৩৬তম বিসিএসে সেরা ৫ পুলিশ কর্মকর্তার গল্প

৩৬তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ নিতে সারদা এসেছিলেন ১১৭ জন নবীন পুলিশ কর্মকর্তা। শুরু হয়েছিলো ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, আর শেষ হলো এক বছর পরে ১৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে। নবীন পুলিশ কর্মকর্তারা সফলভাবে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে দেশের মানুষের জন্য কিছু করার শপথ নিয়েছেন।

গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই ব্যাচের সেরা ৫ শিক্ষানবীশ সহকারি পুলিশ সুপার জানিয়েছেন দীর্ঘ ১ বছরের অনুভূতি আর আগামীদিনের স্বপ্নের কথা।

বেস্ট প্রবেশনার সালাহ্উদ্দিন ‍রিফাত
‘প্রথম হয়ে এসেছিলাম প্রথম হয়েই বের হতে চেয়েছিলাম’ এভাবেই নিজের সফলতার কথা বলছিলেন ৩৬ তম বিসিএস পুলিশে প্রথম এবং একই সাথে বেস্ট প্রবেশনার ও হর্সম্যানশিপ অ্যাওয়ার্ড পাওয়া রিফাত সালাহ্উদ্দিন। কাজের প্রতি একনিষ্ঠ ও নিজের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব পালনে পালনে সিদ্ধহস্ত রিফাত কোর্স সিনিয়র হওয়ায় প্রশিক্ষণের শুরু থেকেই অন্যদের থেকে কিছুটা বেশি ব্যস্ততার মাঝেই কেটেছে তার পুরোটা সময়।

ভোলার ছেলে রিফাত এসএসসি এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন ভোলাতে। স্নাতক-স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগ থেকে।

প্রশিক্ষণ শুরু করার পর প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হলেও বেশ দ্রুতই খাপ খাইয়ে নেন শ্রেষ্ঠ হওয়া এ পুলিশ কর্মকর্তা।

রিফাত মনে করেন, যেকোনো ঘটনায় পুলিশই প্রথম রেসপন্স করতে পারে। এ পেশায় থেকেই জনগণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করার সুযোগ সবচেয়ে বেশি। পুলিশের প্রতি মানুষের অাস্থার ভিতটা শক্ত করতে চান তিনি। কাজ করতে চান জনগণের বন্ধু হয়ে।

নিজের সফলতার কথা বলতে গিয়ে এই কর্মকর্তা বার বার স্মরণ করেছেন ব্যাচমেটদের। রিফাতের ভাষায়, বেস্ট প্রবেশনার হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছি, এটা অনেক সম্মান ও গৌরবের। তবে এ বিষয়ে আমার ব্যাচমেটরা আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে, সহযোগিতা করেছে। এজন্য তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

প্যারেড কমান্ডার শারমিন আকতার চুমকি
৩৬তম বিসিএসের নারী প্যারেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের গৌরব অর্জন করেছেন শারমিন আকতার চুমকি। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্রথম নারী প্যারেড কমান্ডার ছিলেন এলিজা শারমিন, ২৫তম বিসিএসে প্যারেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। এর দীর্ঘ ১৫ বছর পর আবার সেই জায়গা নিয়েছেন চুমকি।

জয়পুরহাটেরে মেয়ে চুমকি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে।

সাহসী এ নারীকে বিসিএসের ভাইভা বোর্ডে বলা হয়েছিলো, “এই মেয়ে তোমারতো অনেক সাহস! তোমাকে পুলিশ হলেই বেশি মানাবে” এরপর থেকেই পুলিশ ক্যাডারের প্রতি এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করতে থাকে তার।

নারীদের পাশে থাকতে চান তিনি। বর্তমানে নারীরা সবচেয়ে অনিরাপদ উল্লেখ করে চুমকি বলেন: আমি নারী সমাজের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করতে চাই। কোনো অসহায় নারী এসে যেনো হাসিমুখে ফিরতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে চাই। আমি বিশ্বাস করি একজন নির্যাতিত নারী একজন পুরুষ কর্মকর্তার কাছে যতটা না সহজে তার সমস্যার কথা বলতে পারবে, তার চেয়ে অনেক বেশি সহজে সমস্যাগুলো বলতে পারবে আমার কাছে।

অনেক সময় সঠিক তদন্তের অভাবে নারীরা কোর্টে গিয়ে ন্যায়বিচার পান না উল্লেখ করে চুমকি বলেন: আমি এমনভাবে কাজ করতে চাই, যাতে নারীর প্রতি সহিংসতা কমে এবং একইভাবে নারীরা ভিকটিম হলে তারা যেনো ন্যায়বিচার পায়।

বেস্ট অ্যাকাডেমিক অ্যাওয়ার্ড সাইফুল ইসলাম খান (অপু)
৩৬তম বিসিএসের পুলিশ ব্যাচে বেস্ট অ্যাকাডেমিক অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন এ কর্মকর্তা। আর এজন্য ছিলো তার তীব্র প্রচেষ্টা ও আকাঙ্ক্ষা। স্বপ্ন দেখতেন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেয়ার। স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নেয়াতে তিনি আবেগাপ্লুত।

নবীন এ কর্মকর্তা স্নাতক-স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে। মেধাবী সাইফুল সেখানেও রেখেছেন তার সাফল্যের প্রমাণ। অনার্সে প্রথম শেণিতে প্রথম ও মাস্টার্সে দ্বিতীয় হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

সাভারের ছেলে সাইফুল কাজ করতে চান মানুষের জন্য। পুলিশ সম্পর্কে মানুষের যে নেতিবাচক ধারণা তা বদলাতে চান আত্মবিশ্বাসী এ কর্মকর্তা। থানায় এসে বা পুলিশের কাছে প্রতিটি মানুষ যেনো সহায়তা পায়, সেদিকটায় সর্বোচ্চ দৃষ্টি থাকবে তার।

সাইফুল বিশ্বাস করেন, পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ধারনার পরিবর্তন শুরু হয়েছে। পরিবর্তন হচ্ছে এবং হবে।

বেস্ট ফিল্ড পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন
ট্রেনিং এর প্রথমদিন মাঠটাকে সমুদ্র মনে হলেও পরে সেই মাঠটাই বন্ধু হয়ে যায় তার। আর এজন্য মিলেছে পুরস্কারও। শুরুর দিকে এক লম্বা যাত্রা মনে হলেও সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই প্রশিক্ষণের সঙ্গে মানিয়ে নেন নিজেকে।

কুমিল্লার ছেলে মামুন। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। এজন্য আদরের ভাগটাও অন্যদের থেকে একটু বেশিই। পরিবারের এই ছোট ছেলেটিই এখন আত্মীয়-স্বজনসহ সবার ভরসার একমাত্র আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছেন।

লেখাপড়া করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায়।

মামুন বিশ্বাস করেন, পুলিশের চাকরিটা এমন একটা চাকরি যেখানে চাইলেই মানুষের জন্য কিছু করা যায়। মানুষকে সাহায্য করা যায়।

পুলিশকে জনবান্ধব করতে চান শিক্ষানবীশ এ নবীন কর্মকর্তা। বিশ্বাস করেন, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও উর্ধ্বতনদের তদারকিই পারে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা বদলাতে।

বেস্ট শ্যুটার মোঃ খায়রুল কবীর
‘কাল থেকে আর ভোর ৫ টায় উঠতে হবে না’, ট্রেনিং শেষে এটা ভেবেই ভীষণ খুশি মোঃ খায়রুল কবীর। গুলি চালাতে দক্ষ হওয়ায় হয়েছেন বেস্ট শ্যুটার। ইঞ্জিনিয়ার হলেও বৈচিত্র্যময় কাজের প্রতি আকর্ষণ থেকে পুলিশে আসা তার। পছন্দ করেন চ্যালেঞ্জ নিতে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলে খায়রুল লেখাপড়া করেছেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক থেকে। সেজন্য তিনি মনে করেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন তা কোনো ফ্যাক্টর না। কীভাবে নিজেকে বিসিএসের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে সেটাই হলো বড় বিষয়। যেকোনো জায়গায় পড়ে যে কেউ পরিশ্রম করলেই সফল হতে পারে।

পুলিশে যোদানের বিষয়ে পরিবার থেকে পেয়েছেন পূর্ণ সহযোগিতা। জনস্বার্থে যেকোনো কাজ করতে প্রস্তুত এ কর্মকর্তা।

খায়রুলের ভাষায়, নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলেই পরিবর্তন সম্ভব।

খায়রুল মনে করেন, সবাই সেতিবাচক কাজে জড়াচ্ছে না। গুটিকয়েক মানুষ নেতিবাচক কাজে জড়িয়ে সমগ্র বাহিনীর সম্মানহানির কারণ হচ্ছে। আর সেই মানুষগুলো কেনো নেতিবাচক কাজে জড়াচ্ছে সেই নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করলেই পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলে যাবে।

৩৬তম বিসিএসের এইসব পুলিশ কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফটোসেশনেও অংশ নেন।

সূত্র: চ্যানেল আই অনলাইন