বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক: পটুয়াখালীর বাউফলের কেশবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে সরকার দলীয় প্রতীক না থাকলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করে দিয়েছেন হাফ ডজনেরও বেশি আওয়ামী লীগ নেতা। এ তালিকায় নাম রয়েছে গত ইউপি নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও তথ্য-গবেষণা সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার হওয়া বশার খান এবং তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এনামুল হক অপু।
অনুষ্ঠেয় উপনির্বাচনে তারা দলীয় সমর্থন প্রত্যাশী হওয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে দ্বিধা- দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন মহল ম্যানেজ করে বহিষ্কৃতরা দলীয় সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যদিও মৌখিকভাবে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে দাবি করেন ওই দুই নেতা। তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দাবি, তাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করার বিষয়ে কিছু জানেন না। আর উপজেলা আওয়ামী লীগ বলছেন, দলীয় পদ ফিরে পেতে আবেদন করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ১১এপ্রিল কেশবপুর ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ সালেহ উদ্দিন পিকু। সেই নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নৌকার প্রতীকের বিরুদ্ধে প্রার্থী হন সহসভাপতি বশার খান ও তথ্য-গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এনামুল হক অপু। পরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে বহিষ্কার করেন উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট সালেহ উদ্দিন পিকুর মৃত্যুর ঘটনা শূন্য পদে উপ-নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ষোঘিত তফশিল অনুযায়ী আগামী ৯ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন থাকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন প্রত্যাশী হাফ ডজনেরও সম্ভাব্য প্রার্থী জোর লবিং তদবির ও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা হলেন- ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মালেক মিয়া, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম খান টিটু, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও ইউপি সদস্য আসাদুল হক জুয়েল, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ তুহিন, প্রয়াত চেয়ারম্যানের ভাই ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন সুজন, আবুল বশার খান ও তথ্য-গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এনামুল হক অপু।
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত দুই নেতা উপনির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন চাওয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতারা। বহিষ্কৃতরা দলীয় সমর্থন পেলে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হবে বলেও আশঙ্কা করেছেন অনেকে। এমনকি রক্তপাতের ঘটনাও ঘটে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কেশবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক মনিরুল ইসলাম খান টিটু বলেন, যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করেছেন, নৌকার কর্মী সমর্থকদের নির্যাতন- নিপীড়ন করেছেন তারা দলীয় সমর্থন পাওয়ার যোগ্য না। তারা দলীয় সমর্থন পেতেও পারে না। বিগত নির্বাচনে যারা নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের ওপর হামলা-মামলা করেছেন তারা এবার দলীয় সমর্থন পেলে ত্যাগী ও নিবেদিত নেতাকর্মীরা রাজনীতি করার মনোবল হারাবেন। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সুপারিশে তাদের বহিষ্কার করেন উপজেলা আওয়ামী লীগ। যেহেতু তাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের কোনো চিঠি পাইনি। সেক্ষেত্রে তারা এখনো বহিষ্কৃত হিসেবেই বিবেচিত।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান শামীম মুন্সি বলেন, বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এমনকি উপজেলা আওয়ামী লীগও আমাদের কিছু জানায়নি।
এবিষয়ে আবুল বশার খানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এনামুল হক অপু বলেন, ভুল স্বীকার করে আবেদনের প্রেক্ষিতে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের চিঠি পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে দলীয় হাইকামান্ডের কাছ থেকে জেনে নিন।
এবিষয়ে জানতে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. ফরিদ আহমেদ-এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘এনামুল হক অপু বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’