হুমকি থেকে নিরাপদ রাখা। তিনি সিরিয়ার ওপর আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আর প্রাসঙ্গিক নয়। সিরিয়ার জনগণের স্বপ্নপূরণের জন্য এগুলো তুলে নেওয়া জরুরি।
এদিকে, দেশের দীর্ঘমেয়াদি সংকট নিরসন এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপনের জন্য এটি অপরিহার্য বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ এবং শাসনব্যবস্থার অবনতির প্রেক্ষাপটে সরকারের এই উদ্যোগকে সিরিয়ার জনগণের জন্য আশার আলো বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, তা সময়ই বলে দেবে।