রঙ হল মানুষের দর্শন-সংক্রান্ত একটি চিরন্তন ধর্ম। আলোর বর্ণালী থেকে রঙ উৎপত্তি লাভ করে। রঙের গুরুত্ব আমাদের জীবনে ব্যপক! বিভিন্ন সময় ও মুড অনুযায়ী আমরা নিজেদের সাথে সাথে চারপাশকেও রাঙাই নানান রঙে। মানুষের জীবনে রঙ যে বেশ ভালোমতোই প্রভাব ফেলে বিজ্ঞানীরাও সে ব্যাপারে একমত। বেশকিছু গবেষণা শেষে তারা বলছেন, শোয়ার ঘরের দেয়ালের রং যদি হয় রক্ত-বেগুনি, তাহলে সন্তোষজনক যৌনজীবন যাপন করা যায়। আসুন জেনে নেই।
মানব জীবনে রঙের প্রভাব:
বাদামী রঙ আভিজাত্য এবং ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। এই ধরণের মানুষজন বেশ আকর্ষণীয় হয়ে থাকেন। তাদের কথা বলা থেকে শুরু করে ব্যক্তিত্ব সবই বেশ আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। তারা খুব জনপ্রিয় থাকেন। তারা একই সাথে সাধারণ এবং আভিজাত্য প্রকাশে সক্ষম হয়ে থাকেন। যে কারো সাথে ভালো করে মিশে যেতে পারেন।দোষঃ এরা নিজেদের ব্যক্তিত্ব ভালো ও খারাপ দুটো কাজেই ব্যবহার করতে পারেন। তারা মানুষকে আকর্ষণ করে নিজের কার্যসিদ্ধি করে নিতে পারেন।
খাবার ঘরের রং নীল হলে শরীরের ওজন কমে। এমন রংয়ের ঘরে বসে, চাইলেও কেউ বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করতে পারবে না। এজন্য গবেষণায় দেখা গেছে যারা নীল রং পছন্দ করেন, তাদের ওজন তুলনামূলক কম থাকে।আপনার প্রিয় রঙ নীল হয় তবে আপনার প্রকৃতি শান্ত। নীল সমুদ্রের রঙ। তাই যাদের নীল রঙ প্রিয় তারা সহজে শান্তি ও একাত্মতা খুঁজে নিতে পারেন যা অন্যরা পারেন না। এরা সাধারণত বিশ্বাসী হন।
মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। বিরক্তি ও রাগ কমাতে গোলাপি রঙের ভূমিকা অনন্য। যাদের পোশাকের মধ্যে গোলাপির প্রধান্য থাকে, তারা অন্যদের কাছে তুলনামূলক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে থাকেন। এরা সাধারণত নম্র স্বভাবের মানুষ হন। সংবেদনশীল ও কিছুটা শিশুমনের অধিকারী। সহজে বড় হতে চান না এরা। বাস্তব দুনিয়া থেকে পালিয়ে গোলাপি রহের আড়াল খোঁজেন এরা। পরিণত হওয়ার পর লাল রঙ এদেরে প্রিয় হয়ে ওঠে।
লালের প্রকোপ বেশি এমন পোশাক পরা নারীকে পুরুষরা বেশি পছন্দ করবে। আপনি সাহসী, প্যাশনেট এবং অন্যের মনে সহজে দাগ কাটতে পারেন। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন যারা লাল রঙ পছন্দ করেন তার সহজে অন্যকে আকর্ষণ করতে পারেন। এরা আত্মবিশ্বাসী হন এবং তা ব্যবহারও করতে জানেন।
মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, কারণ হলুদ রং মস্তিষ্ককে জাগ্রত করে। হলুদ:এরা আদর্শবাদী ও নিজেদের নিয়ে খুশি। তবে অনেকেই এদের গুরুত্ব দেন না। হলুদ রঙ পছন্দ করার জন্য অত্যন্ত আশাবাদী ও পজিটিভ হওয়া প্রয়োজন। ১০ বছর বয়সের পর থেকে যা মানুষ হারিয়ে ফেলে। তাই খুব কম মানুষেরই প্রিয় রঙ হয় হলুদ। এই আদর্শবাদী, আশাবাদী স্বভাবের জন্য এরা অদ্ভুত হিসেবে পরিচিত হন।
সবুজ মস্তিষ্ক শান্ত রাখতে সবুজের বিকল্প নেই। এজন্যই টিভি স্টুডিওগুলোতে ‘গ্রিনরুম’ নামে একটি ঘর থাকে। অনুষ্ঠানের আগে শিল্পীরা সেখানে বসে মস্তিষ্ককে সুস্থির করে নেন। মস্তিষ্কের প্রশান্তির জন্য সবুজের বিকল্প নেই।এরা জীবনে টাকা ও নিরাপত্তার উপর জোর দেন। যাদের সবুজ প্রিয় তারা প্রকৃতি ভালবাসেন। সম্পর্কে ও এরা সব সময় নিরাপত্তা খোঁজেন। এই সব মানুষরা নিজেদের সফল হিসেবে দেখতে চান। সামাজিক ইমেজ নিয়ে এরা খুবই সচেতন।
সাদা শুদ্ধতা ও বিশ্বাসের প্রতীক। প্রভাবের ক্ষেত্রেও তাই। সাদা পোশাক পরা মানুষকে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখি। তাই তো নার্স ও চিকিৎসকরা সাদা পোশাক পরেন!
সাদা: যাদের প্রিয় রঙ সাদা তারা সারল্য ভালবাসেন। এরা অন্যের কাছে নিজেকে সহজ, সরল, সত্ হিসেবে তুলে ধরতে চান। সব সময় যে বাস্তবে তারা তেমনটাই হন তা কিন্তু নয়। এরা নিজেদের নিয়ে যথেষ্ট সচেতন।
এটি অস্থিরকাতর প্রতীক। গবেষণায় দেখা গেছে, কালো পোশাক পরা লোক বেশি মারমুখী হয়। বেশিরভাগ নারী এই রঙের পোশাক পরা পুরুষের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ বোধ করেন। এরা কিছুটা মুডি, কিছুটা নাকউঁচু। জটিল বাস্তবের প্রতি আকৃষ্ট হন এই মানুষরা। সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে ভালবাসেন। এরা নিজেদের চারপাশ সবহসময় রহস্যময় করে রাখতে ভালবাসেন।
প্রিয় রঙ যাদের বেগুনি তারা নিজেদের মতো চলতে ভালবাসেন।এরা হিপি প্রকৃতির মানুষ হন।পৃথিবীটাকে বেগুনি কাঁচের মধ্যে দিয়ে দেখতে ভালবাসেন। বাস্তবের থেকে স্বপ্নের, অনিশ্চিত দুনিয়া এদের বেশি টানে। এদের ইনটিউশন প্রখর হয়।
কমলা রঙটি উচ্ছলতা, আনন্দ প্রকাশ করে। আপনি যদি কমলা রঙটি পছন্দ করেন তাহলে আপনি বেশ হাসিখুশি ধরণের একজন মানুষ। আপনি সব সময় বর্তমানতাকে বেশি গুরুত্ব দেন। এবং সব সময় হাসিখুশি থাকতে বেশি পছন্দ করেন। আপনি আপনার নিজের মতো চলতে বেশি ভালোবাসেন এবং নিজের জীবনটাকে অনেক বেশি উপভোগ করে কাটাতে চান।দোষঃ কমলা রঙ যারা পছন্দ করেন তারা অনেক বেশি ড্যাম কেয়ার ধরণের হয়ে থাকেন। অনেক সময় তারা নিজের মতামত অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে থাকেন।
সোনালি, ধূসর আধ্যাত্মিকতা এবং অতিমানবিকতা প্রকাশ করেন। এই ধরণের রঙ পছন্দের মানুষজন বেশ ঠাণ্ডা মাথার মানুষ হয়ে থাকেন। বেশ দার্শনিক স্বভাবের অধিকারী হন এরা। তাদের সকল চিন্তা থাকে পরিবেশের অনুকূলে। তারা অনেক কম কথার মানুষ হন এবং গম্ভির থাকতে বেশি ভালোবাসেন।তাদের গাম্ভীর্য অনেক সময় অনেক বিপদ ডেকে আনতে সহায়তা করে। এবং প্রয়োজনের সময়ও চুপ থাকা তাদের বড় একটি বদঅভ্যাস।
পোষাকে রঙ নির্বাচন
ফ্যাশনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়ে পোশাকের রঙ। পোশাকের রঙ নির্বাচন সঠিক হলে ফ্যাশন আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। ফ্যাশন সচেতন প্রতিটি ব্যক্তি পোশাক ক্রয়ের ক্ষেত্রে রঙ নির্বাচনে তত্পর। পোশাকের রঙ সঠিক হলে নিজেকে মানানসই করে ফুটিয়ে তোলা সহজ হয়ে পড়ে। রঙ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আবহাওয়া একটি বিবেচ্য বিষয়। সব মিলিয়ে পোশাকে রঙ এর ছটা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
শীতকালে লাল, হলুদ, উজ্জ্বল সবুজ অথবা নীল রং। গরমকালে হালকা গোলাপি, নীল রং। বর্ষাকালে হালকা কাপড়ের গাঢ় রং। বসন্তে গোলাপি, হলুদ, আকাশী অথবা হালকা সবুজ রং ব্যবহার করুন। এছাড়া গায়ের রঙের উপরও রং নির্বাচন করা হয়ে থাকে। যাদের গায়ের রং কালো তারা সবসময় গাঢ় রং এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। ফর্সাদের ক্ষেত্রে অবশ্য সব রঙই মানানসই। তাদেরকে যেকোনো গাঢ় রঙেই বেশি মানাবে। এছাড়া রাতের কোনো উত্সবে যেতে হলে অবশ্যই গাঢ় রং এবং দিনের বেলা হালকা রং আপনার ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক হবে। আপনাকে অবশ্যই হাল-ফ্যাশনের দিকে লক্ষ রেখে পোশাক নির্বাচন করতে হবে। তবে সেই সঙ্গে লক্ষ রাখতে হবে পোশাক যেন আপনাকে সমালোচিত না করতে পারে। আমাদের দেশে সচরাচর যে সকল বর্ণের রং ব্যবহার করতে লক্ষ করা যায় গরমের সময় তার কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটে। এই ব্যতিক্রম মূলত অস্বস্তিকর আবহাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার জন্য। আমরা গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন সময় ও অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক পরিধান করি। সেসব পোশাকের রং বিভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। তবে এ সময় কখনও কখনও ক্ষেত্রবিশেষে পোশাকের রং নির্বাচন করি। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই পোশাকের রং হিসেবে প্রথম পছন্দ আরামদায়ক রং। আসুন জেনে নিই কোন অবস্থায় কেমন রং আপনার জন্য উপযোগী হতে পারে।
পার্টির পোশাক তুলনামূলক গর্জিয়াস হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে পোশাকের রং উজ্জ্বল বর্ণের হলেই ভালো। তবে গরমের সময় রাতের বেলায় আবহাওয়া কিছুটা শীতল থাকে। সে সময় পোশাকের রং হাল্কা উজ্জ্বল হলে ততটা সমস্যাদায়ক হয়ে ওঠে না। ফ্যামিলি পার্টিতে গাঢ় বর্ণের পোশাক পরিধান স্বস্তিদায়ক এবং বেশ আকর্ষণীয় হয়। হাল্কা মেরুন, গাঢ় স্কাই, মেজেন্ডা, সিলভার, বলটপ গ্রিন, গাঢ় গোলাপি, মাটি বর্ণের রং এ ধরনের পার্টির পোশাকে ব্যবহার করা যেতে পারে; যা পরিধানে আকর্ষণীয় করে তুলবে এবং মানানসই হবে।
বেড়াতে গেলে সাধারণত বেশ কয়েকদিন সেখানে অবস্থান করতে হয়। দীর্ঘভ্রমণ ও ভিন্ন আবহাওয়া তখন বেশ ক্লান্ত করে তোলে। তাই এ ক্ষেত্রে আরামদায়ক রঙের পোশাক পরিধান বেশ কার্যকর। যার ফলে স্বতস্ফূর্তভাবে বেড়ানো সম্ভব হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া বেশ গরম থাকায় মানানসই ও হাল্কা বর্ণের পোশাক পরিধান বেশ প্রাণবন্ত করে তুলবে আপনাকে।
সকাল ১০ থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত অফিসে তুমুল কর্মব্যস্ত থাকতে হয়। আর গরমে মানুষ এই কর্মব্যস্ততার মধ্যে হাঁপিয়ে ওঠে। এ সময়টুকু যদি আরামদায়ক রঙের পোশাক পরিধান করা না হয়, তাহলে গরম আবহাওয়া প্রচণ্ডভাবে দেহ ও মনকে বিধ্বস্ত করে তুলবে। আবহাওয়ার প্রতি লক্ষ রেখে অফিসের পোশাকের রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাদা, পেস্ট, অ্যাশ, লাইট স্কাই, ঘিয়ে, মিষ্টি গোলাপি ইত্যাদি রং প্রাধান্য দিতে হবে। বিশেষ করে হাল্কা বর্ণের পোশাক পরিধানে সারাদিনের কর্মব্যস্ততার ক্লান্তিতে কিছুটা হলেও প্রশান্তি এনে দেয়। অফিশিয়াল পোশাকের ক্ষেত্রে ফুল স্লিভ শার্ট, থ্রি-পিস ইত্যাদি ব্যবহার করতে হয়। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের হাল্কা বর্ণের পোশাক বেশ মানানসই করে তোলে।
সাধারণত ক্যাম্পাসের পোশাক হিসেবে অধিকাংশ ছাত্ররা শার্ট, প্যান্ট ও টি-শার্ট এবং ছাত্রীরা থ্রি-পিস পরিধান করে থাকে। দীর্ঘক্ষণ ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে হয় তাদের। সাধারণত অধিকাংশ ক্যাম্পাসের ক্লাস হয় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। গ্রীষ্মকালে এ সময় প্রচণ্ড তাপদাহ থাকে। তাই গরম আবহাওয়া সবাইকে অতিষ্ঠ করে তোলে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে পোশাকের রং নির্বাচন অতি জরুরি। হাল্কা বর্ণের পোশাক পরিধানে এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে স্বস্তি পাওয়া যায়। হাল্কা সবুজ, সাদা, অ্যাশ, হলুদ, গোলাপি, ঘিয়ে, কলাপাতা বর্ণের পোশাক পরিধান করলে গরম আবহাওয়ায় বেশ প্রফুল্ল মনে ক্যাম্পাসে অবস্থান করা যায়। হাল্কা বর্ণের পোশাকের তাপ শোষণ ক্ষমতা কম থাকায় গরম আবহাওয়ায় দেহকে বেশ শীতল রাখে। তাই হাল্কা বর্ণের পোশাক গ্রীষ্মকালে পরা তাই বেশ আরামদায়ক।
তরুণ প্রজন্ম মানেই আড্ডাপ্রিয়। এ সময় বিভিন্ন সাম্প্রতিক ও শিক্ষণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে তারা। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে বিকেল বা সন্ধ্যায় আড্ডায় মেতে ওঠে। এ সময় আবহাওয়ায় কিছুটা ঠাণ্ডা পরিলক্ষিত হয়। আবহাওয়ায় গরম না থাকায় পোশাক পরিধানে তেমন সমস্যা হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তরুণদের আড্ডার সময় হাফ স্লিভ টি-শার্ট পরিধান করতে লক্ষ করা যায়। এ সকল টি-শার্টের রং হয় সাধারণত হোয়াইট, পেস্ট, পেক্টোল, ক্রিম, বিস্কিট, সিলভার, ফিরোজা, হলুদ, হাল্কা সবুজ। বিকেল ও সন্ধ্যায় আড্ডার সময় এ সকল রঙের হাফ স্লিভ টি-শার্ট পরিধানে নিজেকে বেশ প্রাণবন্ত ও উত্ফুল্ল ভাবে উপস্থাপন করা যায়। যা আড্ডাকেও বেশ আনন্দঘন করে তোলে।
গাঁয়ের রঙয়ের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে বিভাজন:
এই বিজ্ঞানের সবচেয়ে ভয়ানক আবিষ্কার হচ্ছে রেইস থিওরি-যা মানুষের গাঁয়ের রঙয়ের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে বিভাজন করে, তৈরি করে civilization hierarchy (সভ্যতার উঁচু-নিচু’র সোপান)। এই থিওরিকে এখন বিজ্ঞানীরা অচল বলছেন।এখন অচল বললেও এই থিওরি মানবজাতির যে ক্ষতি করেছে সেটা থেকে বের হওয়া সহজ নয়।পশ্চিমে রেসিজম এখনো বেশ প্রবল।
এই থিওরি আমাদের দেশে উত্থাপন করে ব্রিটিশ ওরিয়েন্টালিষ্ট লেখকেরা।ওরিয়েন্টালিষ্টদের থিওরির কিছু অংশ বাঙালী ব্রাহ্মণরা নিল, কিছু অংশ বাদ দিল।এভাবে তাঁদের উদ্দেশ্য অর্জিত হয় এমন উপায়ে ভূগোল বই লেখা হয়েছিল।১৮৪০ সালে প্রথম ভূগোল বই লেখা হয় বাংলায়।সেখানে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের মানুষে-মানুষে বিভাজন করা হয় তাঁদের শরীরের গঠন, আকৃতি ও রং এর ভিত্তিতে। ব্রাহ্মণরা নিজেদের দাবী করল আর্য-ককেশিয়ান বলে।দাবী করা হয় আর্যরা সেরা জাতি।শাসন করার হক তাদেরই।
প্রফেসর শুভ বসু এই লেখায় দেখিয়েছেন কীভাবে বাঙালী ব্রাহ্মণ সাহিত্যিকেরা ‘বিজ্ঞান’ বই লেখার নামে, ইউরোপিয়ান বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ধর্মীয় কাহিনীর পুরানিক তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শুভ বসু লিখেন; ”High caste Hindu Bengali elites established their hegemony over the colonial education system, using education to mark their superior social status. This ‘hierarchy’ signified their class privileges and was transferred across generations.” অর্থাৎ, উচ্চ বর্ণের অভিজাত হিন্দুরা উপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর আধিপত্য কায়েম করে।শিক্ষাকেই তাঁদের সামাজিক উচ্চ পদ মর্যাদার বাহন বানায়।এই পদ মর্যাদা তাঁদের শ্রেণী সুবিধা নির্ণয়ের বাহন এবং তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলছে। For Bengali Hindus, as for anyone else in the world, the ideology of race was filtered through concerns about self-identity and claims of genealogical proximity to a ‘ruling race.’
বাঙালী হিন্দুদের কাছে রেইস থিওরি দুনিয়ার অন্যান্য জাত আদর্শের মতই ছিল নিজের আত্ম-পরিচয় এবং বংশানুক্রমিক ‘ক্ষমতাসীন জাত’ বজায় রাখার উদ্বেগ।সবচেয়ে ভয়ানক যেই কর্মটা এই ব্রাহ্মণ সাহিত্যিকেরা বিজ্ঞানের নামে করেছে, তা তৎকালীন আদমশুমারি কমিশনার রাইসলি’র রেফারেন্সে শুভ বসু উল্লেখ করেছেন;
”Census commissioner Risley’s conviction that, while Euro-Aryans progressed from tribe to nation, Indians moved from tribe to caste and remained in an arrested state of development.” অর্থাৎ, যেখানে আর্য-ইউরোপিয়ানরা গোত্র প্রথা থেকে জাতিতে অগ্রগতি করেছে, সেখানে ভারতীদের অগ্রগতি গোত্র থেকে বর্ণপ্রথায় আঁটকে গেছে!
ইউরোপিয়ানরা রেইস থিওরি তৈরি করে দুনিয়া শাসন করেছে, এখনো করছে।আর ভারতীয়রা বিশেষ করে বাঙালী ব্রাহ্মণ হিন্দুরা কেবল দেখেছে নিজেদের সামাজিক অবস্থার নিরাপত্তা।কীভাবে তাঁদের আভিজাত্য রক্ষা হবে।আর এসব করা হয়েছে বিজ্ঞান শিক্ষার নামে।