এম. মতিন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় নুর আয়শা বেগম (৪০) এক নারীর রহস্যজনক মৃত্যুর পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। স্বামীর দাবি, এনজিওর কিস্তির টাকার চাপে গলায় ফাঁস দিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে। তবে, মৃত্যুর কারণ হত্যা না আত্মহত্যা এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে।
বৃহস্প্রতিবার (২৪ আগস্ট) ভোর ৫টার দিকে উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পশ্চিম মোল্লাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত নুর আয়শা বেগম লালানগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের আবিদ পাড়া গ্রামের সিদ্দিক আহমদের মেয়ে এবং ওই ইউনিয়নের মোল্লা পাড়া গ্রামের মৃত ইউনুছ প্রকাশ জালি ফকিরের ছেলে মো. জামশেদুল আলমের স্ত্রী। সে দুই কন্যা সন্তানের জননী।
জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে জামশেদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। জামশেদ পেশায় একজন সিএনজি অটোরিকশার চালক। সাম্প্রতিক সময়ে সে সিএনজি বিক্রি করে দিয়ে বাড়ির পাশে একটি চায়ের দিয়েছেন। তাদের সাংসারে প্রায়শই অভাব-অনটন লেগে থাকতো। এ নিয়ে সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাটিও হতো বলে জানিয়েছেন আশেপাশের লোকজন। জনশ্রুতিতে আছে সম্প্রতি স্বামী জামশেদ গোপনে আরেকটি বিয়েও করেছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাশেঁর বেড়ার বসতঘরের পূর্ব পাশে পার্শ্ববর্তীর ইটের দেয়াল তার থেকে দেড় ফুট পশ্চিমে ২ ফুট উচ্চ চৌকিকাট বিছানো আছে। শয়ন কক্ষের মিনিমাম সাড়ে ৬ ফুট উপরে বাঁশের ছাদের সরু একটি গাছের বিমে ওড়না গলায় প্যাচানো অবস্থায় কাটের উপরিংশের প্রায় ১০ ইঞ্চি নিচে পা ঝুলানো অবস্থায় ঝুলছিল নুর আয়শার মৃতদেহ। এমন পরিস্থিতি দেখে স্থানীয়রা আত্মহত্যা মানতে রাজি নয়। পরে পুলিশ এসে কাপড় কেটে ঝুলে থাকা অবস্থা থেকে ওই নারীর লাশ নামিয়ে কাটে শোয়ান এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য না পাঠিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেন।
এ ব্যাপারে নিহতের স্বামী জামশেদুল আলম বলেন, আমি একজন সিএনজি অটোরিকশার চালক। সাম্প্রতিক সময়ে সিএনজি বিক্রি করে দিয়ে বাড়ির পাশে একটি চায়ের দোকান দিয়েছি। সাংসারের অস্বচ্ছলতার কারণে আমার স্ত্রী তিনটি এনজিও (গ্রামীণ ব্যাংক, পদক্ষেপ, কারিতাস) থেকে দেড় লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করা কষ্টকর হওয়ায় সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। একপর্যায়ে সে সবার অগোচরে আত্মহত্যা করেছে।
তিনি আরও বলেন, চায়ের দোকান খোলার পর থেকেই আমি রাতে দোকানে থাকতাম। আমার দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়েকে বিয়ে দিলেও অপর মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় মায়ের সাথেই থাকতো। আজ ভোরে সে দোকানে খবর দিলে বাড়িতে এসে দেখি আমার স্ত্রী ঘরের ভেতর ফাঁসিতে ঝুলে আছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শহীদুল আলম বলেন, ঘটনার খবর শুনে পুলিশকে খবর দিই। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে।
লালানগর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ইউপি সদস্যের কাছে বিষয়টি জেনেছি। তবে কি কারণে সে আত্মহত্যা করেছে তা জানি না। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ দাফন করার জন্য বলেছেন।
গ্রামীণ ব্যাংক রাঙ্গুনিয়া শাখার ব্যবস্থাপক টিটু কুমার শীল বলেন, নুর আয়শা বেগম ২০০৩ সাল থেকে আমাদের নিয়মিত গ্রাহক ছিলেন। এক মাস পূর্বেও সে আমাদের শাখা থেকে ৪৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিল এবং ৩টি কিস্তির টাকাও পরিশোধ করেছেন। কিস্তির জন্য তাকে কখনো কোনো কথা বলতে হয়নি। তাছাড়াও তার সঙ্গে আমাদের কখনো কোনো ঝামেলা হয়নি।
রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি (তদন্ত) খান নুরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তিনি তিনটি এনজিও থেকে দেড় লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছেন। ঋণের কিস্তির টাকার জন্য মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে তার স্বামী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
ময়নাতদন্ত ছাড়া কেন দাফন করা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উভয় পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।