ইতালির পাঠ্যবইয়ে স্থান পেল বাংলাদেশের ‘জুলাই বিপ্লব’-এর কবিতা

বাংলাদেশের এক শিক্ষক ও কবির লেখা ইংরেজি কবিতা এখন ইউরোপের শিক্ষাব্যবস্থায় জায়গা করে নিয়েছে। “Rule Over Ashes” শিরোনামে কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ইতালির উচ্চ মাধ্যমিক ইংরেজি সাহিত্যের পাঠ্যবইয়ে। কবিতাটি শুধু সাহিত্যের জন্যই নয়, বরং বাংলাদেশের ইতিহাস, সাহস এবং ন্যায়ের বার্তা বিশ্বদর্শনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

কবিতাটির রচয়িতা মোঃ নাঈম আজিজ, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক এবং প্রকৌশলী হলেও, নিজেকে একজন কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত করতে পছন্দ করেন। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী এই কবি বিশ্বাস করেন, “কবিতা কেবল আবেগের প্রকাশ নয়—এটি একটি সময়ের দলিল, একটি প্রতিবাদের ভাষা।” এর আগেও তিনি দুইটি যৌথ কাব্যগ্রন্থের সম্পাদক ছিলেন— “বেলা শেষে” ও “বাংলার কবি ও কবিতা”।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দেশের তরুণদের প্রতিবাদ ও আত্মত্যাগ কেন্দ্র করে জন্ম নেয় এক সামাজিক-রাজনৈতিক অভ্যুত্থান, যা ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে পরিচিত। সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, মোঃ নাঈম আজিজ লেখেন “Rule Over Ashes” কবিতাটি, যা জুলাই মাসের শেষ ভাগে রচিত হয়ে ২৪-২৭ জুলাইয়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক অনলাইন কবিতা প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রকাশিত হয়।

They sacrificed their lives,
Answering the call.
They accepted martyrdom.
To bring justice for all.

কবিতাটি দ্রুতই আন্তর্জাতিক পাঠকমহলে সাড়া ফেলে এবং সাহিত্য বিশ্লেষকদের নজর কাড়ে। ২০২৫ সালের মার্চে ইতালির শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিষয়ক প্রকাশনা সংস্থা Sanoma Italia কবির সঙ্গে যোগাযোগ করে কবিতাটি তাদের ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার আগ্রহ প্রকাশ করে। কবির সম্মতি অনুযায়ী, এটি এখন ইতালির উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির পাঠ্যসূচির অংশ।

Sanoma Italia, যার অধীনে রয়েছে ব্র্যান্ড যেমন Paravia ও Bruno Mondadori, ইতালির চার মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থী এবং হাজারো শিক্ষককে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে। এই সংস্থাটি শিক্ষায় মানবিকতা, ইতিহাস এবং নৈতিক শিক্ষার গুরুত্বকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়।

কবিতার আরেকটি প্রভাবশালী চরণ:
Justice leads the way,
When darkness falls.
We’ll light the night,
With patience and hope—
We’ll set things right.

এই কবিতার মাধ্যমে ইউরোপের শিক্ষার্থীরা এখন জানছে, কীভাবে বাংলাদেশের তরুণেরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং ইতিহাস রচনা করেছে। এই সাহিত্যকর্ম শুধুমাত্র একটি কবিতা নয়, এটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের সাহসী ছাত্রদের কণ্ঠস্বর।

কবি মোঃ নাঈম আজিজ জানান, “যারা ‘জুলাই বিপ্লব’-এর সময় সাহস দেখিয়েছেন, আমি তাদের কণ্ঠস্বর হয়েছি এই কবিতায়। আমি কখনও ভাবিনি আমার লেখা একটি কবিতা ইউরোপের পাঠ্যবইয়ে স্থান পাবে। কিন্তু আজ যখন জানি, বাংলাদেশের ইতিহাস এখন ইউরোপের ছাত্রদের পাঠ্য, তখন মনে হয়—শব্দ কখনও ছোট নয়, কবিতা কখনও নীরব নয়।”

তিনি আরও বলেন, “এই সাফল্য শুধুমাত্র একজন কবির নয়—এটি বাংলাদেশের সাহসী তরুণদের জন্য এক আন্তর্জাতিক সম্মান। আমার সাহিত্যচর্চা সেই জায়গা থেকে, যেখানে শব্দ হয়ে ওঠে প্রতিবাদ, ছন্দ হয়ে ওঠে প্রতিরোধের ভাষা।”
শেষে কবি বিশ্বাসের সাথে উচ্চারণ করেন:
“কবিতায় ইতিহাস লেখা যায়।
ছাত্রদের হাতেই আগামীর আলো।
আর যখন দেশ নিঃশব্দ হয়, তখন কবিরাই শব্দ করে।”