ষষ্ঠীতে শুরু দুর্গাপূজা, আজ মহাসপ্তমী

ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ আর কাঁসরঘণ্টা বাজিয়ে ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে বেলগাছের নিচে ঘট স্থাপন করে ষোড়শ উপাচারে ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভে ষষ্ঠী পূজা শুরু হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুর্গাপূজার মহাসপ্তমী। সকালে সারা দেশের মন্দিরে মন্দিরে থাকছে দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার আনুষ্ঠানিকতা। মূলত আজ থেকে শুরু হচ্ছে দেবী-দর্শন, ভক্তদের অঞ্জলি। সন্ধ্যায় থাকছে আরতি।

ষষ্ঠীর দিন সকালে ‘দুর্গা মায়ের’ মুখ উন্মোচিত করা হয় এবং এ সময় লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীকে নিয়ে দেবীদুর্গা মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হন। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ভোর থেকেই পূজার আয়োজনের ব্যস্ততা দেখা যায়। দেবীর আরাধনায় ভক্তরা ভিড় করেন সেখানে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত বলেন, ষষ্ঠীতে সাধারণত মেয়েরা এসে সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন। সন্তানরা যেন মেধাবী হয়, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় এবং যাদের সন্তান হয় না, তারা সন্তানের আশা নিয়ে পূজা করেন। সন্তানের মঙ্গলপ্রত্যাশা করে ষষ্ঠীর পূজাতে আসেন অনেকে।

ষষ্ঠীপূজা নিয়ে গতকাল ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী জানান, ‘সংকল্প ও আরম্ভ এ দুই মিলিয়ে হয় ‘কল্পারম্ভ’। এর মাধ্যমে দেবীর কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়, সমস্ত নিয়ম মেনেই তার পূজার্চনা করা হবে। দেশ এবং সারা বিশ্বে ‘অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায়’ দুর্গার চরণে গন্ধ, পুষ্প, অর্ঘ্য ও বাদ্য দিয়ে প্রার্থনা করা হয় এ সময়।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের পুরোহিত রাজীব চক্রবর্তী বলেন, শাস্ত্রমতে, দুর্গা এবার মর্তে এসেছেন দোলায় চেপে, ফিরবেন ঘোড়ায় চড়ে। হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন দেবীদুর্গা। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব। মহালয়ার মধ্য দিয়ে গত ২ অক্টোবর এবারের দুর্গোৎসবের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছিল। ওইদিন থেকেই দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয়।

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, দশভুজা দেবীদুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধরায় আসেন। সন্তানদের নিয়ে কয়েকটি দিন পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে।

রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ মণ্ডপ, পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজারসহ সারা দেশে ৩১ হাজারের বেশি মণ্ডপ ও মন্দিরে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। মণ্ডপে মণ্ডপে এখন ঢাকের বোল। শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত প্রাঙ্গণ। দেবী দুর্গার আগমনী সুরে ভক্তকুল উলুধ্বনিতে মাতোয়ারা।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, দেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্দির ও মণ্ডপে এবার পূজার আয়োজন করা হয়েছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৪০৮টি । তবে ঢাকা মহানগরে এবার ২৫২টি পূজা হচ্ছে। গত বছর হয়েছিল ২৪৮টিতে। সে হিসাবে মহানগরে পূজামণ্ডপ চারটি বেড়েছে। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, প্রস্তুতি নিতে অপারগ হওয়ায় ও বন্যার কারণে দুর্গত এলাকায় কোথাও কোথাও পূজার্থীরা এবার পূজার আয়োজন করতে পারেননি।

এদিকে ষষ্ঠী পূজার আগে গত মঙ্গলবার হয় বোধন বা দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনা পূজা। আগামীকাল শুক্রবার মহাঅষ্টমী এবং শনিবার মহানবমী। এবার মহানবমী পূজার পরই দশমী বিহিত পূজা হবে। রোববার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শেষ হবে। একটি বছরের জন্য ‘দুর্গতিনাশিনী’ দেবী ফিরে যাবেন কৈলাসে দেবালয়ে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব। রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গাপূজা নামেও পরিচিত। আর মর্ত্যলোকে আসতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা হয় অকালবোধন।