পৃথিবীর কোন দেশ আছে যে দেশের সীমান্তে তার বন্ধু দেশের নাগরিকদের হত্যা করা হয়? জানতে চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে এ কথা জানতে চান।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। আপনারা দেখেছেন যেসমস্ত চুক্তি ও সমঝোতা করা হচ্ছে, এর কোনোটাই বাংলাদেশের পক্ষে নয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে, তিনি আবার আমাদের ছবক দেন যে, আমরা নাকি চুক্তি আর সমঝোতার মাঝে পার্থক্য বুঝি না। আমাদেরকে তিনি পরামর্শ করার জন্য পরামর্শ দেন। আমি উনার কথা উত্তর দিতে চাই না। আমি শুধুমাত্র একটা কথাই বলতে চাই, দেশের সাথে বেইমানী করবেন না।
মানুষকে বোকা বানিয়ে তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে এমন চুক্তি ও সমাঝোতা সই করবেন না যেগুলোর আমার জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে।
সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কী এনেছেন এবার ভারত থেকে? পানির কথা কোথাও নেই, যেটা আছে সেটা ভয়াবহ। সেটা হচ্ছে তিস্তাচুক্তির জন্য ভারতে ভালো প্রস্তাব দিয়েছে, চীনও দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেছেন, দুটোর মধ্যে দেখব কোনটা ভালো হয়।
আবার এ-ও বলেছেন, ভারত যে প্রস্তাব দিয়েছেন ভারতকে যদি কাজটা দেই, তাহলে পানির সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরা তো সব বোকা মানুষগুলো এই দেশে বাস করি? পক্ষান্তরে আপনি যেটা করেছেন তিস্তার পানি বন্টন সমস্যা, সেটা বাতিল করে দিলেন। অভিন্ন নদীগুলোর পানি বন্টন সমস্যা, সমস্যা রইল না। এবার বাংলাদেশকে পুরোপুরি ভারতের কাছে জিম্মি করে দিচ্ছেন।
সীমান্ত হত্যা প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিদিন সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা করা হয়।
গতকালও হত্যা হয়েছে। এই বিষয়ে আপনারা (সরকার) একটা কথাও বলেননি। আমাদের সরাসরি প্রশ্ন আপনাদের কাছে, পৃথিবীতে কোন দেশ আছে, বন্ধু দেশ, একেবারে এতো বন্ধু যে সম্পর্ক নাকি স্বামী-স্ত্রীর মতো, তাহলে কোন দেশ আছে তার সীমান্তে বন্ধুরা গুলি করে আমাদের নাগরিকদের হত্যা করে। এই বিষয়গুলির জবাব দিতে হবে। আপনারা (সরকার) আত্মরক্ষার্থে যেসব কথা বলেন, এসব কথা বলে জনগণকে বোকা বানাতে পারবেন না।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কেন বন্দী করে রেখেছেন, সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, কোনো সমস্যা যদি না থাকে তাহলে মুক্তি দেন। সেদিকে তো আপনারা যাচ্ছেন না। আমরা এ-ও বলিছি, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমরা শুধুমাত্র চাই, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। সেই নির্বাচনে যারা আসবে তাদেরকে আমরা ফুলের তোরা দিয়ে বরণ করে নেব। আপনারা শুধুমাত্র আপনাদের রাখার জন্য সমোস্ত নির্বাচন ব্যবস্থাকে দখল করে নেবেন , সাধারণ মানুষের কথা একবারও চিন্তা করবেন না, সেটা আমরা হতে দেব না।
তিনি আরও বলেন, আমাকে অনেকে বলেন, আপনারা শুধুমাত্র খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যই আন্দোলন করেন? আমি বলি নো। আমরা গত দুই বছর আন্দোলন করেছি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে, মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন করেছি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, ব্যাংক লুটের বিরুদ্ধে ও টাকা পাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আমরা এখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যে আন্দোলন করছি এটা সামগ্রিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন। কারণ, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রকে আলাদা করে দেখা যাবে না। এই আন্দোলন শুধুমাত্র বিএনপির আন্দোলন হওয়া উচিত নয়। এই আন্দোলন সমগ্র দেশের মানুষের।
অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের যাত্রা শুরু, এটা চলবে- যতক্ষণ পর্যন্ত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে জনগণের মাঝে ফিরে না আসে। খালেদা জিয়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী নেত্রী। এই নেত্রী যদি ওয়ান-ইলেভেনে আপোস করতেন তাহলে তিনি এখনো প্রধানমন্ত্রী থাকতেন।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ভারতের সাথে যত চুক্তি করেছে সবচুক্তি দেশের স্বার্থবিরোধী। শুধুমাত্র তাই নয়; এই চুক্তি দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ। গণতন্ত্রের প্রশ্নের এই সরকারকে আর ছাড় দেওয়া যাবে না। এই আন্দোলন শুধুমাত্র নয়াপল্টনে নয়; সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এই সরকারের সকল অনৈতিক কর্মকান্ড জালিয়ে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব।
ক্ষমতাসীন সরকারের দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান আজিজ আহমেদ, পুলিশের সাবেক প্রধান বেনজীর আহমেদ আরো অনেকে আছেন। এরা সবাই শেখ হাসিনার প্রোডাক্ট। এই দুর্নীতিবাজদের আড়তদার শেখ হাসিনা। তাকে সরাতে হবে। তা না হলে দেশকে রক্ষা করা যাবে না।
গত শুক্রবার দিবাগত রাতে বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে এ্যাম্বুলেন্স ও জীবনরক্ষাকারী ঔষধ চেয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের সহযোগিতা চাইলেও হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকৃতি জানায়। এ প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মৃত্যুর শঙ্কা থাকলেও এ হাসপাতাল এবং তাদের কোনো চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেব না। এটাই আমার প্রতিবাদ।
আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, যে হাসপাতাল এ ধরনের গড়িহিত কাজ করেছে, সেই হাসপাতালের আমিও একজন পরিচালক। আমি আগামী বোর্ড মিটিংয়ে এর জবাবদিহিতা চাইব, এর প্রটেস্ট করব।
নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও ফোরামের সদস্য সচিব এবং ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি,আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা শিরীন সুলতানা, সরাফত আলী সপু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, ডা. রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, যুবদলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন,গোলাম মাওলা শাহীন প্রমুখ।