যৌন হয়রানির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণে যৌন সম্পর্কে সম্মতি জ্ঞাপন করার সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণ করছে ফ্রান্স। এর অনেক আগেই অবশ্য পশ্চিমা দেশগুলো একই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ফ্রান্সে সম্প্রতি একটি মামলায় বিচারক এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ছোট্ট শিশুর সঙ্গে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে মামলা পরিচালনায় অস্বীকৃতি জানায়, কারণ সেখানে কোনো বলপ্রয়োগের প্রমাণ ছিলো না।
প্যারিসে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন এক আইনজীবী ক্যাথেরিন ব্রল্ট বলেন, একটি ছোট্ট শিশু কোনোভাবেই প্রাপ্তবয়স্ক কারো সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হওয়ার ব্যাপারে সম্মতি জ্ঞাপন করতে পারে না। ফ্রান্সে কিছু লম্পটের আচরণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এর আগে যুক্তরাজ্যে যৌন হয়রানির ঘটনায় এ ধরনের বিপর্যয় ঘটে, যেটা এখন ছড়িয়ে পড়েছে ফ্রান্সে।
ফ্রান্সে এখনকার নিয়ম অনুযায়ী ১৫ বছরের নিচে কোনো শিশুকে যৌন হযরানি করার বিষয়টি প্রমাণিত হলে প্রাপ্তবয়স্করা ৫ বছর পর্যন্ত জেলের সাজা ভোগ করবেন। আর ধর্ষণ বা বড় ধরনের যৌন নির্যাতন করলে সাজা হতে পারে ২০ বছর পর্যন্ত। তবে সেখানে বলপ্রয়োগ বা সহিংসতার বিষয়টি প্রমাণিত হতে হবে।
আইনটি এমনভাবে লেখা হয়েছে যেন কোনো মেয়ে শিশুর যৌন সম্পর্কে সম্মতি থাকতে পারে কিন্তু যৌন হয়রানিতে সম্মতি থাকতে পারে না। এই পার্থক্যটিরই সমালোচনা হয়ে আসছে বছরের পর বছর থেকে।
ফ্রান্সের বিচারক মিনিস্টার নিকোল বেলাওবেট পরামর্শ দেন: যৌন সম্মতি প্রদানের ক্ষেত্রে নূন্যতম বয়স ১৩ হওয়া যৌক্তিক। অন্যান্য ফ্রেঞ্চ নেতারা সেটার কথা বলছেন ১৫ বছর। যেসব প্রাপ্তবয়স্করা শিশুর সম্মতির জন্য নির্ধারিত বয়স মানবেন না তারা ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন তাতে সেখানে বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটুক বা না ঘটুক।
যুক্তরাষ্ট্রে সম্মতির বয়স নির্ধারিত হয়েছে ১৬ থেকে ১৮ বছর।
২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর ৩০ বছর বয়সী এক ফরাসী পুরুষকে ১১ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করার পরও কোর্ট খালাস দিয়ে দেয়। কারণ আদালত সেখানে বলপ্রয়োগের কোনো প্রমাণ পায়নি। জুরি বোর্ড রায় দেয় সেখানে ধর্ষণের কোনো নমুনা যেমন বলপ্রয়োগ, হুমকি, সহিংসতা বা চমকে দেওয়ার মতো কোনো প্রমাণ মেলেনি। মেয়েটি স্বেচ্ছায় তাকে অনুসরণ করে। এরপর মেয়েটি একটি ছেলেরও জন্ম দেয় যে বর্তমানে ফস্টার হোমে রয়েছে।
এটাকে বিচারহীনতা হিসেবেই উল্লেখ করেন সেখানকার অনেকে। তাদের বক্তব্য, এই ঘটনাটি ওই মেয়ে, তার পরিবার ও ছোট্ট শিশুটিকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। এই রায় খুবই ভুল বার্তা দেয়।
ফ্রান্সের এক নারীবাদী অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র ফাতিমা ইজ্জারা বেনোমার বলেন, যৌন সম্পর্কে সম্মতির বয়স নির্ধারণের যুদ্ধটা অনেক বছর ধরে চলছে। এসব রায় দেখে মনে হয় ১১ বছর বয়সী মেয়েও যৌন সম্পর্কে সম্মতি দিতে পারে।
ফাতিমা বলেন, মাত্র ১১ বছর বয়সে কোনো শিশু কি ধারণা করতে পারে, তার সঙ্গে কী ঘটতে চলেছে?