ঠাকুরগাঁওয়ে নায়ক রহমানের ১৫তম মৃত্যু বার্ষিকীতে আলোচনা ও স্মরন সভা অনুষ্ঠিত

নায়ক রহমানের ১৫তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে ঠাকুরগাঁওয়ে রহমান স্মৃতি সংরক্ষন পরিষদ ও কর্নেট সাংস্কৃতিক সংসদের আয়োজনে কর্নেড কার্যালয়ে আলোচনা ও স্মরন সভা অনুষ্ঠিত হয়।সকালে তাঁর বাল্য বন্ধু আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম নিচি নায়ক রহমানের জন্মস্থান আটোয়ারীতে দোয়া মাহফিল ও কবর জিয়ারতের আয়োজন করেন।

গত শনিবার(১৮ জুলাই) সন্ধায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন, নায়ক রহমান স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রবাল, জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রিজু, কর্নেট সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি সৈয়দ নুর হোসেন বাবলু, নিশ্চিত পুর থিয়েটারের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মোস্তাফা হোসেন মনি প্রমূখ।
এসময় বক্তারা কিংবন্দন্তি এই নায়কের স্মরনে জাতীয়ভাবে অনুষ্ঠান উদযাপনের আহব্বান জানান।

ষাটের দশকের বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি এই নায়কের পুরো নাম আব্দুর রহমান। তাঁর অভিনিত সাদা-কালো যুগের সুপার হিট ‘জোয়ার ভাটা’। এই সিনেমার জুটি ছিলেন শবনম। পরেএকই জুটির রঙিন ছবি ‘আমার সংসার’। সেই সময়ের সেরা রোমান্টিক জুটি ছিলেন তারা। বাংলা ও উর্দূ ভাষার চলচিত্রের দাপুটে জুটি ও ছিলেন তারা।
বাংলাদেশের সিনেমায় বিশেষ অবদান রাখা এই মানুষটি আব্দুর রহমান। ১৯৩৭ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রসেয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । সেই সময় কোন মুসলিম সমভ্রান্ত পরিরের কেউ অভিনয় করবে ভাবাই যেতো না। ১৯৫৭ সালে ২১ বছর বয়সে সিনেমার টানে বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় আসেন রহমান। ঢাকায় এসে খুঁজে বের করেন আরেক কিংবদন্তি চলচিত্র নির্মাতা ক্যাপ্টেন এহতেশামকে (আবু নুর মোহাম্মাদ এহতেশামুল হক)। তার পরিচালিত ‘এ দেশ তোমার আমার’ চলচিত্রে অভিষেক হয় তার। ছবিটি ১৯৫৯ সালে মুক্তি পায়। তারপর একের পর এক চলচিত্রে অভিনয় করে গেছেন।

১৯৬৭ সালে ‘দর্শন’ চলচিত্রটি নির্মাণের মাধ্যমে পরিচালনায় আসেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে অসংখ্য জনপ্রিয় চলচিত্রের নায়ক ছিলেন তিনি। এগুলোর মধ্যে ১৯৮১ সালে দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত ‘অংশীদার’ চলচিত্রটি কালজয়ী হয়ে আছে। তার পরিচালিত উর্দু চলচিত্র হলো ‘দর্শন’, ‘কঙ্গন’, ‘যাহা বাজে সেহনাই’ ইত্যাদি। আর বাংলা চলচিত্র ‘নিকাহ’। তিনি উর্দু চলচিত্র ‘চাহাত’, ‘দোরাহা’ ও ‘লগান’-এ অভিনয় করেন।
প্রখ্যাত চলচিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উপন্যাসের চলচিত্রায়ণ ‘দেবদাস’ নির্মাণ করেন। সেখানে নায়ক রহমান চুনি লালের চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮১ সালে দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত ‘অংশীদার’ চলচিত্রেও তিনি দুর্দান্ত অভিনয় করেন। রহমান অভিনীত শেষ চলচিত্র ছিল অশোক ঘোষ পরিচালিত ‘আমার সংসার’।

মাসুদ চৌধুরীর পরিচালিত ‘প্রীত না জানে রীত’ চলচিত্রের শুটিং করতে গিয়েসিলেটে গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনি একটি পা হারান। এ দুর্ঘটনায় পা হারানোর পর রহমানের ক্যারিয়ার থমকে যায়। বাংলা, উর্দু ও পশতু ভাষার চলচিত্র সমানভাবে জনপ্রিয় অভিনেতা রহমান অভিনীত উল্লেখ্য চলচিত্রগুলো হলো উর্দুতে ‘চান্দা’, ‘তালাশ’, ‘মিলন’, ‘বাহানা’, ‘ইন্ধন’, ‘দর্শন’, ‘জাহাঁ বাজে সেহনাই’, ‘গোরি’, ‘প্যায়াসা’, ‘কঙ্গন, ‘দোস্তি’, ‘নাদান’; বাংলায় ‘এ দেশ তোমার আমার’, ‘রাজধানীর বুকে’, ‘এই তো জীবন’, ‘হারানো দিন’, ‘যে নদী মরু পথে’, ‘দেবদাস’।
কিংবদন্তি অভিনেতা রহমান ১৮ জুলাই ২০০৫ সালে চলে যান না ফেরার দেশে।