মুভি দেখে বাবাকে খুন; হাতের কাটা দাগ দেখে ছেলেকে আটক করেছে পুলিশ

এম এ আশরাফ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

ভোলায় ইসলামী বক্তা আমিনুল হক নোমানী হত্যাকাণ্ডের সাতদিনের মাথায় রহস্যের জট খুলেছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারই ছেলে মো. রেদেয়ানুল হক (১৭)।

হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগে ঘাতক ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে জেলার তজুমদ্দিন উপজেলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শরীফুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এসপি শরীফুল হক জানান, হত্যার ‘কিলিং মিশনে’ রেদেয়ানুল হক একাই অংশ নিয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাবার কড়া শাসন মানতে না পেরে ক্ষোভে তিনি বাবাকে খুন করেন। এ জন্য ইউটিউবে বিভিন্ন ক্রাইম মুভি দেখে দক্ষতা অর্জন করেন—কীভাবে আঘাত করলে মৃত্যু নিশ্চিত হবে তা শিখে নেন।
দুই মাস আগে থেকেই বাবাকে হত্যার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এরপর হত্যার উদ্দেশে ছুরি, টি-শার্ট, ক্যাপ এবং হাতঘড়ি সংগ্রহ করেন।

তিনি আরও বলেন, বাবার শাসনে ক্ষোভ থেকে একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন রেদেয়ানুল। তবে ব্যর্থ হওয়ার পর বাবাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে থাকেন এবং গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঘরে একা পেয়ে বাবাকে খুন করেন। তবে এ হত্যাকাণ্ডে ছেলের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, সেটি তদন্ত করছে পুলিশ। ঘাতক সন্তান নিজ বাড়িতে থাকতেন না; বাবার সঙ্গে রাগ করে মামার বাড়িতে থাকতেন। তবে পড়াশোনা করতেন বাবার মাদরাসায়।

এদিকে হত্যার মোড় ভিন্ন দিকে নেওয়ার জন্য তার মামার টেবিল থেকে একটি গড়ি ঐ স্থানে রেখে পালিয়ে যায়। তবে প্রশাসনের তাকে প্রাথমিক জিগ্যেসা করার জন্য থানায় নিয়ে আসলে তার হাতের কাটা দাগ দেখে জিগ্যেসা করলে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন। তার তথ্যের ভিত্তিতে খালের থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত চুরিটি উদ্ধার করা হয়।

এই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোক, ক্ষোভ ও বিস্ময় বিরাজ করছে। মানুষ প্রশ্ন তুলছে— পরিবারে ধর্মীয় পরিবেশ থাকলেও সন্তান কীভাবে এমন নির্মম সিদ্ধান্ত নিতে পারলো? সন্তানকে শুধু শাসন নয়, সময়, ভালোবাসা ও বোঝাপড়ার গুরুত্ব আজকের সমাজে কতটা প্রয়োজনীয়— এই ঘটনা যেন তারই নির্মম বাস্তবতা।

উল্লেখ্য, আমিনুল হক নোমানীকে  শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের উত্তর চরনোয়াবাদ এলাকায় নিজ বাসায় দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে জখম করে। পরে রাত ১০টার দিকে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন