ব্যাংক ঋণ পরিশোধের নোটিশ পেয়ে অবাক ১২ পরিবার। নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে ১০ বছর আগে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন অংকের কৃষিঋণ। ওই ব্যক্তিদের ঠিকানায় ব্যাংকের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অথচ এদের মধ্যে অনেকে মারা গেছেন ৫০-৭০বছর আগে। বাকিরা জীবিত থাকলেও ব্যাংকের কাছেও যাননি কোন দিন।
এমন ঘটনা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখায়। ভুক্তভোগী সকলের বাড়ি উপজেলার সূর্য্যমনি ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে।
ব্যাংক ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সূত্রে জানাগেছে, ১৯৮৪ সালে কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখা চালু হয়। ২০১৪ ও ১৫ সালের ঋণ খেলাপির দায়ে ১২ ব্যক্তিকে নোটিশ প্রদান করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। নোটিশ পেয়ে অবাক হন ১২টি পরিবারের সদস্যরা। ব্যাংকে যেয়ে জানতে পারেন তাদের নামে ঋণ নেয়া হয়েছে। অথচ ঋণ গ্রহীতা জবেদ আলী ১৯৬০, হযরত আলী ১৯৬৫ ও রহম আলী ১৯৬৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এদের মধ্যে জবেদ আলীর নামে ১ম দফায় ২৫ ও ২য় দফায় একই ব্যাক্তির নামে ৩০ হাজার টাকার ঋণ দেখানো হয়েছে। তার সহোদর হযরত আলীর নামে ৪৫ হাজার ও অপর আরও এক সহোদর রহম আলীর নামেও ৫০ হাজার টাকার ঋণ দেখানো হয়েছে। অথচ এদের মধ্যে কেউই জীবিত নেই। জয়নাল আবেদীন হাওলাদার নামের অপর এক ব্যক্তির নামে ঋণ দেখানো হয়েছে তিনিও মারা গেছেন ১৯৬৯ সালে। তিনি একই গ্রামের আহম্মদ আলী হাওলাদারের ছেলে। তার নামে ২০১৪ সালে ২৯ অক্টোবর ৪০ হাজার টাকার ঋণ দেখানো হয়েছে। সেরাজ মৃধা মারা গেছেন অনেক আগে। তার নামেও রয়েছে ঋণ নেয়ার অভিযোগ। এই পরিবারের সদস্যরা ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন সেরাজ মৃধার নামে অন্য ব্যাক্তির ছবি, আইডি ও ব্যবহৃত স্বাক্ষর তার নয়। এছাড়া করিম মৃধা নামের এক ব্যাক্তির কাছে ২টি ঋণ দেখানো হয়েছে যার কোন সন্ধানই পাওয়া যায়নি। বাকিরা জীবিত থাকলেও কেউ থাকেন ঢাকাতে। নোটিশ পাওয়ার পর তারা একাধিকবার ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি বারবার ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেছেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
একই গ্রামের মো. বাবুল মৃধার (৪৪) নামে কেশবপুর শাখা থেকে ২০১৪ সালে ১৭ হাজার ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। তার ছোট ভাই ফারুক হোসেন মৃধার (৪২) নামে ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারী ৫৫ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বাবুল মৃধার স্ত্রী হামিদা বেগম অভিযোাগ করে বলেন, ‘২০১৪সালে আমাদেরকে ঋণ দেয়ার কথা বলে ফাইলে সই স্বাক্ষর নেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরের দিন টাকা দেয়ার কথা বলে ব্যাংকে উপস্থিত থাকতে বলেন। আমরা উপস্থিত ছিলাম কিন্তু আমাদেরকে টাকা দেয়া হবে না বলে ফিরিয়ে দেন ওই দিন। পরে ২০২০ সালে আমাদের নামে নোটিশ আসে।’
ভুক্তভোগী কয়েক দফায় ব্যাংকে গিয়ে যোগাযোগ করেছেন। লোন ফাইলে ঠিকানা ঠিক থাকলেও ব্যবহৃত ছবি ও স্বাক্ষর তাদের অনেকের সাথে মিল নেই।
জবেদ আলীর নাতনী মোমেলা বেগম বলেন, ‘আমার বয়স ৬৫ বছর। আমার দাদাকে আমি দেখিনি। আমার জন্মের আগে দাদা মারা গেছেন। দাদার নামে ঋণ পরিশোধের নোটিশ পেয়ে পরিবারের সদস্যরা আশ্চর্য হয়েছি।’
জয়নাল হাওলাদারের ছেলে আফসের উদ্দিন হাওলাদার(৭০) বলেন, ‘আমার বাবার মৃত্যুর সময় ব্যাংকের শাখাই ছিল না।’
কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখার শাখা ব্যবস্থাপক হুসাইন মো. তাইফ আলম বলেন, ‘চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি আমি কেশবপুর শাখায় যোগদান করি। গত মঙ্গলবার ভুক্তভোগী পরিবারের কয়েকজন কার্যালয়ে এসে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। ঋণগুলো ২০১৪ সালে অনুমোদন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমি প্রাথমিক রিপোর্ট আমাদের মূখ্য আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রেরণ করেছি।
ঋণ বিতরণকালীন সময়ের শাখা ব্যাবস্থাপক নুর হোসেন জানান, তিনি ২০১৬ সালে অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটি (এলপিআর) ছিলেন। ২০১৮সালে তিনি সম্পূর্ণ অবসর প্রাপ্ত হন। লোন সম্পর্কে কিছু মনে নেই তার। তিনি এবিষয়ে মাঠ কর্মকর্তাকে দায়ি করেন।
মাঠ কর্মকর্তা মো সফিউর রহমান বলেন, ‘আমি ২০১৪সালে ওই শাখা থেকে বদলি হয়ে অন্য শাখায় চলে যাই। ওখানের বিষয় কি হয়েছে সেটা আমার মনে থাকার কথা নয়। লোনে সমস্যা হলে গত ১০ বছর যাবৎ আমাকে কেন অবহিত করা হয়নি। ১০বছরে লোন পরিশোধ না হলে অন্তত ৩বার নোটিশ হওয়ার কথা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি ব্যাংকের বরিশাল বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক গোলাম মাহাবুব বলেন, বিষয়টি জানার পর গতকাল বুধবার ওই শাখা পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।