মুসলিমদের জন্য আশুরা দিনটি যে কারনে এতো গুরুত্বপূর্ণ

ইসলামি বর্ষপঞ্জিতে যে চারটি মাস মুসলিমদের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে মহররম অন্যতম। ১০ই মহররম দিনটিকে ‘বিশেষ মর্যাদার’ দৃষ্টিতে দেখে মুসলিমরা।ইসলামের ভেতর দুটি মত – সুন্নি এবং শিয়া – উভয়ের কাছেই আশুরার দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে আশুরা পালনে করোনার ছাপ পরেছে পুরোমাত্রার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্ত আকারে তাজিয়া মিছিল হয় ইরাক, ইরান, পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশে। 

বছর ঘুরে আবারো ফিরে এসেছে হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মুহাররমুল হারাম বা পবিত্র মহররম মাস। মহররম শব্দের অর্থ পবিত্র বা মর্যাদাপূর্ণ। হাদিসে মহররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা আল্লাহর মাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত চারটি মর্যাদাপূর্ণ মাসের মধ্যে মুহাররম অন্যতম।

ইসলামি চিন্তাবিদরা বলছেন নবী মোহাম্মদের সময় থেকে মুসলিমরা ১০ই মহররম পালন করতো। এর পেছনে নানা ধর্মীয় বিশ্বাস নিহিত ছিল। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, এই দিনটিতে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে এবং এই দিনেই পৃথিবী ধ্বংস হবে, যেটি মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী কেয়ামতের দিন।

এছাড়া ইসলামের দৃষ্টিতে যারা নবী এবং রসুল বলে পরিচিত তাদের জীবনে এই দিনটিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটছে বলে বিশ্বাস করেন মুসলিমরা।আরবি বর্ষের প্রথম মাস, অর্থাৎ মহরম মাসের ১০ তারিখ মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটি আশুরা হিসেবে পরিচিত।

ইসলামি বর্ষপঞ্জিতে যে চারটি মাস মুসলিমদের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে মহররম অন্যতম। ১০ই মহররম দিনটিকে ‘বিশেষ মর্যাদার’ দৃষ্টিতে দেখে মুসলিমরা। ইসলামের ভেতর দুটি মত – সুন্নি এবং শিয়া – উভয়ের কাছেই আশুরার দিনটি গুরুত্বপূর্ণ।

ইসলামি চিন্তাবিদরা বলছেন নবী মোহাম্মদের সময় থেকে মুসলিমরা ১০ই মহররম পালন করতো। এর পেছনে নানা ধর্মীয় বিশ্বাস নিহিত ছিল।মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, এই দিনটিতে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে এবং এই দিনেই পৃথিবী ধ্বংস হবে, যেটি মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী কেয়ামতের দিন।

এছাড়া ইসলামের দৃষ্টিতে যারা নবী এবং রসুল বলে পরিচিত তাদের জীবনে এই দিনটিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটছে বলে বিশ্বাস করেন মুসলিমরা।মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, এই দিনটিতে ইসলামের নবী মোহাম্মদের পরিবারের যেসব সদস্য মারা গেছেন তাদের জন্য দোয়া পাঠ করা গুরুত্বপূর্ণ।

এ কারণে সুন্নি এবং শিয়া মতাবলম্বীদের অনেকেই বাড়তি নামাজ আদায় করেন।তবে সুন্নি মুসলিমদের চেয়ে শিয়া মুসলিমরা আশুরার দিনটিকে যেভাবে পালন করেন সেটি বেশ চোখে পড়ার মতো।

বিভিন্ন জায়গায় তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিয়া মতাবলম্বীরা তাদের নিজেরে শরীরে ছুরি মেরে কষ্ট অনুভব করেন। তাদের বিশ্বাস নবী মোহাম্মদের দৌহিত্র হোসাইনকে হত্যার সময় যে তিনি যে কষ্ট পেয়েছিলেন, তারাও নিজেদের পিঠে ছুরি মেরে সে কষ্ট অনুভবের চেষ্টা করেন।

তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। বাংলাদেশে যেসব তাজিয়া মিছিল বের হয় সেখানে প্রচুর সুন্নি মতাবলম্বীরাও অংশ নেয়।বাংলাদেশের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে ১০ই মহররমকে সরকারিভাবে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়।এদিন সরকারি ছুটিও থাকে সবসময়।

আশুরার-দিন-বাংলাদেশে-শিয়া-মতাবলম্বীদের-বিশেষ-প্রার্থনা

এদিকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরেও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে পবিত্র আশুরা পালিত হয়। গণজমায়েত নিষিদ্ধ করেছে সরকার। বাড়ানো হয়েছে টহল পুলিশের সংখ্যা। এরই মধ্যে স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষোভও করেন অনেকে।

আশুরার-দিন-বাংলাদেশে-অনেকে-বিশেষ-প্রার্থনা-করেন।

 ইরানেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং মাস্ক পড়ে মিছিলে অংশ নিতে বলা হয়। তেহরানে তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা জানান স্বাস্থ্যবিধি মানা সবার জন্যই মঙ্গলজনক হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সবদিক খেয়াল রাখছে, কে মাস্ক পড়েনি কে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না সবই নজরে রাখা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ কোনো আয়োজন করা হয়নি।

পাকিস্তানেও পবিত্র এ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করছেন শিয়া সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ। ইসলামাবাদের রাস্তায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শোকের মিছিলে যোগ দেন তারা।

আশুরার দিনে রোজার গুরুত্ব : মহররম মাসের ১০ম দিবসকে ‘আশুরা’ বলা হয়। ‘আশুরা’ অর্থ দশম। এটি যেকোন মাসের দশম দিবস হতে পারে, তবে ইসলামি পরিভাষায় মহররম মাসের দশম দিবসটি ‘আশুরা’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আশুরার কিছু ফজিলতের কথা হাদিসে আছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘রমযানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোযা হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা ।’ (মুসলিম, হাদিস : ১/৩৬৮; তিরমিজি, হাদিস : ১/১৪৭)

এক বছরের পাপ মোচন : আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ তাআলা আগের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার  রোজা দ্বারা আল্লাহ অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১/৩৬৭; তিরমিজি, হাদিস : ১/ ১৫৮)

আগে বা পরে আরেকটি রোজা রাখা : আশুরার দিন রোজার রাখা পাশাপাশি আগের দিন বা পরের দিন রোজা কর্তব্য। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো এবং ইহুদীদের সাদৃশ্য ত্যাগ করে আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোজা রাখো।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১/ ২৪১)

রাসুল (সা.)-এর হাদিসের ওপর আমল করে কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে নফল রোজার বিষয়ে যত্নবান হন তাহলে তা অনেক সৌভাগ্যের বিষয়। আর ‘আশহুরে হুরুম’ বা সম্মানিত চার মাসের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে কেউ এ মাসে গুনাহ থেকে বাঁচতে বিশেষভাবে চেষ্টা করে এবং নেক আমলে বেশী যত্নবান হয়, তা তাঁর জন্য প্রভূত কল্যাণ বয়ে আনবে।

সুন্নাহপরিপন্থী কাজ পরিহার : কিন্তু সহজ আমলের পরিবর্তে একশ্রেণির মানুষ আনুষ্ঠানিকতা নির্ভর বিভিন্ন কাজের প্রতি বেশি আগ্রহী। যার অনেক কিছু অর্থহীন আনুষ্ঠানিকতাই শুধু নয়, নানা নিষিদ্ধ ও গর্হিত কাজও বটে। যেমন- তাজিয়া, শোকগাঁথার আবশ্যকীয় পাঠ, শোকপালন, মিছিল ও র‌্যালি বের করা, শোক প্রকাশার্থে শরীর রক্তাক্ত করা ইত্যাদি।

সামাজিক কুসংস্কার পরিহার : মহররম মাস নিয়ে সমাজে অনেক কুসংস্কারও বিদ্যামন।মহররম মাসে বিয়ে-শাদি থেকে বিরত থাকা ও এ মাসকে অশুভ মনে করার প্রবণতাও অনেকের মধ্যে দেখা যায়। এটা ঠিক যে, এ মাসে প্রিয়নবী (সা.)-এর দৌহিত্র ও সাহাবি হুসাইন (রা.) মর্মান্তিকভাবে শাহাদাত বরণ করেছেন। একজন মুসলিমের জন্য এ শোক সহজ নয়, কিন্তু একে কেন্দ্র করে শোক পালন করা, মাতম করা স্বয়ং নবী (সা.)-এর বর্ণিত শিক্ষার বিপরীত।

শোক প্রকাশে মহানবীর কথা : নিজ সন্তান মারা গেলে রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই চোখ অশ্রু সিক্ত, হৃদয় ব্যথিত, তবে আমরা মুখে এমন কিছু উচ্চারণ করি না, যা আমাদের রবের কাছে অপছন্দনীয়’।

মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই, যারা মুখ চাপড়ায়, কাপড় ছিঁড়ে আর জাহেলি যুগের কথা বলে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৯৮)

ভিত্তিহীন কথা পরিহার করা : আশুরার দিন আরেকটি বর্জনীয় বিষয় এই যে, এ মাসের বিশেষত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে অনেক অমূলক কথা বর্ণনা করা হয়। অথচ ইতিহাসে এর কোনো ভিত্তি নেই। কেউ কেউ তা হাদিস হিসেবেও এসব ভিত্তিহীন কথা বর্ণনা করেন। বলাবাহুল্য, শরীয়তের দৃষ্টিতে এটাও মারাত্মক গুনাহ ও বর্জনীয় কাজ। না জেনে কোনো কথা বলা, আসর জমানোর জন্য ভিত্তিহীন কাহিনী বর্ণনা করা, ভিত্তিহীন চিন্তা-বিশ্বাস পোষণ করা এবং অপ্রয়োজনীয় ও গর্হিত আনুষ্ঠানিকতায় ব্যস্ত হওয়া অনেক সময় ইসলামী শরিআতের পরিপন্থী হিসেবে সাব্যস্ত। বিখ্যাত সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, ‘হে লোকেরা! যার কোনো বিষয় ভালভাবে জানা আছে সে যেন তা বলে আর যে জানে না সে বলবে, ‘আল্লাহই ভাল জানেন’। কারণ যা জানা নেই সে সম্পর্কে এ কথা বলা যে, আল্লাহ ভাল জানেন, এটা ইলমেরই অংশ। (তাফসিরে ইবনে কাসির, ৪/৪৪)

হাদিসে বর্ণিত মহররমে সংঘটিত দুটি ঘটনা : হাদিসের বর্ণনা মতে মহররমে মাসে দুটি ঘটনা সংঘটিত হয়। এক. এই দিনে আল্লাহর নবী মুসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গীরা তৎকালীন জালেম শাসক ফেরাউন ও তার সৈন্যদের থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে সমুদ্রের মধ্যভাগে রাস্তা তৈরি করে অপর পাড়ে নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছেন। দুই. এই পথ দিয়ে অতিক্রমকালে আল্লাহ তাআলা ফেরাউন ও তার সৈন্যদেরকে সমুদ্রে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছেন। এই দুটি ঘটনা বিভিন্ন সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

অনর্থক কাজ পরিহার ইসলামের সৌন্দর্য : মুসলিমদের জীবন-যাত্রায় দ্বীন পালনে বাধাগ্রস্ত করে এমন অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় কাজ পরিহার করা উচিত। যেকোনো কাজের লৌকিকতা এবং আনুষ্ঠানিকতাও নিন্দনীয়। ইসলামি শরিআত পরিপন্থী কাজকর্ম থেকে বিরত থাকা চাই। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষের ইসলামের সৌন্দর্যের একটি দিক, অপ্রোয়জনীয় কাজ ত্যাগ করা।’ (বেখারি ও মুসলিম)