নতুন প্রজন্মের প্রত্যেকেই সব কিছু তাড়াতাড়ি জেনে নিতে আগ্রহী। তাই যৌনতা নিয়ে তারাও কৌতূহলি। সম্প্রতি কম বয়সে যৌন সম্পর্ক নিয়ে একটি গবেষণা করা হয়। এই গবেষণা থেকে উঠে এসেছে এ নতুন তথ্য। ‘সেক্স’ শব্দটা শুনলেই কম বেশি সকলের মনে অদ্ভূত অনুভূতি জাগে।
এতে কম বয়সি ছেলে-মেয়েরা এতে আকৃষ্ট হতে পারে। যদি এদের উচিত শিক্ষা না দেওয়া হয় তবে এদের মধ্যে বিপথে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে। ভারতের দেশগুলির মধ্যে একটি যেখানে নাবালিকা গর্ভবতীর সংখ্যা বেশি। আর এটা জেনেও আশ্চর্য হওয়ার কথা নয় যে সেখানে বেশির ভাগই মেয়েই বিবাহিত।
গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, বাবা-মায়ের যখন জানতে পারেন যে তার নাবালক সন্তান সহবাসে লিপ্ত, তখন তারা হয় তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন নয়ত সব জেনে বুঝেও চুপ করে থাকেন। কেবল মাত্র এক তৃতীয়াংশ বাবা-মা তাদের সন্তানদের সঙ্গে কথা বলেন। এবং তাদের শিক্ষিত করে তোলেন৷
বেশিরভাগ লোকই তাদের সন্তানদের সামনে নিজের স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা ব্যক্ত করতে অস্বস্তি বোধ করেন। মা-বাবা ও সন্তানদের মধ্যে যৌনতা নিয়ে খুব সীমিত আলোচনা হতেই দেখা যায়। বোধহয় এই কারণের জন্যেই কৈশোরের একটি বড় সংখ্যা দোটানায় জীবন কাটায়। যখন বাবা-মা তাদের যৌন জীবন সম্পর্কে জানতে পারেন তখন ঠিক কি করা উচির তা বুঝতে পারেন না।
সামাজিক সম্পর্ক না থাকার জন্য ও মা-বাবার থেকে তারা যৌনতা সম্পর্কে কোন তথ্য জানতে না পেরেই ইন্টারনেটের সাহায্য নেয়। অভিভাবকরা বুঝতেই পারেননা তাদের সন্তান ইন্টারনেটে কি দেখছে। এর ফলে দেখা যায় বেশির ভাগই নাবালকরা অশ্লীল সাইট দেখা শুরু করে। এই ধরণের সাইটে যৌনতাকে আরও বেশি আকর্ষক করার জন্য তাকে অনেক বেশি রং চড়ানো হয়।
এতে অন্তরঙ্গতার বদলে বাসনা ও তৃপ্তির উপর বেশি জোর দেওয়া হয়৷ ফলে বেশির ভাগ বাচ্চাই এগুলি থেকেই যৌনতার বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করে। এই কারণে আমরা প্রায়শই বাচ্চাদের সেক্স সংক্রান্ত খবর জানতে পারি।
ভারতে বিয়েকে পবিত্র সম্পর্কে বলে মনে করা হয়। কিন্তু বড় শহরগুলির যুবসমাজ বিবাহকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়না। বেঙ্গালুরু সেই শহরগুলির মধ্যে একটি যেখানে বেশিরভাগ যুবকই জানিয়েছেন যে তারা অর্থের বিনিময়ে যৌনতা কিনেছেন।
প্রায় ২০ শতাংশের মতামত বার বার একজনের সঙ্গে সহবাসের ফলে সম্পর্কে একঘেয়েমি আসতে পারে৷ তেমনই হায়দরাবাদ ও মুম্বইয়ের যুব সমাজ মনে করে বিয়ের পরেও পরকীয়া সম্পর্ক রাখার মধ্যে খারাপ কিছুই নেই।
মনোবিজ্ঞানিকরা মনে করেন এই ধরণের ব্যবহার যুব সমাজকে আরও বেশি স্বচ্ছল করে তুলছে। একজন মধ্যবয়স্ক ভারতীয় যৌনতা নিয়ে এখনও অনেক বেশি আতঙ্কিত ও সতর্ক থাকেন কিন্তু ভারতের যুব সমাজকে এই বিষয়েও আরও অনেক জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
আদতে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ একটি সাধারণ ব্যপার কিন্তু এই বিষয়টি তখনই গম্ভীর হয়ে ওঠে যখন একজন কিশোরী অল্প বয়সেই সমস্ত কিছু জানতে ও হাতের নাগালে পেতে চায়৷ কম বয়সে একজন শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপণের জন্য পরিপূর্ণ হয়না। এই সময়ে সন্তানকে বোঝানোর দায়িত্ব গোটাটাই অভিভাবকদের উপরেই থাকে।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণা করে জানিয়েছেন ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সেই বেশির ভাগ কিশোর ইন্টারনেটে অশ্লীল তথ্য দেখতে শুরু করে।
এবিসি’র একটি রিপোর্টে জানানো হয়েছে, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ভারতীয় মনোবৈজ্ঞানিক রাজ সিথার্থন ও তার স্ত্রী গৌমতি সিথার্থন প্রায় ৮০০ জনের উপর একটি পরীক্ষা করেছেন। এই গবেষণা অনুযায়ী ইন্টারনেটে যারা অশ্লীল সাইট দেখেন তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ পুরুষ।
আধুনিক জীবনশৈলীর কারণে স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে যৌন রোগ ও এই বিষয়ে সচেতনাতা বাড়ানোর বিষয়ে পদক্ষেপের উপর জোর দিতে হবে৷ সত্যি কথা হল এদেশে এই বিষয়ে এখনও যথেষ্ট সচেতনতার অভাব৷ দেশে যারা অ্যাডাল্ট এডুকেশন নিয়ে থাকেন তাদের মধ্যে মাত্র এক তৃতীয়াংশ যুবক এইচআইভি সংক্রমণের ব্যাপারে জানেন। একটি গবেষণায় এমনও পাওয়া গেছে যে, এক তৃতীয়াংশ শিক্ষকদের এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে তাদের নিজেদেরও আরও অধ্যয়ন করতে হবে।
সংযুক্ত জনসংখ্যা কোষের পক্ষ থেকে একটি গবেষণায় যে তথ্য সামনে উঠে এসেছে তা হল, অ্যাডাল্ট স্কুলেগুলিতে মাত্র ৩১ শতাংশ ও সাধারণ স্কুলের মাত্র ২০ শতাংশ ছাত্ররা এইচআইভি ও এইডসের সম্পর্কে জানে।
ভারত বা এশিয়ার অন্য দেশগুলিতও কম বয়সী ছেলেমেয়েরা শারীরিক সম্বন্ধে আবদ্ধ হতে পারে। বৈজ্ঞানিকরা জানিয়েছেন এতে কৈশোর অবস্থায় মানসিক বিকাশ বাধা পেতে পারে।
তারা জানাচ্ছেন যে এই বয়সে শরীরিক গঠন পুরোপুরি বিকশিত না হওয়ার যৌন সম্পর্কের ফলে শরীরেও ব্যপক প্রভাব পড়তে পারে। এমনও জানা গিয়েছে যে, কম বয়সে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ফলে মানসিক অবসাদ আসতে পারে। এছাড়াও এতে মস্তিষ্কের পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।