

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিদেশি বিনিয়োগের স্বার্থে জাতীয় নির্বাচন দ্রুত হওয়া উচিত। যারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়, তাদের জনপ্রিয়তাই শেষ পর্যন্ত হ্রাস পাবে।
তিনি বলেন, “যারা দেরিতে নির্বাচন চান, তারা আসলে সময় নিয়ে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করতে চান। ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে চান। এজন্যই তারা সময় চান, নির্বাচন দেরিতে চায়।”
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
আগামী দিনে বিএনপির কূটনৈতিক অবস্থান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ্যানি বলেন, “বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকবে, প্রভু নয়।” তিনি বলেন, ভারতের ভূমিকায় সার্ক আজ কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে, তবে এ জন্য কেবল ভারত নয়, আওয়ামী লীগও সমানভাবে দায়ী। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সার্ককে পুনরায় সক্রিয় করতে কাজ করবে। প্রতিটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।
গণমাধ্যম সংস্কার প্রসঙ্গে শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, “বিএনপি ফ্রি মিডিয়ার পক্ষে। আমরা বিশ্বাস করি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
এরশাদ ও শেখ হাসিনার স্বৈরাচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের দল দাবি করলেও তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি। বরং ভারতে আরাম-আয়েশে ছিল। তারা কখনোই জনমানুষের দল ছিল না। এরশাদ স্বৈরাচার ছিলেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ ছিল স্বৈরতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী—দেশ ধ্বংসে তাদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি।”
তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে এ্যানি বলেন, “তার দেশে ফেরার পথে কোনো বাধা নেই। প্রস্তুতি নিতে সময় নিচ্ছেন মাত্র।” তিনি আরও বলেন, “তারেক রহমান অসুস্থ মা খালেদা জিয়ার অবর্তমানে দলের ভার কাঁধে নিয়ে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আগস্টের সহিংস পরিস্থিতিতে তিনি শান্তির বার্তা দিয়ে ঐক্যের ডাক দেন, যা মানুষকে আশ্বস্ত করেছিল।”
২০২৪ সালের চলমান আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, “জুলাইয়ের আন্দোলন হবে গণঅভ্যুত্থান।” তিনি দাবি করেন, দেশের সংকটময় মুহূর্তে বিএনপি দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখে সঠিক বার্তা দিয়েছে।
সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এ্যানি বলেন, “আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর ধরে ব্যক্তিগত দুর্নীতিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাপোর্ট দিয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এমন পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনবে না।”
তিনি আরও বলেন, “২০১৪ সালে ভোটের কোনো পরিবেশ ছিল না, ২০১৮ সালে রাতের আঁধারে ভোট হয়েছে, আর ২০২৪ সালে বিরোধী দলকে গ্রেপ্তার করে নির্বাচন করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ কখনোই প্রকৃত গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি।”
এ্যানি বলেন, “জিয়াউর রহমান দেশের জন্য অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছেন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তাদের শাসনামলে কোনো ফ্যাসিবাদ বা কর্তৃত্ববাদ ছিল না।”
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “গত ১৭ বছরের দুঃশাসনের মধ্যেও তারেক রহমানের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার ফলে দেশ বড় কোনো অস্থিরতায় পড়েনি। এই আস্থাই বিএনপির শক্তি। আমরা বিশ্বাস করি, আগামী দিনে তারেক রহমানের নেতৃত্বেই দেশে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।”
বিএনপির প্রস্তাবিত ৩১ দফা সম্পর্কে তিনি বলেন, “এই রূপরেখা জনগণের মধ্যে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে ‘১০ বছরের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না’—এই প্রস্তাব তারেক রহমানের একটি যুগান্তকারী চিন্তার প্রকাশ।