এম. মতিন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের সরকারি খাস জায়গায় অবস্থিত শতবর্ষী খেলার মাঠ দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন।
সোমবার (১ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মারজান হোসাইন এ অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযানে খেলার মাঠ দখল করে অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা একটি সেমিপাকা ঘর এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
জানা যায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের পূর্ব খিলমোগল গজালিয়া গ্রামে সরকারি খাস জায়গায় ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী বটতইল্ল্যা বাম ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার মাঠটি অবস্থিত।
যুগযুগ ধরে এই খেলার মাঠে বিভিন্ন প্রজন্ম বিনোদন স্বরুপ খেলাধূলা করে আসছে। বছরে বেশ কয়েকবার এ মাঠে টুর্নামেন্টের আয়োজন হয়। কিন্ত কালের পরিক্রমায় উক্ত মাঠটি বদি আলম চৌধুরী নামে এক ভূমিদস্যুর নজর পড়ে। সে বিভিন্ন সময় একটু একটু করে খেলার মাঠের জায়গা দখল হতে থাকে। পরবর্তীতে বদি আলম চৌধুরী মারা গেলে তার ৫ সন্তান নেজামুল হক চৌধুরী,একরামুল হক চৌধুরী, মোজাম্মেল হক চৌধুরী, এনামুল হক চৌধুরী ও সাইফুল ইসলাম চৌধুরী খেলার মাঠের ২ একরসহ ৭ একর খাস ভুমি দখল করে। শুধু দখলই নয়; দখলকৃত জায়গা প্লট আকারে বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছে দখলিস্বত্ব বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। একপর্যায়ে খেলার মাঠ বে-দখল হয়ে গড়ে ওঠে অবৈধ স্থাপনা ও গাছ বাগান। এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে এলাকার ক্রীড়াপ্রেমি মানুষ ও সর্বস্থরের জনগণের দাবি থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। অনেকে এই মাঠ দখলমুক্ত করতে দখল দারিত্বের বিরুদ্ধে কথা বলে নির্যাতিত হয়েছে।
সম্প্রতি সরকার কর্তৃক প্রতি ইউনিয়নে একটি করে খেলার মাঠ নির্মাণের ঘোষণা দিলে এ খেলার মাঠটি উদ্ধার ও সংস্কারের আবেদন করেন লালানগর ইউপি চেয়ারম্যান প্রয়াত রফিকুল ইসলাম তালুকদার। চেয়ারম্যানের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনও সার্ভেয়ার দ্বারা পরিমাপ করে মাঠটি চিহ্নিত করেন। নাম রাখা হয় ‘লালানগর শেখ কামাল মডেল মাঠ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।’ গত ২৮ ডিসেম্বর সারাদেশের ন্যায় এ মাঠটিও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই ধারাবাহিকতায় আজ দুপুরে উপজেলা প্রশাসন খেলার মাঠের অবৈধ স্থাপনা গুলো উচ্ছেদ করে মাঠ দখলমুক্ত করেন।
এসময় লালানগর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মীর মো হানিফ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর গোলাম মোস্তফা বাবুল, প্রজন্ম লীগের সভাপতি আনিসুল ইসলাম চৌধুরীসহ ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী,পুলিশ, আনসার ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত থেকে উচ্ছেদ অভিযান কাজে সহযোগিতা করেন।
এ বিষয়ে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মারজান হোসাইন বলেন, অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় প্রতি ইউনিয়নে একটা করে খেলার মাঠ হবে। এই খাস জায়গাটি মাঠের জন্য চিহ্নিত করেছি। ঘরটা মাঠের মাঝখানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে, এবং মাঠের নির্মাণ কাজ বিঘ্নিত হওয়ায় গত এক বছর ধরে নোটিশ দিয়ে আসছি। গত মাসও স্থাপনা সরাতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ গতকালও বলা হয়েছে, আমরা ঘর উচ্ছেদ করতে আসবো। এরপরও তারা স্থাপনা সরাতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সরকারি খাস জায়গা ও খেলার মাঠ উদ্ধার করা হয়েছে।