সীমান্তে চোরাচালান ঠেকাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী সহ বিভিন্ন চরঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকায় গরু বা মহিষের বাচ্চা জন্ম নিলেই বাধ্যতামূলকভাবে করতে হবে নিবন্ধন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানে কাছে এ নিবন্ধন করতে হয়।
নিজের কাছেও রাখতে হয় এ সংক্রান্ত একটি খাতা। খাতায় নিবন্ধনের পুরনো বাধ্যতামূলক এ নিয়ম মূলত সীমান্তবর্তী এলাকায় গরু-মহিষের অবৈধ চোরাচালান ঠেকাতে করতে হয়। দেশের সীমান্তবর্তী এ এলাকায় গরু-মহিষের চোরাচালান হয় অনেক।
এ কারণে রেজিস্ট্রার খাতায় পুরো ইউনিয়নের গরু মহিষের সংখ্যা সংরক্ষণ করা হয়। একটি বিজিবি ক্যাম্পে থাকে, আরেকটি থাকে ইউনিয়ন পরিষদে। একটি খাতা পশু মালিক রাখেন। কেউ গরু-মহিষ বেচাকেনা করলে এ হিসেব রাখা হয়।
এমনকি কারও বাসায় নতুন কোন গরুর জন্ম নিলেও বিজিবি ক্যাম্প ও ইউনিয়ন পরিষদের রেজিস্ট্রার খাতায় সংযোজন করতে হয়। কেউ বাইরের গরু-মহিষ কিনে আনলে সেটিও বিজিবি এবং ইউনিয়ন পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। আবার কেউ তার গরু বিক্রি করতে চাইলে তাও জানাতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ তখন ছাড়পত্র দেয়।
আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বলেন, অনেক আগে থেকেই এ নিয়ম চলছে। তবে ২০১৭-১৮ সাল থেকে ব্যাপারটি বেশ কড়াভাবে দেখছে বিজিবি। আমরা ছাড়পত্র দিলেও মোট হিসাব আমাদের কাছে নেই। বিজিবির কাছে পুরো ইউনিয়নের হিসাব আছে। তারা জানে কোন বাড়িতে কয়টা গরু আছে।
তিনি আরও বলেন, ক্রয়-বিক্রয়ের ছাড়পত্র ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দিলেও তা বিজিবির রেজিস্ট্রার খাতায় তোলা লাগে। যে ছাড়পত্র দেওয়া হয় তাতে চেয়ারম্যান, একজন মেম্বার ও বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডারের সই লাগে। এরপর কেউ সেই পশু ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে। এ ক্ষেত্রে পশুর মালিককে ক্যাম্পে তার গরু-মহিষ টেনে নিয়ে আসা লাগে।
ইউপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, এখানকার অনেকেই শুধু গরু লালন-পালন করেই সংসার চালান। কারও কারও একসঙ্গে ৪০-৫০টিও গরু আছে। একসঙ্গে এতোগুলো গরুকে খাওয়ানোর সামর্থ্য তাদের নেই।
তাই তারা গোদাগাড়ী উপজেলার আলাতলী ইউনিয়নের বিশাল মাঠে গরু নিয়ে যান খাওয়াতে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গরু চড়িয়ে সন্ধ্যা হলে তারা নিজের গোয়ালগরে নিয়ে আসেন। সেই গোয়ালঘর কোথায় সেটিও বলা লাগে তাদের। হিসাব রাখার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাটি ভালো হলেও সাধারণ মানুষের কাছে এটি বেশ ঝামেলার কাজ।
গরু-মহিষ নিয়ে এখানে-ওখানে যাওয়ার কারণে অনেকেই এটি পছন্দ করেন না বলেও জানান চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ।
রাজশাহী বিজিবি অধিনায়ক সাব্বির আহম্মেদ বলেন, গরু-মহিষের জন্য সীমান্তবর্তী বিওপি ক্যাম্পগুলোতে একটি রেজিস্ট্রার খাতা মেনটেইন করা হয়। এটি স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ক্যাম্প কমান্ডারদের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। মূলত চর এলাকায় কী পরিমাণ গরু আছে, সেটির একটি হিসেব বিজিবির থাকে। তা না হলে সীমান্তে গরু চোরাচালান রোধ সম্ভব নয়। যে কেউ ওপার থেকে গরু এনে বলে দেবে যে, ওই গরুগুলো তার।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত সীমান্তবর্তী এলাকা থেকেই অবৈধভাবে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে ঢোকে। এ সিস্টেমের কারণে গরু-মহিষের চোরাচালান রোধ হয়েছে। এমনকি আমরা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় পশুর সঠিক হিসাবও রাখতে সক্ষম হচ্ছি।