যেনে নিন মানসিক চাপের ফলে শরীরে কি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে

স্বাস্থ্য ডেস্ক : বিভিন্ন কারণে মানুষ মানসিক সমস্যায় ভোগে। আর এই মানসিক সমস্যার কারণে সৃষ্টি হয় নানারকম শারীরিক জটিলতা। সবার ক্ষেত্রেই যে সমস্যা এক রকম হয় তা কিন্তু নয়। মানসিক চাপ থেকে একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম শারীরিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। চলুন মানসিক চাপে শরীরে কেমন প্রতিক্রিয়া ঘটে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে জেনে নিই-

১. চর্মরোগ

চুলকানি, ব্রণসহ নানা ধরনের চর্মরোগ। বিশেষজ্ঞরা শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছে- এর সঙ্গে মানসিক চাপের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।

২. ওজনের তারতম্য

কারও ওজন কম বা বেশি হতে পারে। কিন্তু মানসিক চাপের ফলে এটিরও পরিবর্তন হতে পারে।

৩. তাপমাত্রা কমে যাওয়া

মানসিক চাপের ফলে শরীরে কোর্টিসল উৎপাদন হয় বেশি। যেটি শরীরের উত্তেজনা কমিয়ে দেয়। ফলে ঠান্ডা লাগা শুরু করবে।

৪. গ্যাস্ট্রিক সমস্যা

গবেষণায় দেখা গেছে- মানসিক চাপে হজমে প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় পরিপাকতন্ত্রে জটিলতায় গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে।

৫. অমনোযোগিতা

মানসিক চাপে থাকলে মানুষের লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। কারণ তার মধ্যে মনোযোগিতার ঘাটতি দেখা যায় তখন।

৬. চুল পড়া: চুল পড়তে পড়তে একপর্যায়ে টাক হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে মানসিক চাপের কারণে।

৭. মাথাব্যথা

অনেকেই মাথাব্যথার জন্য ওষুধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু মানসিক চাপের ফলেও যে মাথাব্যথা হয়, সেটির জন্য দরকার দুশ্চিন্তামুক্ত হওয়া।

৮. যৌন অক্ষমতা

মানসিক চাপের কারণে যৌন ক্ষমতা কমে যাওয়া বা শারীরিক সংসর্গে অনীহা তৈরি হওয়া।

৯. ঘুমে সমস্যা

মানসিক চাপের ফলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ঘুম না হওয়া। ফলে দিনের অন্যান্য কাজেও ব্যাঘাত ঘটে।

১০. হৃদ্‌রোগে চাপ

মানসিক চাপ অনেক সময় বুকের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক চাপে মারাত্মকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে হৃদ্‌রোগে।

মানসিক চাপ দূর করার কিছু পদক্ষেপ

১. নিয়মিত ব্যায়াম করুন

ব্যায়াম মানসিক চাপ তৈরিকারী হরমোনের নিঃসরণ কমায়।সুখি হরমোন হিসেবে পরিচিত এনডোরফিনের মাত্রা বাড়ায়।তাই যত ব্যস্তই থাকুন না কেন একটু সময় বের করে ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।যদি জিমে গিয়ে ব্যায়াম করার সময় না হয় তবে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন। সেটিও চাপ কমাতে কাজে দেবে।

২. ঘুমান

ঘুম শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে উঠার একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন। নিয়মিত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

৩. সঠিকভাবে খান

মানসিক চাপে থাকলে খাওয়ার প্রতি অনেকেরই অনীহা হতে পারে। মনে রাখবেন, না খেয়ে থাকা চাপকে বা সমস্যাগুলোকে কমিয়ে দেবে না বরং খাবার আপনার শরীরকে কর্মক্ষম রাখবে এবং চাপ দূর করার পদক্ষেপগুলো নিতে সাহায্য করবে। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। ক্যাফেইন গ্রহণ কমিয়ে দিন।

সকালের নাস্তা ভালোভাবে করুন। দিনে অন্তত ছোটবড় মিলিয়ে ছয় বেলা খাবার খান। গমে রুটি, পাস্তা ইত্যাদি খান। ভিটামিন এ এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। পাশাপাশি গ্রিন টি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খান।

৪. শিথিল থাকতে শিখুন

মানসিক চাপের সময় দেহ ও মনকে শিথিল রাখা জরুরি। মানসিক চাপের কারণ সহজেই চলে যাবে না। এটা দূর হতে সময় লাগবে। তাই এসময় নিজেকে শান্ত রাখা জরুরি। মনকে শিথিল রাখতে হালকা ধাঁচের গান শুনুন। আর শরীরকে শিথিল রাখতে স্নান করতে পারেন। পার্লারে বা স্যালুনে গিয়ে মানসিক চাপ কমাতে পারে এ রকম ম্যাসেজ করান।

৫. ডায়রি লিখুন

আপনি হয়তো কখনোই ডায়রি লেখেননি। তবুও এ সময়টায় নোট প্যাড বা ডায়রিতে কিছু লেখার চেষ্টা করুন। যে বিষয়টি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, মানসিক চাপের কারণ হচ্ছে সেটি ডায়রিতে লিখুন। পাশাপাশি আপনি কী চান বা কী করলে আপনার ভালো লাগত সেই বিষয়টিও লিখুন। ডায়রি লেখার এই অভ্যাসটি মানসিক চাপ কমাতে অনেকটা সাহায্য করবে আপনাকে।

৬. যোগ ব্যায়াম ও ধ্যান করুন

মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান করতে পারেন। ধ্যানের সময় গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম শরীরকে শিথিল করে। ধ্যান আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি চাপ কমাতে যোগব্যায়ামও করতে পারেন।

৭. পছন্দের কাজগুলো করুন

হয়তো ছোটো বেলায় গান শিখতেন বা ছবি আঁকতেন আপনি। বড় হওয়ার পর কাজের চাপে বা সংসারের বিভিন্ন ঝক্কি-ঝামেলায় এগুলো করা হয়ে উঠে না আর। মানসিক চাপের সময় এই পছন্দের কাজগুলো আবার শুরু করুন এবং কাজগুলোর মাধ্যমে নিজেকে সময় দিন।

৮. নেতিবাচক চিন্তা এড়িয়ে চলুন

খারাপ চিন্তা হয়তো সবসময় এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবে চেষ্টা করুন ইতিবাচক চিন্তা করতে। ভাবুন যা চাইছেন তা ইতিবাচকভাবেই পাবেন। এটা আপনাকে মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করবে।

৯. নিজেকে গুছান

জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে গুছান। জীবনযাপনকে একটি রুটিনের ভেতরে নিয়ে আসুন। খাওয়া, ঘুমানো, কাজ এবং নিজের পছন্দের কাজ-সবকিছুর জন্য একটি সময় নির্ধারণ করুন।

১০. সব পরিবর্তন হয় না

হয়তো খুব কাছের কারো মৃত্যু আপনাকে ভঙ্গুর করে দিয়েছে বা কোনো ঘটনা আপনাকে এতটা আহত করেছে যে এর চাপ বহন করা কষ্টের হয়ে যাচ্ছে। ভাবুন অতীত কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব বা ঠিক করা সম্ভব? যদি উত্তর ‘না’ হয়, তবে এটি নিয়ে ভাবনা বন্ধ করে দিন। কেননা সবকিছু পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আর সবকিছু আমাদের হাতেও থাকে না।

১১. কাছের বন্ধুর সাথে কথা বলুন

মানসিক চাপের কারণ নিয়ে কাছের বন্ধুর সাথে কথা বলুন। বন্ধুকে বলুন, আপনাকে সাহায্য করতে। তবে এমন বন্ধুকে বলবেন না, যে আপনাকে বুঝবে না অথবা একপর্যায়ে আপনাকে উপহাস করবে।

১২. নিজের সাথে কথা বলুন

সর্বোপরি নিজের সাথে কথা বলুন। কোন বিষয়গুলো আপনাকে মানসিক চাপে ফেলছে? কী করলে চাপ কম হতো? বর্তমানে কী অবস্থা? এর পরিপ্রেক্ষিতে আপনি কী করতে পারনে- এগুলো ভাবুন।

চাপ দূর করতে কী করা প্রয়োজন, এর জন্য একটি তালিকা তৈরি করুন। আপনার চাহিদা অনুসারে তালিকাটি সাজান এবং সেই তালিকা অনুসারে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। এই পদক্ষেপগুলোর চর্চা মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করবে।