মামুনুর রশীদ নোমানী
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল পটুয়াখালীর উপকূলে আঘাত হানার পর মধ্যরাত থেকে বরিশালজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। দমকা হাওয়ায় গাছপালা উপড়ে পড়াসহ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এখনও। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নিম্নাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া মুষলধারে বৃষ্টির কারণে বরিশাল নগরের বিভিন্ন রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ঘুর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বরিশাল জেলায় ২৫৫ টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ২ হাজার ৬৮৫ টি ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া মোট ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রায় ২৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ঝড়ের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার পর গতকাল রাত ২টার পর থেকে বরিশাল শহর বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে।
সেই সাথে সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্কে বিপর্যয়ও দেখা দিয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ একে অপরের সঙ্গে অনেকেটাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দুপুর সোয়া ২টায় বরিশাল নগরের বাসিন্দা রনি বলেন, ঝড় শুরু হওয়ার পর রাত ২টা ১০ মিনিটের দিকে বিদ্যুৎ যায়। এরপর সকাল ১০টার মধ্যে কয়েক মিনিটের জন্য দুইবার বিদ্যুতের দেখা মিলেছে। তারপর থেকে আবারও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে বরিশাল নগর।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের কারণে সকাল থেকে ট্যাংকিতে পানি ওঠাতে পারিনি, তাই দৈনন্দিন কাজ সবকিছু ব্যাহত হচ্ছে। আর এখন তো মোবাইলের নেটওয়ার্কও নেই। ফল গ্রামের বাড়িতে থাকা স্বজনদের খোঁজও নিতে পারছি না।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল জানিয়েছেন ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়েই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কেটে যাবে। তিনি জানান, গতকাল রাতেই বরিশাল স্থলভাগে ঢুকে পড়ে ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ। তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৮ কিলোমিটার। সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৫৯ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিভাগের সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
বরিশাল সদর উপজেলা বাসিন্দা মিজান বলেন, আমাদের বাড়িঘর সব তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি আর বাতাসে ঘর, গাছপালা ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করছে।